প্রথম দিনে সরকার নির্দেশিত গাইডলাইন মেনে হয়েছে ক্লাস। তবে বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপস্থিতির ক্ষেত্রে, বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর উপর কেন্দ্র করে নির্দেশ করা হয়েছিল। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার জেরে, অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে ছেলেমেয়েকে পাঠিয়েছিলেন বিদ্যালয়ে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর আসানসোল এবং দুর্গাপুরের সরকারি, বেসরকারি স্কুলগুলিতে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দুর্গাপুরের অন্যতম একটি সরকারি স্কুলে, প্রথম দিনে উপস্থিত হয়েছিল ৫০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কলিমুল হক বলেছেন, বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো বিচার করে কত শতাংশ পড়ুয়ারা হাজিরা দেবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছিল। কারণ দূরত্ব বিধি মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য, ক্লাস রুমের সংখ্যা বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি উচ্চ শ্রেণীতে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের বেশি প্রয়োজন। সেই হিসাব অনুযায়ী ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে আসতে বলা হয়েছিল। অল্টারনেট ডে করে বিভিন্ন পড়ুয়াদের বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে।
advertisement
জেলার প্রতিটি বিদ্যালয় শুরু করার আগে, অভিভাবকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিদ্যালয়গুলির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অভিভাবক ও পড়ুয়াদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সময় বিদ্যালয়ে কি কি নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন করোনার সঙ্গে লড়াই করার ফলে, পড়ুয়ারাও বুঝে গিয়েছে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেই মত প্রথম দিন ক্লাস হয়েছে। করোনাকলের পরে প্রথমদিন বিদ্যালয় পঠন-পাঠন, পড়ুয়াদের উপস্থিতি, শিক্ষকদের পড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সব মিলিয়ে রিপোর্ট সন্তোষজনক বলাই যায়।
যদিও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বিদ্যালয়ে হাজিরার সময়সূচিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। নবম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সাড়ে ন'টার মধ্যে বিদ্যালয় ঢুকতে বলা হয়েছে। ছুটির সময় নির্ধারিত করা হয়েছে বিকেল সাড়ে তিনটে। অন্যদিকে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে সকাল সাড়ে দশটায়। ছুটি হবে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, কোভিড কালে প্রচুর পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে। বহুজন পারিবারিক কারণে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সেই সংখ্যা এখনও নির্ধারিত করে বলতে পারছেন না বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার। তারা বলছেন, আগামী তিন-চার দিন তারা সরকার নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস করাবেন। তারপরে তারা দেখবেন কতজন ছাত্র ছাত্রী বিদ্যালয় উপস্থিত হচ্ছে না। তারপরে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলি জানা যাবে। তা ছাড়া প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানেও সবাইকে বিদ্যালয় আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। তবে চলতি সপ্তাহ ক্লাস করানোর পরে, স্কুলছুটের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে কিছুটা অনুমান করতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তারপর সেই মতো পরিকল্পনা করে, পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সিলেবাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হাতে কম সময় রয়েছে। সেজন্য দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষক ডঃ করিমুল হক বলেছেন, দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হবে। তারা নিশ্চিত ভাবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে সিলেবাস শেষ করে দেবেন। প্রয়োজনে রবিবারে বিশেষ ক্লাস করানো হতে পারে। কিন্তু সবেমাত্র বিদ্যালয় শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন আলোচনার পরে, সব পরিকল্পনা করা হবে।
তবে প্রাথমিকভাবে দীর্ঘদিন পরে স্কুল শুরু হওয়ায়, শিক্ষক শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী সকলেই খুশি। বিদ্যালয়গুলিতে করোনা বিধি মেনে চলার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকটা নিশ্চিন্ত অভিভাবকরাও। বিদ্যালয় চত্বরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে পঠন-পাঠন। ফলে বিদ্যালয়গুলিতে ফিরেছে চেনা ছবি। অন্যান্য শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় আসার অনুমতি খুব শীঘ্র দেওয়া হবে বলে আশা করছেন শিক্ষকরা।
নয়ন ঘোষ






