রেললাইনের ধারেই খেলছিল ছোট্ট দীপ। খেলার ফাঁকে চোখ পড়ে রেল লাইনে। ছোট্ট মাথায় বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি রেললাইনে কোনও সমস্যা রয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র দীপ, মা-বাবার মুখে গল্প শুনেছে লাইনে ফাটল থাকলে নাকি ট্রেন উল্টে যেতে পারে। সময় নষ্ট না করেই, রেল লাইনে ফাটল দেখে বছর সাতেকের শিশু খবর দেয় তার মাকে। মা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে জড়ো করেন এলাকার লোকজনেদের। ততক্ষণে শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল লোকাল ট্রেন আসার। কোনও অঘটন ঘটতে দেওয়া যাবে না সংকল্প করেই, জীবন বাজি রেখে রেললাইনের উপর বাড়ি থেকে আনা লাল কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন মা সোনালী নস্কর সহ এলাকার কিছু মহিলারা। সেই সময় ক্যানিং থেকে শিয়ালদহগামী স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন আসছিল। দূর থেকে লাল কাপড় নজরে আসতেই ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ট্রেন থামাতে সক্ষম হন চালক। রেলকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে দেখেন সত্যিই ফাটল রয়েছে রেললাইনে। বিদ্যাধরপুর স্টেশনের পক্ষ থেকে খবর যায় রেলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। খবর পেয়ে রেলের ইঞ্জিনিয়াররা ফাটল মেরামতির কাজ শুরু করার ৪৫ মিনিট পর থেকেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
advertisement
ছোট দীপের উপস্থিত বুদ্ধির জেরেই আজ এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হল বলে স্বীকার করেছেন রেল আধিকারিকরা। রেল আধিকারিক সূত্রে খবর, রেলের তরফ থেকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হবে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র দীপ নস্করকে। শিয়ালদা ডিভিশনের ডিআরএম এসপি সিং জানিয়েছেন, 'লাইনটিতে আগের থেকে ওয়েলডিং ছিল। সেই ওয়েল্ডিং খুলে যাওয়াতে বড়োসড়ো বিপদের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ওই ছোট্ট শিশুটির চোখে তা ধরা পড়ায় আগেভাগে ব্যবস্থা নিয়ে বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে'।
দীপের বাবা দিনমজুরির কাজ করেন। মা এলাকায় বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। সীমিত আয়ে কোনভাবে চলে যায় তাঁদের সংসার। বড়োসড়ো রেল দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া ছোট্ট দীপকে দেখতে, তাঁদের ভাঙা ঘরের উঠোনে ভিড় প্রতিবেশী থেকে উৎসুক মানুষদের। এত ছোট বয়সে কিভাবে বুঝল ফাটল ধরা লাইনে ? এ প্রশ্ন মনে নিয়েই ছোট্ট হিরোকে একবার কাছ থেকে দেখতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বহু মানুষ। রেল দফতর তো বটেই অনেক মানবিক সংগঠনও এমন সাহসী শিশুকে সংবর্ধনা জানাতে তৈরি হচ্ছে। বড় হলে রেলে চাকরি দেওয়ার দাবিও জানানো হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে।






