পুলিশ সূত্রে খবর, শিলিগুড়ির সেভক রোডের 'ইউনিপ্যাথ ল্যাব' নামে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে কর্মরত ছিল ওই যুবক। পাশাপাশি ওই যুবক বাড়ি বাড়ি নমুনা সংগ্রহেরও কাজ করত৷ সেই সুবাদে শহরে তার পরিচিতির সংখ্যাও বেড়েছিল৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অর্থ তচ্ছরূপের অভিযোগে তাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার আগে অবশ্য ল্যাবরেটরির পুরোনো গ্রাহকদের ডেটা হাতিয়ে নিয়েছিল সে।
advertisement
এদিকে কাজ চলে যাওয়ার পর করোনার পরীক্ষার নামে তার কাছে ফোন আসলে নিজে থেকে বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করত। আর দু'দিন পরে রিপোর্ট দেওয়ার হলে সুবিধা মতো পুরোনো গ্রাহকদের রিপোর্ট কম্পিউটারে এডিট করে প্রিন্ট করে দিত। এভাবেই দিনের পর দিন চলছিল এই কারবার। কিন্তু এতকিছু করেও শেষরক্ষা হল না৷ শিলিগুড়ির এক ব্যক্তির সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় সে৷ রিপোর্ট দেয় পজিটিভ৷ সেইমতো ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করলে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে৷ পরে রিপোর্ট অন্য একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলে রিপোর্টটি জাল বলা হয়৷ এরপরই পুলিশের দ্বারস্থ হয় সেই রোগীর পরিবার। অভিযোগের ভিত্তিতে সেইমতো তদন্তে নামে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের পানিটাঙ্কি ফাঁড়ির পুলিশ৷
এরপরই ধৃত যে ডায়গনস্টিক সেন্টারে কাজ করত, সেখানে যোগাযোগ করে পুলিশ৷ গ্রেফতার করা হয় যুবককে৷ জেরার মুখে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ স্বীকারও করে সে৷ অন্যদিকে, তার ব্যাগ থেকে বেশ কিছু নমুনাও উদ্ধার করা হয়েছে৷ বুধবার সকালে ধৃতকে শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে৷
এই বিষয়ে শহরের বিশিষ্টজন তথা শিক্ষাবিদ অভায়া বসু বলেন, 'ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে আমরা। এমন একটি রোগের মুখোমুখি আমরা যেখানে একটি রিপোর্ট নির্ধারণ করে দেয় চিকিৎসার দিক। সেখানে কিছু অসাধু ব্যক্তি পরিষেবার নামে যে অসৎ চক্র শুরু করেছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। পজিটিভকে নেগেটিভ কিংবা সুস্থ মানুষকে পজেটিভ রিপোর্ট ধরিয়ে দিচ্ছে এরা। ফলে যেকোনও মুহূর্তে জীবন সংশয়ের মতো বড় কিছু বিপদ ঘটতে পারে।' অভয়াদেবী আরও বলেন, 'এদিনের ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে পরিস্থিতি কতটা অ্যালার্মিং। স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনকে সজাগ, সচেতনের পাশাপাশি আরও কঠোর হতে হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে তাঁরা যেন সঠিক পরীক্ষাগার থেকেই পরীক্ষা করান। পরীক্ষা করানোর আগে একটু যাচাই করে নেওয়াই শ্রেয়।'
তবে, এদিনের ঘটনা সরাসরি স্বাস্থ্য বিভাগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি, পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও যথেষ্ট চিন্তায় শহরবাসী।
ভাস্কর চক্রবর্তী