জনপ্রিয় সীমান্ত পানিট্যাঙ্কি, গোরক্ষপুর থেকে প্রতি দুই থেকে তিন লক্ষ পর্যটক নেপালে বেড়াতে যান। উল্লেখ্য, পুজোর সময় থেকে শীতকাল পর্যন্ত বাঙালি তথা ভারতীয় পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে কাঠমান্ডু পোখরার মত জায়গাগুলিতে। আর পুজোর ঠিক আগে নেপালের (Nepal) এহেন সিদ্ধান্তে ভারতীয় পর্যটকদের ভিড় যে জমবে তা নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি, মেঘালয়ও তার দরজা খুলে দিল পর্যটকদের জন্য। এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সমস্ত কলেজ খুলবে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়ারা যেতে পারে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য অন-ক্যাম্পাস ক্লাস শুরু করা হবে। তবে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে অনলাইনে ক্লাস হবে। গ্রাম্য এলাকার স্কুলগুলির ক্ষেত্রে নিয়মটি একটু পরিবর্তিত। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে না যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাঁধা ধরা নিয়ম আর থাকছে না। তাঁরা চাইলে স্কুল যেতে পারে। অন্যদিকে, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য অন-ক্যাম্পাস ক্লাস শুরু করা হবে।
advertisement
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী পর্যটনের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য মেঘালয় তার দরজা খুলে দিতে চলেছে(Meghalaya)। যেসমস্ত পর্যটক কোভিড দুটি ডোজ নিয়েছেন তাঁরা স্বচ্ছন্দে মেঘালয় বেড়াতে পারেন। তবে যাঁদের এখনও দুটি ডোজ নেওয়া হয়নি, তাঁরা প্রথম কোভিড টিকার সার্টিফিকেট এবং আরটিপিসিআর (RTPC-R) বা ট্রুনাট (TRUNAAT) -এর (অনধিক ৭২ ঘন্টা) নেগেটিভ রিপোর্ট (coronavirus)নিয়ে বেড়াতে পারেন। তবে মেঘালয়ের বাসিন্দাদের করোনার প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া থাকলেই রাজ্যের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে মিলবে প্রবেশ। যা পুজোর আগে মেঘালয় রাজ্যবাসীর ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও খুশির খবর।
এ প্রসঙ্গে হিমালায়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কে সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, 'নিঃসন্দেহে এটা পর্যটনের জন্য সুখবর। তবে আকাশপথে পর্যটকদের জন্য দরজা খুললেও স্থলপথে সীমান্ত এখনও বন্ধ রয়েছে। যাতে বহু পর্যটক আশাহত। অনেকেই পুজোর সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। করোনা এসে সেই জায়গায় থাবা বসালেও ধীরে ধীরে আমরা সাধারণ জীবনে ফিরছি। তারই উল্লেখযোগ্য উদাহরণ মেঘালয় রাজ্য ও নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্ত। আশা করছি এবার পুজোতে ভালো বুকিং হবে। সেইসঙ্গে নেপাল সড়কপথে পর্যটকদের জন্য সিংহদ্বার খোলার বিষয়েও খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশাবাদী আমরা।'
কালিম্পংয়ের জেলা প্রশাসন সমর্থিত 'অ্যাক্ট' অর্থাৎ অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজার্ভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (সংরক্ষণ ও পর্যটন সংস্থা)-এর আহ্বায়ক তথা পর্যটন বিশেষজ্ঞ রাজ বসু বলেন, 'শুধুমাত্র আকাশপথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। সড়কপথে পর্যটকদের প্রবেশে এখনও বাধা নেপালে। ফলে খুব একটা ইতিবাচক সংকেত নয় নেপাল (Nepal) সরকারের এই সিদ্ধান্ত। বলে রাখি, উত্তরবঙ্গ থেকে সরাসরি কোনও বিমান ব্যবস্থা না থাকায় নেপাল দরজা খোলাতে কলকাতা ও দিল্লির পর্যটকেদের ছাড়া আমাদের কোনও সুবিধা হবে বলে মনে হয় না এতে। কারণ, উত্তরবঙ্গের সিংহভাগ পর্যটক সড়কপথে নেপাল ভ্রমণ পছন্দ করেন। নেপাল-ভারত দুটো দেশই বুঝতে পারছে না যে যাদের স্থলভাগ সীমানায় ঘেরা তাদের আমদানি ও রপ্তানিতে উন্নতির জন্য দুটি দেশের সম্পর্কের থেকে দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠা বেশি জরুরী।'
রাজবাবু আরও বলেন, 'করোনা (coronavirus) পরিস্থিতে সামাল দিতে প্রত্যেকটি দেশ ও রাজ্য চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে নিজস্ব নীতি প্রয়োগ করছে। সবকিছু সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। পুজোর আগে মেঘালয়ের দরজা খোলায় পর্যটনের ক্ষেত্রে এখনই কোনও আশার আলো দেখছি না। মেঘালয় বর্তমানে একটি রাজ্য পরিণত হয়েছে। এখন সেখানকার স্থানীয়রা পর্যটকদের কতটা এখানে আসতে আগ্রহী করে তুলতে পারে তার উপরই সম্পূর্নটা নির্ভর করছে। সবটাই এখন ভবিষ্যত-সম্ভাবী। ফলে পর্যটকরা উচ্ছ্বসিত হলেও আমরা পর্যটকদের বেড়াতে এসে যাতে কোনও হয়রানির শিকার হতে না হয় সেই দিকগুলি নিয়ে বিবেচনা করছি। আশা করছি ভালো কিছু অপেক্ষা করছে পর্যটক তথা পর্যটনের সঙ্গে জড়িত বৃহদাংশের জন্যে।'
ভাস্কর চক্রবর্তী