স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাজ ও আমাদের দেশের স্বাধীনতার পেছনে তাঁদের ভূমিকাকে ফুটিয়ে তুলতে এক অভিনব পন্থায় শ্রদ্ধা জানাল শিলিগুড়ির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিঠু রায়। ঘোঘোমালি এলাকার বাসিন্দা শিল্পী মিঠু রায়। জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্তরের পুরস্কারে তাঁর ঝুলি ইতিমধ্যেই ভারি হয়ে পড়েছে। এবছর ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে তার কীর্তি- ৭৫ টি পেরেকের মাথায় ভারতের ৭৫ জন মনীষীর ছবি এঁকে সেগুলো দিয়ে ভারতের মানচিত্র তৈরি করা। এই অসামান্য কাজের জন্য তিনি 'ইন্ডিয়া স্টার ইন্ডিপেন্ডেন্ট আওয়ার্ড ২০২১'-এ ভূষিত হন।
advertisement
শুধু এটাই নয়, বিভিন্ন আঁকার কাজ করে চলেছেন তিনি। অঙ্কনশিল্পের সঙ্গে বহু বছর ধরে জড়িত তিনি। তাঁর এই কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছে শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেব। তাঁর এই অসামান্য প্রতিভার জন্য শহরবাসীরও বাহবা পেয়েছেন মিঠু। এবিষয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর অর্ধাঙ্গিনী তাঁর পাশে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী সীমা সাহা রায় স্বামীর এই অসামান্য কাজে গর্বিত।
শিলিগুড়ি ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোঘোমালি এলাকার আম্বেদকর নগরের বাসিন্দা মিঠু রায়। পেশায় একজন অঙ্কন শিল্পী। ছবি আঁকা যেন ছোটবেলা থেকে নেশা মিঠুর। চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু মিঠুর আঁকা শেখা। শিলিগুড়ি রথখোলা ওয়েলফেয়ারে গিয়ে আঁকা শেখার পথ শুরু। এরপর নবীন দাসের কাছে শেখার মধ্য দিয়ে একের পর এক সাফল্যে ঝুলি ভরতে শুরু করে মিঠুর।
৭৫টি পেরেক দিয়ে ভারতের মানচিত্র এঁকে ক্ষান্ত হয়নি মিঠু। সেই পেরেক দিয়ে তৈরি মানচিত্রে প্রত্যেকটি পেরেকের মাথায় বিপ্লবীদের ছবিও এঁকে ফেলেন শিলিগুড়ির এই যুবক। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসকেই পাখির চোখ করে দিনরাত এক করে দেন মিঠু। ৭৫টি পেরেকের মাথায় নেতাজি থেকে শুরু করে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মহাত্মা গান্ধী থেকে বিবেকানন্দ এমনকি বিনয়-বাদল-দীনেশ তথা ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ; বাদ যাননি কেউই। লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ও ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও মিঠু নথিভুক্ত করেছে তাঁর শিল্পকর্ম। এক ঝুড়ি সাফল্যের মধ্যেও ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া স্টার ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস ও ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স আওয়ার্ড এসে পৌঁছেছে মিঠুর কাছে। যা নিয়ে মিঠু যেমন খুশি তেমনই গর্বিত শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গবাসী।
এনিয়ে শিল্পী মিঠু রায় বলেন, 'আমি ভারতের নাগরিক হিসেবে গর্বিত। দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ৭৫টি পেরেকের মাথায় ৭৫জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি এঁকেছিলাম। তাঁদের জন্যই আজ আমরা স্বাধীন ভারতে বসবাস করছি। তাই তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দৈনন্দিন যে লোহার পেরেক আমরা ব্যবহার করি, তার মাথায় সংগ্রামীদের প্রতিকৃতি আঁকি। সেই পেরেকগুলি দিয়ে ভারতের মানচিত্র তৈরি করেছি।'
মিঠু একগাল হাসি নিয়ে বলেন, 'ইন্ডিয়া স্টার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সংস্থাকে আমার এই কাজ পাঠিয়েছিলাম। সেখানে স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ প্রতিযোগিতা ছিল। আমার কাজ পছন্দ করে তাঁরা আমায় অ্যাওয়ার্ড পাঠিয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য বহু জায়গায় আমি আমার কাজ পাঠিয়েছি। আশা করছি শিলিগুড়িকে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি দেওয়ার।'
স্বামীর কীর্তিতে স্বাভাবিকভাবেই খুশি স্ত্রী সীমা সাহা রায়। তিনি বলেন, 'এই দেশকে শুধুমাত্র আমরা না, সবাই ভালোবাসে। স্বাধীনতা দিবসে ওর এই কাজে আমি সত্যি গর্বিত। সবাই আমাদের পাশে থেকে এভাবে উৎসাহ দিলে আমরা আরও ভালো কাজ করতে পারব। আরও ভালো উপহার দিতে পারব এই শহরকে।' শিলিগুড়ির ছেলে মিঠুর এই প্রতিভাকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা শহরবাসী।
ভাস্কর চক্রবর্তী