#শিলিগুড়ি: করোনার দৌলতে ঘটছে অদ্ভুত সব কাণ্ড! করোনা ভ্যাকসিন নিতেই শরীরে নাকি পরিবর্তন! পয়সা, হাতা, খুন্তি, চামচ সমেত যেকোনও ধাতব বস্তু এমনকি মোবাইলও আটকে যাচ্ছে শরীরে। এবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা শিলিগুড়িবাসী। এদিকে 'ম্যাগনেট ম্যান'-এর কথা চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরজুড়ে।
তিনি হলেন নেপাল চক্রবর্তী। শিলিগুড়ির ফুলেশ্বরীর বাসিন্দা। এই প্রৌঢ়ের দাবি, গত সাত জুন করোনার ভ্যাকসিন নেন তিনি। প্রথম দিকে শরীরে কোনও সমস্যাও না হলেও সম্প্রতি তিনি খবরে দেখেন যে, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে মহারাষ্ট্রের এক প্রৌঢ়ের শরীরে চৌম্বকীয় শক্তি তৈরি হয়েছে। ওই প্রৌঢ়ের শরীরে বিভিন্ন ধাতব বস্তুকে আটকে যাচ্ছে। এমনকি, দাঁড়ানো অবস্থাতেও শরীরে দিব্যি আটকে রয়েছে পয়সা, হাতা, খুন্তি, চামচ।
advertisement
নেপালবাবু জানান, ওই খবরটি জানার পর নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতেই বিষয়টি সামনে আসে। শরীরে পয়সা রাখতেই তা আটকে যায়। এরপর একে একে আরও বিভিন্ন ধাতব বস্তু নিয়ে পরীক্ষা করেন। সে সবই তাঁর শরীরে আটকে যায় বলে দাবি করেন তিনি। গত দু’দিন ধরে এমনই চলতে থাকে।
অবশেষে রবিবার খবরটি প্রকাশ্যে আসে। বিষয়টি জানতে পেয়ে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে যান সকলে। এই ‘ম্যাগনেট ম্যান’কে দেখতে একে একে ভিড় জমাতে শুরু করে উৎসাহী মানুষ। নেপালবাবুর শরীরে অন্য কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পরে তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ দার্জিলিং জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি ডঃ গোপাল দে বলেন, 'প্রথমেই বুঝতে হবে ভ্যাকসিনের মেটেরিয়াল বা যে কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি তার সঙ্গে চৌম্বকীয় তত্ত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি যে দাবি উঠে আসছে, তার সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনে ভ্যাকসিনের একটি ভায়ালের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যেতেই পারে। তবেই সত্যি উঠে আসবে সকলের সামনে।'
তিনি আরও বলেন, 'চুম্বকীয় পদার্থ বলতে লোহা নিকেল কোবাল্ট। যা চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়। এখানে দেখা যাচ্ছে পয়সা, হাতা, খুন্তি আটকে যাচ্ছে। যা চৌম্বকীয় তত্ত্বের বিপরীত। কারণ, ইদানিংকালে কোনো পয়সাই লোহা দ্বারা তৈরি নয়। অর্থাৎ যে দাবি উঠে আসছে তা আদৌ সত্যি নয়।' তবে চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এক্ষেত্রে। নেপালবাবুর শরীরে অন্য কোনও রোগ রয়েছে কি না তা এখন বিচার্য বিষয়, বলে মন্তব্য করেন গোপালবাবু।
অপরদিকে, উত্তরবঙ্গ বিজ্ঞান কেন্দ্রের (শিলিগুড়ি) প্রোজেক্ট অর্ডিনেটর ঋতব্রত বিশ্বাস অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে বলেন, 'চৌম্বকীয় শক্তি সরবরাহকারী কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন সম্পর্কিত দাবি ভিত্তিহীন। ভ্যাকসিনগুলি মানবদেহে চৌম্বকীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না। কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কোনও ধাতবভিত্তিক উপাদান নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'বিশেষজ্ঞদের মতে লোকেরা তাদের শরীরে চৌম্বক বা ধাতব আইটেমগুলি আটকে রাখার কারণ পৃষ্ঠের তেল এবং পৃষ্ঠের সঙ্গে সম্পর্কিত টান।' পাশাপাশি তিনি বলেন, 'এসব কাণ্ডকলাপের পেছনে মূল উদ্দেশ্য নিজের ভিডিও ও নামের ব্যাপ্তি হওয়া। তাছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতে ২০-২৫ কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে এবং এরকম ত্রুটিযুক্ত দাবির পেছনে কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কোভিডের ভ্যাকসিনগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ।'
সম্প্রতি, মহারাষ্ট্রের নাসিকে এক প্রৌঢ়ের শরীরেও একইভাবে চৌম্বক শক্তি তৈরির দাবি করা হয়েছিল। করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এমনটা দেখা দিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন ওই ব্যাক্তি। যদিও আদতে সেই ঘটনা কতটা সত্যি তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন বৈজ্ঞানিকরা।