TRENDING:

৪০০-৫০০ টাকা দর! লাইন বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্যে হিমশিম শিলিগুড়িবাসী, ঠুঁটো জগন্নাথ প্রশাসন

Last Updated:

পাড়ায় পাড়ায় ভ্যাকসিনের লাইন! চিন্তা নেই, কিনতে পারবেন নিজের জায়গা

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: পুকুরচুরি! শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু লাইন চুরি? বললে বলবেন এ আবার কেমন কথা? আজ্ঞে হ্যাঁ, শিলিগুড়িতে সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য রাতভর লম্বা লাইন পড়ছিলই। এবার সেই লাইন চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেইসঙ্গে চুরি যাওয়া লাইন ৩০০ থেকে ৪০০ এমনকি ৫০০ টাকা পর্যন্ত দর কষাকষি হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ যেন করোনাকালে নয়া 'কর্মসংস্থান'। শ্রীনিবাস সেবাসদন থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সর্বত্রই অন্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রোজগার করছেন একদল যুবক। যাঁরা রাত জাগতে ইচ্ছুক নন কিন্তু টাকার একটু জোর রয়েছে, তাঁরা যথারীতি নিশ্চিন্ত হয়ে রাতটা বাড়িতেই কাটাচ্ছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই নয়া 'অসাধু' চক্রে জেরবার সাধারণ মানুষ। টিকা নিতে বহু দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের অস্বস্তি ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
advertisement

দালালচক্র সবেতেই ছন্দবদ্ধ, তা মেডিকেল হোক আর অন্য সরকারি দপ্তর। নতুন নয় এই দালালচক্র। 'ছোঁড়ো কড়ি তামাশা দেখ'-এর কাহিনীই যে চলে আসছে। দালালদের হাতে টাকা তুলে দিলে মিলছে সব পরিষেবা। আর এই দালালদের খপ্পরে পড়ছে বেকার যুবকরা। রাতজাগা থেকে লাইন দাওয়া এমনকি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া সবটাই রোজগারের নয়া পন্থা। আর তা নিয়েই বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন স্থানীয় থেকে সাধারণ মানুষেরা। সোমবার তখন ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট কী ৭টা বাজে। শ্রীনিবাস সেবাসদনে যা দৃশ্য চোখে পড়ল তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মত। ওইদিন দুপুর ১২ টা থেকে প্রায় ৫০০ জন মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে। যে টিকা দেওয়া হবে মঙ্গলবার অর্থাৎ এদিন সকাল ১১টা থেকে। অন্যদিকে, মহিলাদের লাইনে পুরুষদের ভিড় দেখে অনেক মহিলাই প্রতিবাদ করার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ৩০০-৪০০ টাকা এমনকি ৫০০ টাকায় লাইন বিক্রি করার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এরপরই ঝামেলা বচসায় সৃষ্টি হয়। যদিও সেই বচসায় বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পুলিশ এসে কিছু যুবককে হটিয়ে দিলেও পুলিশ চলে যেতে ফিরে আসে আগের ছবি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলা হলেও অন্যের হয়ে দাঁড়ানো যাবেনা তেমন নির্দেশিকা কিন্তু নেই তাছাড়া ওই যুবকরা রীতিমতো নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন দেওর বা দাদা বা ভাই হিসেবে। আর একটু খোঁজ নিতেই গোমর ফাঁস! ঝুলি থেকে বেরিয়ে আসে বিড়াল!

advertisement

সূত্রের খবর, এরা সকলেই লাইন রাখছেন টাকার বিনিময়ে। টাকার অংকটা ঠিক হচ্ছে ফোনে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে। আবার কখনও কখনও মুখোমুখি। শুধুমাত্র রাতের কয়েক ঘণ্টা লাইন রাখার জন্য জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এই অবৈধ লাইন রাখার চক্রে স্থানীয়দের মধ্যে আছে বলে অভিযোগ উঠছে। আবার কিছু স্থানীয়রা এহেন ভিড় ও অবৈধ দালালচক্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অনিতা সামন্ত দেশবন্ধুপাড়ার শ্রীনিবাস সেবাসদন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই থাকেন। এদিনের বিশৃঙ্খলা দেখে অনিতাদেবী বলেন, 'এই চিত্র আজ নতুন কিছু নয়। নিত্যদিন এই এলাকায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুপুর বেলা থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো হয়। সারা রাতভর চলে অপেক্ষা। তারপর দিন গিয়ে সকাল ৮টার সময় দেওয়া হয় টোকেন। তারপর বেলা ১০টা কি ১১টা থেকে শুরু হয় টিকাকরণ। আর এই টিকাকরণে দেওয়া হয় বড়জোর ১০০ জনকে দিন প্রতি। ফলে লাইনে দাঁড়ানোর ৪০০ থেকে ৫০০ জন তাদের রাতভরের অপেক্ষা সবটাই হয় বৃথা।'

advertisement

অনিতাদেবী আরও বলেন, 'এখানেই শেষ নয়! এর মাঝেও রয়েছে দালালচক্র। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দর ওঠে জনপ্রতি। ফলে আমার বাড়ি এই এলাকায় হওয়া সত্ত্বেও আমি টিকা থেকে বঞ্চিত। আমি কেন অনেকেই পাড়ার স্থানীয়রা টিকা থেকে বঞ্চিত।'

এদিন অনিতাদেবী আরও অভিযোগ করেন বলেন, 'প্রথমে পাড়ার মধ্যে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র হওয়ায় আমরা প্রত্যেকে খুশি হয়েছিলাম। ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম শিলিগুড়ি পৌরনিগমকে। কিন্তু এখন সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রই আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিলিগুড়ির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাইরে থেকেও মানুষ এখানে এসে ভ্যাকসিনের জন্য লাইন দিচ্ছে। আমরা কেউই জানি না এদের মধ্যে থেকে কেউ করোনায় আক্রান্ত কিনা? যদি তর্কের খাতিরে ধরেইনি কেউ একজন করোনা আক্রান্ত। তাহলে মাশুল তো আমাদের এই পাড়াকে গুনতে হবে। ভাবতে পারছেন কি ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে? অথচ সেই বিষয়ে নজরদারি করার মতো কেউ নেই।'

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

ঘোষপুকুর থেকে ভ্যাকসিন নিতে এসেছিলেন আরেক মহিলা। তিনি নাম অপ্রকাশের  শর্ত বলেন, 'আমরা যদি এখন ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা দিতে রাজি হই তাহলে ভ্যাকসিন যেন আমাদেরকে একেবারে গলার মালা করে দিয়ে দেবে। কিন্তু রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার যখন বলেছে বিনে পয়সায় সকলকে দেওয়া হবে, তখন সরকারিভাবে যে জায়গা থেকে বিনে পয়সায় দেওয়ার কথা সেখানকার দৃশ্য আপনাদের সকলের সামনে পরিষ্কার। আগের দিন দুপুরে লাইন দিলে পরের দিন সকালে টোকেন পাওয়া যাচ্ছে। লাইনস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার এমনকি ৫০০ টাকা দরে। ভোটের সময় দুইহাত জোর করে ভোট চায় নেতারা। এখন ভোট শেষ আমরা ভ্যাকসিন চাইছি অথচ আমাদের পরিণতি আজ দেখুন।'

advertisement

বাংলা খবর/ খবর/Local News/
৪০০-৫০০ টাকা দর! লাইন বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্যে হিমশিম শিলিগুড়িবাসী, ঠুঁটো জগন্নাথ প্রশাসন
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল