দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2021) বিভিন্ন জায়গায় রীতি নীতির ক্ষেত্রে যে অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায় তারমধ্যে বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের এই পাঁচড়ার পাথরকুচি গ্রামের কবিরাজ পরিবারের এই সাত দুর্গাপুজো আলাদা ঐতিহ্য বহন করে। আনুমানিক পাঁচ শতাধিক বছর আগে এই দুর্গাপুজোর শুরু হয়। ওই পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে গদাধর পন্ডিত (পন্ডিত উপাধি পাওয়া) নামে এক ভাই এই পুজো শুরু করেন।
advertisement
পরিতোষ কবিরাজ জানিয়েছেন, "গদাধর পণ্ডিতদের তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই বিয়ে করেছিলেন। অবিবাহিত ভাবেই জীবন কাটিয়েছেন গদাধর পন্ডিত। তিনি এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। এখন যে দুভাই বিয়ে করেছিলেন, তাদের সন্তানদের মধ্যে ভাগ হয়ে এই পুজো বেড়ে দাঁড়ায় দুটিতে। তারপর পরবর্তীকালে পুজোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিনে। এছাড়াও বংশের আরও মানুষেরাও এই দুর্গাপুজোর অংশীদারিত্ব পেয়ে আলাদা আলাদাভাবে পুজো শুরু করেন। এখন বর্তমানে এই দুর্গাপুজোর সংখ্যা সাত।"
বংশবৃদ্ধি এবং বংশ পরম্পরায় দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে যখন এই কবিরাজ পরিবারের দুর্গাপুজোর সংখ্যা সাত-এ এসে দাঁড়িয়েছে, তখন এই পুজোর পরিচিত হয়েছে সাত মায়ের পুজো নামে। \'সাত মা\'-এর দুর্গা মন্দিরগুলিও রয়েছে পাশাপাশি। চারটি দুর্গা কবিরাজদের এবং দৈহিত্য সূত্রে একটি দুর্গা মেহতরিদের ও দুটি দুর্গা মণ্ডলদের। কবিরাজ বাড়ির এই পূজোর বৈশিষ্ট্য হলো, অষ্টমীতে ছাগ বলির পর এক টুকরো মাংস একটি মাটির সরা বা মাটির পাত্রে, একটি পান ও সুপারি দিয়ে রাখা হয়। সেটিকে নবমীর গভীর রাতে একটি ভেলায় মাংসের টুকরোটি রেখে প্রদীপ ও আলোনা খই দিয়ে শ্মশান সংলগ্ন নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
পুজোর সময় বাড়ির সকল সদস্য ও আত্মীয়রা দূরদূরান্ত থেকে চলে আসেন সাত মা-এর এই দুর্গা পূজোয়। পূজোর চারদিন চলে জমাটি আড্ডা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে এবারও গত বছরের মত সবকিছুতেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা অতিমারী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও হয়েছে কাটছাঁট। মা আসার আনন্দ যতটা মাতিয়ে তুলছে, করোনা আবোহ ততটাই ভাবিয়ে তুলেছে পরিবারের সদস্যদের।
মাধব দাস