TRENDING:

Independence Day 2021| স্বাধীনতার ইতিহাসে বিরল! আত্মাহুতি দেওয়া শহিদ বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য

Last Updated:

Independence Day 2021| স্বাধীনতার ইতিহাসে বিরল! নাম পরিচয় হীন, আত্মাহুতি দেওয়া শহীদ বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#রুদ্রনারায়ণ রায়, দক্ষিণ ২৪ পরগণা: স্বাধীনতার ইতিহাসে মাত্র ২২ বছর বয়সে নাম-পরিচয় হীন শহীদ হয়ে, অপর এক বিপ্লবীকে বাঁচিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ইতিহাসে বিরল। ব্রিটিশ শাসন কালে ভারতবর্ষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে জন্ম নিয়েছিলেন শতশত বীর যোদ্ধারা। যাঁরা নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। যাদের অবিরাম লড়াইয়ের বিনিময়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা লাভ করে ভারতবর্ষ। স্বাধীনতার জন্য যে বীর সন্তানেরা আত্ম বলিদান দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নাম বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য।
advertisement

দিনটা ছিল ১৯৩১ সালের ২৭শে জুলাই।  অন্যান্য দিনের মতো আলিপুর জর্জ কোর্টে লোকে লোকারণ্য। বিচারকের আসনে বসে  অর্ডার অর্ডার বলছেন যে লোকটি সে স্বয়ং গার্লিক সাহেব। কিছুদিন আগেই  বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত  ও বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন তিনিই। তার ওপর তখন ক্ষেপে রয়েছে বাংলার তামাম বিপ্লবীরা। শুধু একটি মাত্র সুযোগের অপেক্ষা। কখন গার্লিক সাহেব কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়।

advertisement

হঠাৎ-ই সবাইকে অবাক করে ৩৮ বোরোর একটা কোল্ড জুপিটার রিভলবার গর্জে উঠল। দর্শক আসন থেকে একটি গুলি ধেয়ে এলো গার্লিকের দিকে।  এক গুলিতেই অক্কা পেলেন গার্লিকসাহেব। রে রে করে তেড়ে আসলো ইংরেজ পুলিশের দল। গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিলো সেই সাহসী  যুবকের শরীর। যার পকেটের রিভলবারটা গর্জে উঠেছিল কোর্ট রুমে।

যুবকটি পালানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। যেন পরিণতি জেনেও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে এসেছে সে। ঘৃণ্য ব্রিটিশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ এড়াতে  ততক্ষণে ওই যুবক মুখে পুরে দিয়েছে পটাশিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুল।

advertisement

হাসিমুখে চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। যুবকের পকেট হাতড়ে পাওয়া গেল একটি চিরকুট। তাতে লেখা, \"ধ্বংস হও ,দীনেশ গুপ্ত কে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও। - বিমল গুপ্ত। \"

ব্রিটিশ পুলিশেরা ভাবলো যাক ,এই বিমল গুপ্ত লোকটা এতো দিনে মরল তাহলে। কিন্তু কে এই বিমল গুপ্ত ? বিমল গুপ্ত একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের মন্ত্রশিষ্য। লবণ আইনঅমান্য আন্দোলনের সময় জেলাশাসক জেমস পেডি সাহেব, দীঘা সমুদ্র তীরে সত্যাগ্রহীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিলেন। তারই প্রতিশোধ নিতে  দীনেশ গুপ্তের নির্দেশে পেডি সাহেব কে হত্যা করেন বিমল গুপ্ত। তাই তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য তখন হন্যে হয়ে ঘুরছে ব্রিটিশ পুলিশ। অবশেষে এই চিরকুট দেখেই  স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ইংরেজ শাসকরা।

advertisement

কিন্তু মজার বিষয়, ইংরেজ পুলিশ কখনোই বিমল গুপ্ত কে সামনে থেকে দেখেনি। বিমল গুপ্ত তখন আত্মগোপন করে ঝড়িয়ার কয়লা খনিতে ছোটো একটি চাকরি করছেন।

তাহলে কে এই যুবক ?  পুলিশকে বোকা বানিয়ে  বিমল গুপ্তের ছদ্মনামে যিনি আত্মবলিদান দিলেন? এই যুবকই হলেন বাংলার বীর সন্তান বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য।

কানাইলাল ভট্টাচার্যের জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের মজিলপুরে। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও মা কাত্যায়নী দেবী। ছোটবেলা থেকেই স্বদেশী বই পড়া ছিল তাঁর নেশা। তিনি  মজিলপুর জে এম ট্রেনিং স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৩১ সালে জয়নগর-মজিলপুর ব্যায়াম সমিতির সভ্য পদে যোগদান করেন এবং মন্মথ ঘোষ ও বিপ্লবী সুনীল চট্টোপাধ্যায় হাত ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীক্ষা নেন।

advertisement

শোনা যায়, বিপ্লবী সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তিনি গার্লিক হত্যা অভিযানে গিয়েছিলেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে জয়নগরের এই বীর সন্তান দেশের জন্য শহীদ হন। কানাইলাল ভট্টাচার্যের মা-ও ছিলেন স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত এক মহীয়সী। দেশের স্বাধীনতার জন্য সন্তান কে বিসর্জন দিতে দু-বার ভাবেন নি তিনি। এমনকি, শনাক্তকরণের সময় কানাইলালের

দেহ অস্বীকার করে তাঁর মা বলেন - \"এ তো আমার কানু নয়।\"

বেওয়ারিশ লাশের মতো নামগোত্রহীন অজ্ঞাতপরিচয় শহীদ হয়ে থেকে বিমল গুপ্ত নামক বিপ্লবীকে বাঁচিয়ে দিয়ে, চলে যান কানাইলাল ভট্টাচার্য।

কানাইলাল হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ত্যাগের বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে।

বিনয়-বাদল-দীনেশ‚ যাদের ভয়ে একদিন টেবিলের তলায় লুকিয়ে বেঁচেছিলো রাইটার্স বিল্ডিং এর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অত্যাচারী ইংরেজ অফিসাররা। ঐতিহাসিক সে দিনের ঘটনায় বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্ত নিহত হলেও দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের লড়াইয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন। অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকরা, অন্যায় আইনে দীনেশ গুপ্তকে ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন।  ব্রিটিশ বিচারক আর. গার্লিক সেই আদেশনামায় সই করেছিলেন।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই আর. গার্লিকে হত্যা করে, ব্রিটিশদের সমুচিত জবাব দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে বিপ্লবীদের কাধেঁ। তখনই দেশের স্বার্থে গার্লিক নিধনের মতো গুরু দায়িত্ব পালনের কাজে, যোগ্যতম ব্যক্তি হিসাবে বেছে নেওয়া হয় কানাইলাল ভট্টাচার্য্যকে।

বিপ্লবী কানাইলাল ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। খুব অল্প বয়সেই স্বাধীনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দেশ মা-কে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে খুব তাড়াতাড়ি তিনি বিপ্লবী আন্দোলনের একজন পরিণত যোদ্ধা হয়ে ওঠেন।

এই দেশপ্রেমিকের স্মৃতিতে পরবর্তীকালে আলিপুর বেকার রোডের নাম বদলে রাখা হয় বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য রোড। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর-মজিলপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামও এই বীর শহীদের নামে নামকরণ করা হয়েছে।  এছাড়াও ব্রোঞ্জের একটি আবক্ষমূর্তি মজিলপুর দত্ত বাজারে স্থাপন করা হয়েছে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
ওজন কমাতে গিয়ে ঘুরে গেল ভাগ্য! পাওয়ার লিফটিংয়ে সোনা জয় আসানসোলের মেয়ের
আরও দেখুন

২৭ শে জুলাই বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের দেশমাতৃকার চরণে আত্মাহুতি দেওয়ার দিন। তাই এই দিনটিকে প্রতিবছর \"আত্মাহুতি দিবস\" হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মহান বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের এই আত্মত্যাগ ভোলেনি জয়নগর মজিলপুরবাসীরা।দেশের স্বাধীনতার জন্য কানাইলাল ভট্টাচার্যের আত্মবলিদান অমর হয়ে থাকবে, স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায়।

বাংলা খবর/ খবর/Local News/
Independence Day 2021| স্বাধীনতার ইতিহাসে বিরল! আত্মাহুতি দেওয়া শহিদ বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল