তবে, মহিলা দ্বারা পরিচালিত পুজো শুনেছেন। কিন্তু মহিলা পুরোহিত? শুনেছেন? আচ্ছা, আর যদি বলি সেই পুজোর আয়োজনের মূর্তি; সেটাও মহিলা মৃৎশিল্পীর তৈরি! কী বলবেন? ভাবনায় পরে গেলেন তো? হ্যাঁ, এমনই এক দুর্গাপুজো সাড়ম্বরে পালিত হল শিলিগুড়ির পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লীর মাতৃকুটিরে। ষষ্ঠীর বোধন থেকে দর্পে বিসর্জন তদস্তু বিজয়া; সবটাই হয় শাস্ত্রমতে। এককথায় একবিংশ শতাব্দীতে তন্ত্রধারীদের অচলায়তনে আঘাত হেনেছে প্রিয়ম্বদা, জয়া, শিখারা।
advertisement
নারীদের পুজো করারও বিধানকে উজাগর করে গত দু'বছর ধরে মহিলা পুরোহিত ও মহিলা মৃৎশিল্পী দ্বারা গড়া মহামায়ার আরাধনা চলছে। পুজোর আয়োজনে যেমন অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষদের থেকে মহিলারা এগিয়ে থাকছে সেক্ষেত্রে পুজোও তাঁরাও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারবে এমন ভাবনা থেকেই মহিলা পুরোহিত দিয়ে পুজোর শুরু মাতৃকুটিরে। আগামীতেও এমনটাই চলবে বলে জানিয়েছেন মাতৃকুটিরের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রিয়ম্বদা বিশ্বাস। তাঁর কথায়, সব কিছুতেই যদি মহিলারা পায়ে পা মিলিয়ে পুরুষের সঙ্গে চলতে পারে তাহলে পুজোতে তাঁরা বাদ যাবেন কেন?
অন্যদিকে, যাঁরা পুজো করলেন শিখা চক্রবর্তী ও জয়া চক্রবর্তী; তাঁরা জানান, শাস্ত্রে যদি বিধান থাকতে পারে মায়ের আরাধনায় কোনও বাধা থাকতে পারে না। শিখাদেবী এখানে পৌরহিত্য করেন। বলেন, 'বাবা পুরোহিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে পুজো করতে দেখে আসছি। তাই নিয়ম-নিষ্ঠায় কখনও কোনও ত্রুটি রাখি না। আমি বিগত দুবছর ধরে এখানে পুজো করছি। অনেকে যেমন সাপোর্ট (support) করেছেন, তেমনি অনেক বাধাও দিয়েছেন। মহিলারা কেন পুজো করবেন? এই প্রশ্নের মুখে বারবার পড়তে হযেছে। কিন্তু পুরাণমতে মহিলারাও পুজো করতে পারেন। এতে কোনও ক্ষতি হয় না। আর্যসমাজে মনীষী এবং ঋষিদের সঙ্গে মহিলারাও যজ্ঞে অংশ নিতেন। আমরা সমাজে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।'
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা এবং মাতৃকুটিরের কর্মকর্ত্রী প্রিয়ম্বদা বিশ্বাস নিউজ ১৮ লোকালকে বলেন, 'বরাবরই মাতৃভক্তি ছিল আমার মধ্যে। ভাবাবেগের জায়গা থেকেই হয়ত স্বপ্নাদেশে নির্দেশ পেয়েছিলাম। এবং সেখান থেকেই এই পুজোর সূত্রপাত। এই পুজো সম্পূর্ণ মহিলা দ্বারা পরিচালিত। প্রতিমা তৈরি করা থেকে শুরু করে মায়ের আরাধনা, সম্পূর্ণ মহিলারাই করেন। ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই এই পুজোয় অংশ নেন।'
ষষ্ঠী থেকে দশমী থাকে বিভিন্ন ভোগের আয়োজন থাকে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, 'সপ্তমীতে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়, অষ্টমীতে খিচুড়ি ভোগ, নবমীতে পোলাও বা ফ্রায়েড রাইস (fried rice)। এছাড়া পিঠে পুলি তো রয়েছেই। দশমীতে কচুর শাক, পান্তা ভাত দিয়ে মাকে বিদায় জানানো হয়। দর্পে বিসর্জনের পরই মায়ের বিসর্জন হয়। ভোগের পাশাপাশি নতুন বস্ত্র, যেমন লালা-পাড় সাদা শাড়ি দিতে হয়। সেটাও দি আমরা নিয়ম মেনে।'
দর্শক এবং সমাজে অন্য মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'প্রথার পরিবর্তন হোক। মহিলাদের হাতেই মায়ের প্রতিমা গড়া হয়েছে। পুজোর সজ্জা, বাজার সবকিছুতেই মহিলার একটি অনন্য ভূমিকা রয়েছে। এটাই বলব, সকলে মিলে নারীশক্তির জয়জয়কারে হাত বাড়াই। নারীশক্তিরই তো আরাধনা! এই নারীশক্তির আরাধনায় আমার বার্তা এটাই থাকবে সঠিক নারীশক্তির জাগরণ হোক। নারীরা তাঁদের সত্তাকে চিনে উঠুক, জেনে উঠুক। সেটাকে সঠিক উপায় কাজে লাগানো হোক।'
আর্যসমাজই হোক কিংবা বর্তমান সমাজ। নারীশক্তির জয়জয়কার হোক সঠিকভাবেই। সেই শক্তির ব্যবহার হোক সৎভাবেই। এই বার্তা দিয়েই বছরের পর বছর পুজো করার পরিকল্পনা নিয়েছে 'মাতৃকুটির'।
Vaskar Chakraborty