• দর্শনীয় স্থান : লেপচাখা গ্রামকে অনেকেই 'ডুয়ার্সের রানী (Duars Queen)' হিসাবে বিবেচনা করেন এর মুগ্ধকর সৌন্দর্য্যের কারণে। ডুয়ার্সের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১২টি নদীর মনোরম দৃশ্য যা দেখে মনে হয় যেন লেপচাখা (Lepchakha) গ্রামের নির্মল পরিবেশের সমভূমির মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়ানো চকচকে সাপের ন্যায়। ভুটান সীমান্তের (Bhutan Border) কাছাকাছি হওয়ায় লেপচাখা (Lepchakha) গ্রামে নিরাপত্তা বেশ মজবুত। বিরল জনবহুল লেপচাখা (Lepchakha) গ্রামে ড্রুকপা (Drukpa) জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসবাস করে থাকেন। ড্রুকপা (Drukpa) জনগোষ্ঠী এই জায়গার আদি বাসিন্দা। এই গোষ্ঠী মূলত ভুটিয়া (Bhutanese) সম্প্রদায়ের এবং এদের সংস্কৃতি পাহাড়ের নিচের অংশে বসবাসকারী নেপালিদের (Nepali) থেকে কিছুটা আলাদা।
advertisement
এখনকার বাড়িগুলির গড়ন দেখতেও বেশ অনন্য। লেপচাখা (Lepchakha) গ্রামের প্রধান আকর্ষণ হল পাহাড়ের চূড়া যা বক্সা ন্যাশনাল পার্কের (Buxa National Park) অপরূপ দৃশ্যের সাথে সাথে ডুয়ার্স অঞ্চলে বিচরণকারী নদীর স্রোত এবং ড্রুকপা (Drukpa) মানুষদের মন ভরিয়ে তোলা আতিথেয়তা। এই গ্রামে প্রবাহিত নদীর বিস্ময়কর দৃশ্য এবং এই বিচিত্র গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশ অনেক দুঃসাহসিক এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রলুব্ধ করে যারা তাদের ব্যস্ত জীবন থেকে নিঃসঙ্গতা ও কিছুটা শান্তি খুঁজে পেতে চায়। প্রকৃতির মাঝে এবং ডুয়ার্স অঞ্চলে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকরা (tourist) এই মনোরম গ্রামের লেপচাখার (Lepchakha) দিকে আলপাইন বনের মোটা পথে ট্রেকিংয়ের (Trekking) আনন্দও চেখে নেন।
এখানে ঘুরতে এসে আলাপন দাস বললেন, 'আলিপুরদুয়ারের কাছে বক্সায় লেপচাখা প্রকৃতির মাঝে একটি আরামদায়ক অবস্থান। বর্তমানে এটি একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যতে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির কোলে আরামদায়ক সময় কাটানোর জন্য এই স্থানটি বারবার আমাকে টানে।'
• উপযুক্ত সময় : লেপচাখায় উপভোগ করার জন্য প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব আকর্ষণ থাকে কিন্তু লেপচাখা গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশে বেড়ানোর সর্বোত্তম সময় হল অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যখন আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং পর্যটকরা তাদের চোখ গ্রামের পাহাড়ের চূড়া থেকে ডুয়ার্স অঞ্চলের মনোরম দৃশ্যে ধুয়ে নিতে পারেন।
• কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছবেন : এই রহস্যময় গ্রাম লেপচাখার দিকে যাত্রা নিজের মধ্যেই একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। পর্যটকদের প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেনে কিংবা বাসে করে আলিপুরদুয়ারে পৌঁছতে হবে। আলিপুরদুয়ার থেকে বক্সা টাইগার রিজার্ভ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্ব ভাড়া করা অটো কিংবা গাড়ি করে অতিক্রম করতে হবে। এরপর টাইগার রিজার্ভে পৌঁছানোর পরে লেপচাখা গ্রামে পৌঁছানোর জন্য তাদের মিশ্র-ভেজা গাছের ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি পথে রওনা দিতে হবে। এই পাহাড়ি পথটি বক্সা দুর্গের মতো ঐতিহাসিক জায়গা, বক্সা টাইগার রিজার্ভের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক, অসংখ্য কমলা গাছের বাগানের মত বিচিত্র গন্তব্যে ভরা। লেপচাখা গ্রামের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় বিদেশী হিমালয়ান পাখির লোভনীয় আওয়াজের পাশাপাশি পথ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শুকনো পাতার খসখস শব্দ কানে আসবে। লেপচাখা গ্রামের দিকে যাওয়ার পথটি পাখি ও ভিন্ন প্রজাপতির প্রাণী দেখার জন্যও আদর্শ।
• থাকবার জায়গা : এখানে কিছুটা দূরে দূরেই জনবসতি গড়ে উঠেছে যেখান আপনারা অল্প খরচেই প্রচুর হোম-স্টে পেয়ে যাবেন।তবে পর্যটকদের সংখ্যা নগন্য ও কম খরচেই প্রচুর হোম-স্টে এর সুযোগ থাকায় এখানে হোটেল দুষ্প্রাপ্য বললেই চলে।
ভাস্কর চক্রবর্তী।