লায়েক বাড়ির সদস্যরা বলেন, পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পুজো। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একই রূপে পুজো নিচ্ছেন দেবী। ৫১৪ বছরের এসে আজও, পুজোর সমস্ত নিয়ম অক্ষুণ রয়েছে এখানে। কথিত রয়েছে , রাজা সেলিম অর্থাৎ জাহাঙ্গীর এখানে পুজো পাঠাতেন। কারণ লায়েক বাড়ির পুজোর যখন পত্তন হয়, তখন কাঁকসার সিলামপুরে রাজ্যপাট ছিল জাহাঙ্গীরের। এই এলাকা একসময় ছিল পরগনার অধীনে। সেসসময় পরগণার বাদশা ছিলেন রাজা জাহাঙ্গীর। তাই জমিদার পরিবার, লায়েক বাড়িতে পুজো পাঠাতেন রাজা সেলিম।
advertisement
দেবী পার্বতীর রূপ এখানে রনংদেহী। দেবী এখানে সিংহবাহিনী নন। অসুর বিনাশকারিণী দেবী এখানে ব্যাঘ্রবাহিনী। দেবীর হাতের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষত্ব। দেবীর দশটি হাতের মধ্যে দুটি হাত ত্রিশূলধারিণী হয়ে অসুর বিনাশ করছে। বাকি আটটি হাত অপেক্ষাকৃত ছোট। এই হাতগুলি মোড়ানো হয় না। আটটি সোজা হাতে দেবী অস্ত্র ধারণ করেছেন।
বর্তমানে দেবী প্রতিমাগুলি সাজানো হয় নানা রকমের উজ্জ্বল সাজে। থিমের প্রতিমা হোক, বা পারিবারিক পুজোর প্রতিমা – সবক্ষেত্রেই প্রতিমার সাজসজ্জায় অনেক বদল এসেছে। পারিবারিক পুজোগুলির ক্ষেত্রে অনেকেই এখনও ডাকের সাজ ব্যবহার করেন। তাছাড়াও কোথাও কোথাও ব্যবহার করা হয় আট বাংলা সাজ। তবে লায়েক বাড়ির প্রতিমা এই ক্ষেত্রেও অনেকটা আলাদা। লায়েক বাড়ির প্রতিমার অলঙ্কার তৈরি করা হয় মাটি দিয়ে। মৃৎশিল্পী প্রতিমার রূপদানের সময় অলঙ্কারগুলি তৈরি করে দেন। সেই সাজেই শোভা পান গোপালপুরের লায়েক বাড়ির দুর্গা প্রতিমা। যদিও দেবীর মাথায় স্বর্ণমুকুট দেখা যায়।
লায়েক বাড়ির প্রতিমা প্রচণ্ডরূপী রনংদেহী। অসুর নিধনের মূহূর্তে দেবীমূর্তি এখানে বিবসনা। লায়েক বাড়িতে চণ্ডরূপী দুর্গা, সিংহের বদলে বাঘের পিঠে চেপে মহিষাসুরকে বধ করেছেন। একচালার এই প্রতিমায় লক্ষী ও সরস্বতীরও কোনও বাহন থাকে না। দেবীর দুই কন্যা এখানে পদ্মের ওপর অবস্থান করেন। রনংদেহী দেবীর সন্ধপুজোয় বলিদান প্রথা এখনও চালু রয়েছে। দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী হওয়ার জন্য এখানে শ্বেত বর্ণের ছাগ বলি দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের নির্দেশে এই বছর থেকে লায়েক বাড়ির পুজোতে ছাগবলি প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
পুজোর দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই সেজে উঠছে গোপালপুরের লায়েক বাড়ি। উমার আগমনের অপেক্ষায় দিন গুণছেন পরিবাররে সকলে। পরিবারের প্রবাসী সদস্যরাও দেবী বোধনের আগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে লায়েক পরিবারের আট থেকে আশি সকলেই।