পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির নিয়ামতপুর। এখানেই বসবাস বেলুরইয়ের রায় পরিবারের। রায় পরিবারের পুজো, প্রতিমা, কোথাও তেমন বিশেষত্ব নেই। পুজোর তিনদিন, অন্য সাধারণ দুর্গাপুজোর মতোই, পুজো হয় এখানে। রায় পরিবারের পুজোর আকর্ষণ দশমীর সকাল। সেদিন অস্ত্রপুজো করে, গান স্যালুট দিয়ে বিদায় জানানো হয় উমাকে। দীর্ঘ ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে এই রীতি।
advertisement
আরও পড়ুন: বোধনেই বাজে নবমীর বিষাদের সুর, ধেনুয়ায় একদিনের দুর্গাপুজো বহু ইতিহাসের সাক্ষী
প্রায় ৩০০ বছর আগে রায় পরিবারের পুজোর সূচনা করেন রাজপুত রায়। তিনদিন সাধরণভাবে পুজো করলেও, দশমীর দিন অস্ত্র পুজো শুরু করেন তিনি। তারপর বন্দুক, রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে দেবীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রায় সাত থেকে আট রাউন্ড গুলি চালানো হয় এখানে। তারপর শোভাযাত্রা করে দেবীর ঘট নিয়ে যাওয়া হয় পরিবারের অধীনে থাকা রামসায়রে। সেখানে নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমা।
আরও পড়ুন: রূপকথাও গল্পও হার মানবে, মুঘল আমলের সাক্ষী হাওড়ার সাঁঝের আটচালা
রায় পরিবারের পুজোতে অপরাজিতা পুজোর পরে আলাদা করে অস্ত্র পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। অস্ত্রপুজোর পরে পরিবারের সদস্যরা চলে যান রামসায়র ময়দানে। সেখানে আকাশে শঙ্খচিল উড়তে দেখা পরেই দেবীর মঙ্গলঘট নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের জন্য। সেসময় পরিবারের সদস্যরা গান স্যালুট দিয়ে দেবীকে সম্মান জানান। যে সমস্ত বন্দুক বা রিভলবার গুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি সবই লাইসেন্স প্রাপ্ত।
রায় পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই বর্তমানে বাইরে থাকেন। তবে পুজোর সময় সবাই চলে আসেন বাড়িতে। সকলে মিলে যোগ দেন উৎসবে। চলে দেদার খাওয়া দাওয়া। সমস্ত রকম নিরাপত্তা মেনে দশমীর দিনে পরিবারের পুরুষ, মহিলা সদস্যরা বন্দুকবাজিতে অংশগ্রহমন করেন। এই উৎসব দেখতে স্থানীয়রা তো বটেই, আশপাশের বহু এলাকার মানুষ ভিড় জমান। অস্ত্র পুজো ও গানস্যালুট দেখতে বাইরে থেকেও আসেন বহু মানুষ। সকলে মিলে আনন্দ ভাগ করে নেন।
আরও পড়ুন: ৩০০ বছরের হাঁসখালির গাজনা হরিতলার মহিলা পরিচালিত পুজো, প্রতিমা গড়েন মহিলারাই
প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও বিশেষ শোভাযাত্রা হয় এখানে। স্থানীয় আটটি প্রতিমা শোভাযাত্রা করে নিয়ে গিয়ে জমা করা হয়ে রামসায়র ময়দানে। সেখানেই নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমাগুলির। তার আগে রায় পরিবারের মহিলারা মেতে ওঠেন দেবী বরণ ও সিঁদুর খেলায়। যোগ দেন গ্রামের মানুষও। এরপর শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে নিয়ে যাওয়া হয়।
যদিও গতবছর করোনার জন্য শোভাযাত্রায় বিধিনিষেধ ছিল। তাই অল্প আয়োজনের মধ্যে দিয়েই পুজো সারা হয়েছিল। চলতি বছরেও করোনার থাবামুক্ত না হওয়ার জন্য বিধিনিষেধ বহাল থাকছে। তবে নিয়ম মেনে হবে সব পুজোই। হবে শঙ্খচিল দেখে গালস্যালুট ও প্রতিমা নিরঞ্জন। তবে শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষকে অভূতপূর্ব এই দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দেবীর কাছে প্রার্থনা করবেন, যাতে বিশ্ব দ্রুত করোনামুক্ত হয়। সবাই মিলে যাতে আগের মতো পুজোর আনন্দে সামিল হতে পারেন।