কিন্তু বর্তমান করোনাকালে দীর্ঘ এক বছর ধরে এই পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গণপরিবহণ বন্ধ। গণপরিবহণ বন্ধ থাকার কারণে এক প্রকার পর্যটকহীন হয়ে পড়েছে এই পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকহীন হয়ে পড়ার কারণে এই পর্যটন কেন্দ্রের সাথে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলির দিন কাটছে অসহায় ভাবে। তাদের এই অসহায় পরিস্থিতি জানা গিয়েছে তাদের মুখ থেকেই।
advertisement
বক্রেশ্বর মন্দিরের পুরোহিত স্বপন কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, "বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মন্দির কমিটি কেবলমাত্র ভোগ এবং আরতির সময় মন্দিরের দরজা খুলে রাখে। তারপর বাকি সময় বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজা। দর্শনার্থীরা এমনিতেই এখন সংখ্যায় নেই বললেই চলে, এছাড়াও যদিবা কেউ এসে থাকেন তাহলে দর্শন করার কোন উপায় নেয়। আর এই পরিস্থিতিতে আমাদের খুব কষ্ট করেই চালাতে হচ্ছে।" এর পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, "বীরভূমের অন্যান্য ৪ পীঠের ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা এলেও বক্রেশ্বর সতীপীঠের জন্য কোন সহযোগিতা আসেনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরাও উপকৃত হবো।"
আর এই পরিস্থিতিতে সবথেকে অসহায় অবস্থা এলাকার ব্যবসায়ী এবং ভিক্ষাবৃত্তির সাথে যুক্ত মানুষেরা। কারণ তারা প্রত্যেকেই পর্যটকদের আগমণের উপর নির্ভরশীল। এলাকার ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন দাঁ, নীলিমা চৌধুরী, সৃজন কুমার রায়, ভিক্ষাবৃত্তির সাথে যুক্ত রেনু মন্ডল প্রত্যেকের মুখেই একই কথা। তাদের কথায়, "বাস বন্ধ, অন্যান্য যানবাহন বন্ধ। পর্যটক নেই এই বক্রেশ্বর ধামে। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত সময়ে দোকান খোলা আর না খোলা একই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। দোকান খুলে কোনদিন বউনি হয় আবার কোনদিন হয় না। তবে বাড়িতে মন টিকছে না, যে কারণে পাঁচ টাকা দশ টাকা লাভের আশায় দোকান খুলছি। এইভাবে আমাদের পক্ষে সংসার চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। খুব কষ্টের সাথেই সংসার চালাতে হচ্ছে।"
রেনু মন্ডল জানিয়েছেন, "আমরা তো ভিক্ষা করেই খাই। এখন কেউ না আসায় ভিক্ষাও পাচ্ছি না। আমাদের কেউ নেই, তাছাড়া বয়স যা দাঁড়িয়েছে তাতে কাজ করে খাবার ক্ষমতাও নেই। দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের জন্য এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।"
প্রসঙ্গত, বছরের অধিকাংশ সময়ই এই বক্রেশ্বর পর্যটক কেন্দ্র প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আগমণ হয়ে থাকে। শীতকালে সংখ্যাটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। উষ্ণ প্রস্রবনের টানে এই সময় এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের আগমন ঘটে। কিন্তু বর্তমান করোনাকাল থেকেই পর্যটক সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে গেছে। আর কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকাকালীন স্থানীয় কিছু মানুষ ছাড়া বাইরের কারোর দেখা নেই।
মাধব দাস