৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই খনি অঞ্চল জামুরিয়া। সেখানেই রয়েছে সিঙ্গারণ কালীমন্দির। প্রাচীন দুর্গাপুরের জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ানো ডাকাত সর্দার ভবানী পাঠক এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইতিহাস ভবানী পাঠককে একনিষ্ঠ কালী ভক্ত এবং কালী সাধক বলে পরিচয় দিয়েছে। দুর্গাপুরে ভবানী পাঠকের কালী মন্দির রয়েছে। যা বর্তমানে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু তারই প্রতিষ্ঠা আর এক কালী মন্দির এখনও রহস্যের বেড়াজালে বন্দি। একাধিক জনশ্রুতি রয়েছে এখানে। স্থানীয় মানুষজন বলেন, এখানে দেবী ভীষণই জাগ্রত। অনেকেই দেবীর উপস্থিতি উপলব্ধি করেছেন। সিঙ্গারন কালী দেবীর কাছে মনস্কামনা নিয়ে এলে, কখনোই কাউকে খালি হাতে ফিরতে হয় না।
advertisement
তবে শুধু ভবনী পাঠক নয়। এই মন্দিরে পদধূলি পড়েছে কালী সাধক বামাক্ষ্যাপার। স্থানীয় এলাকায় ঘুরতে এসে তিনি এই মন্দিরে পা রাখেন। সেখানেই নিরাকার দেবীর আরাধনা করেন। শুধুমাত্র একটি বেদীর ওপর এই পুজো করেন তিনি। আজও মন্দিরের সামনে মা তারার একনিষ্ঠ ভক্ত বামদেবের একটি মূর্তি রয়েছে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ, বিখ্যাত দুই কালী সাধক এর পদধূলির পড়েছে এখানে। তারপরে আজও জঙ্গলের মাঝে পুজো নিয়ে আসছেন সিঙ্গারনের দেবী কালী। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই এই মন্দিরের বয়স পেরিয়েছে তিন শতাব্দি।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সুবল বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অতীতে এই এলাকাটি ঘন জঙ্গল ছিল। সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারতেন না। অতীতে মায়ের বেদীর স্থলে উইঢিপি ছিল। সেই উইডিপি ওপর অপরাজিতা ফুল গাছ দিয়ে ঢাকা থাকতো। ব্রিটিশ আমলে কয়লা উত্তোলন করার সময় মন্দিরের পাশের থেকে বারো হাত চুল, তিনটি পাথরের নেত্র, ও দুটি পায়ের খরম পাওয়া গিয়েছিল। বর্তমানে সেইগুলি মন্দিরে পু্ঁতে দিয়ে সেখানে একটা বেদী তৈরি করা হয়েছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, কয়লা উত্তোলনের জন্য বহুবার এই মন্দির ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ইসিএল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কখনো এই মন্দিরের ক্ষতি করতে পারে নি কেউ। দীপান্বিতা আমাবস্যায় পুজোর দিন ছাগ বলির নিয়ম রয়েছে এই মন্দিরে।
জামুরিয়া শিল্পাঞ্চলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। তবে করোনার জন্য এবছর মেলা বসবে না। কিন্তু মায়ের মন্দিরে অবাধ যাতায়াত থাকবে সমস্ত ভক্তদের। বহু মানুষই তাদের মনস্কামনা পূরণের বাসনা নিয়ে এখানে আসবেন। তাই কালীপুজো উপলক্ষে সেজে উঠছে ভবানী পাঠক প্রতিষ্ঠিত এই অনামী কালী মন্দির।






