অপর্ণা দেবীর কাছে দিনটা শুরু হয়েছিল অন্যান্য দিনের মতোই। গোল বাঁধে দুপুরে। দুপুর ১টা নাগাদ তার স্বামী, দেবদুলাল দাস শ্বশুরবাড়ির সামনে এসে ধরনায় বসেন। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধরনায় বসেছিলেন তিনি। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই, প্রচুর লোকজন জমায়েত করেন। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন পুলিশ আধিকারিকরা। ঘটনায় জেরে প্রথমে হকচকিয়ে যান অপর্ণা দেবী। অন্যদিকে, নিজে দাবির সমর্থনে বারবার চিৎকার করতে থাকেন দেবদুলাল দাস। স্ত্রী-সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি পোস্টারে ছাপিয়ে, তার নিচে ধর্নায় বসেন তিনি। হুঁশিয়ারি দেন, স্ত্রী তার সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে না গেলে আত্মহত্যা করবেন তিনি। আত্মহত্যা করবেন তার বয়স্ক মা।
advertisement
দেবদুলাল বাবু জানান, বছর আটেক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাদের সাত বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দু'বছর আগে দেবদুলাল বাবুর মায়ের নামে মিথ্যা মামলা করেন অপর্না দাস। যদিও পরে, ভুল বুঝতে পেরে সেই মামলাটি মিটমাট করে নেওয়া হয়। তবে তারপর থেকে আর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যাননি অপর্ণা। তিন মাসের মধ্যে ফিরে যাওয়ার কথা বলেও, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। তাই স্ত্রী-সন্তানকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ধরণায় বসেছেন।
পাশাপাশি দেবদুলাল বাবু বলেছেন, তার স্ত্রী একটি খোরপোষ মামলা রুজু করেছেন। কিন্তু তিনি কোন খোরপোষ শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে পারবেন না। নিজের বাড়িতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে গিয়ে, সেখানেই তাদের দেখভাল করবেন। অন্যদিকে, অপর্না দাস জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বিয়ে হলেও, তার ওপর স্বামী শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করত। তাদের সাত বছরের সন্তান, বাবার ব্যবহারে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকত। দেবদুলাল, অপর্ণা দেবীকে মারধর করত বলে অভিযোগ। বারবার আচার-ব্যবহার পরিবর্তন করতে বললেও, কোনও কথাই নাকি কানে তোলেননি দেবদুলাল দাস। তাই বাধ্য হয়ে অপর্ণা ফিরে গিয়েছেন বাবার বাড়িতে। আর তিনি কোনওভাবেই শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে চান না। তার দাবি, মামলার ফাইনাল ডেট কাছে চলে আসার জন্য, কোনও উপায় না পেয়ে এই ধরনের নাটক দেবদুলাল করছেন।
সবমিলিয়ে এই ঘটনা দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছেন দুর্গাপুরের ডিটিপিএস এলাকার নিউ কলোনির মানুষ। তারা বলছেন, সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব এবং আইনি জটিলতায় আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে যাওয়ার ফল এই ঘটনা। তবে আলোচনা এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের উপদেশ দিয়েছেন স্থানীয়রা।