বুধবার দুপুরে হলুদ শাড়ি, রংবেরঙের গয়না পরে চারদিকের সাজো সাজো উৎসব রবের মানে বোঝার চেষ্টা করছিল দশ বছরের মেয়েটি। তাকে ঘিরেই সব আয়োজন। নিজে আগে পৈতে বা উপনয়ন দেখেছে। সে সব দাদাদের। কিন্তু এ বার তার নিজেরই পৈতে। ছোট্ট মেয়েটি বলল, ‘‘মা বলেছে, আজ আমার দ্বিতীয় জন্ম হবে।’’ অবশ্য মেয়ের পৈতে দিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি মা কৌশানী চট্টোপাধ্যায়কে। ব্রাহ্মণ পরিবারে ছেলেদের পৈতে তো হয়ই। কিন্তু মেয়ের পৈতে! অনেক বিস্ময়ের জবাব দিতে, মেয়ের অধিকার বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার মা আর বাবা। এবং ছকভাঙা এই দম্পতি পারলেনও। দীর্ঘ দিন ধরে কোথায় পালিত হবে এই অনুষ্ঠান, তা খোঁজ করার পরে বুধবার পূরণ হল স্বপ্ন।
advertisement
কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন ওই দম্পতি। তাদের সিউড়ির রামকৃষ্ণপল্লীর বাসভবনে মেয়ের উপনয়নের আয়োজন করেন তাঁরা। কার্ড ছাপিয়ে সবাইকে নেমন্তন্ন করা হয়। দম্পতি অবশ্যই জানিয়েছেন হঠাৎ ইচ্ছে থেকে নয়। রীতিমতো তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই তাঁদের কন্যার দ্বিজত্ব প্রাপ্তির অনুষ্ঠান করেন। মেয়েদেরর হৃত অধিকার ফিরে পাওয়া উচিত -এই ধারণাকে সামনে রেখেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। দম্পতির কথায় সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা-তাদের সমান অধিকার পাওয়া উচিত। তাই আমাদের মেয়ে উপবীত ধারণ করছে ।
এছাড়াও বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ” ২০১৪ সালে কৈরভীর যখন অন্নপ্রাশন হয়েছিল তখন পুরোহিত যজ্ঞ করতে রাজি হচ্ছিলেন না । তিনি দাবি করেছিলেন, যজ্ঞ তো শুধু পুত্রদের অন্নপ্রাশনের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে । মেয়েদের বিয়ের সময়েই নাকি শুধু যজ্ঞ করা যায় । তখন এর প্রতিবাদ করেছিলেন বাবা বাঁশরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।বাবা বলেছিলেন ধর্মে এমন কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়। পরে পঞ্জিকা ঘেঁটে দেখা যায় সত্যিই মেয়ের অন্নপ্রাশনে যজ্ঞে কোনও বাধা নেই। তখনই মাথায় আসে পুত্রসন্তানের পৈতে হলে আমার মেয়েরও পৈতে দেওয়া যাবে ।’’ অবশেষে বিভিন্ন বই ঘেঁটে ইস্কন ও বারাণসীর পাণিনি কন্যা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার আর্য সমাজ মন্দির, রবিশঙ্করের বৈদিক ধর্মসংস্থান-সব জায়গা থেকে খোঁজ নিয়ে তারা নিশ্চিত হন যে , কন্যার পৈতেও দেওয়া সম্ভব।
আর্ট লিভিং-এর স্বামী শ্রদ্ধানন্দ এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বৈদিক নিয়মে মেয়েদেরও পৈতে ধারণ করার অধিকার ছিল। তবে মাঝখানে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এই নিয়ম খারিজ করে দেয়। ইদানীং আর্ট অফ লিভিং এর তরফে রবিশঙ্করজী এই প্রথাকে মান্যতা দিয়েছেন।