বাড়িতে খড়মাটির প্রতিমা দিয়ে পুজো নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু শৈশব থেকেই সোমনাথের বাসনা বাড়িতে প্রতিমা পুজোর। আট বছর বয়স থেকে কাগজ, রঙ এবং মনের মাধুরী মিশিয়ে কাগজের প্রতিমা তৈরি করে সোমনাথ। তাই নিজে হাতেই কাগজ রং কাপড় দিয়ে গত কয়েক বছর দেবী দুর্গার মূর্তি গড়ছে হাওড়া আন্দুলের সোমনাথ।
advertisement
গত কয়েক বছর আগেই গত হয়েছেন মা,তারপর থেকে দুর্গাপুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই মা হারানোর দুঃখ কিছুটা ভুলে গিয়ে দেবী দুর্গা গড়ার কাজে মেতে ওঠে সোমনাথ। সোমনাথের মা সেলাই করতেন। তাঁর কাছেই অনুপ্রেরণা পেয়েছে কাগজের দুর্গা বানানোর। ২০২১ সালে মাকে হারায় সোমনাথ। তবে বাতিল কাপড় দিয়ে মায়ের তৈরি দুর্গার শাড়ি এখনও স্মৃতির চাদর হয়ে ছেলেকে ভরসা দেয়। গত বছর কাগজের তৈরি প্রতিমা বেলুড় মঠের মহারাজের পছন্দ হতে সেখানে পাঠিয়েছেন। এবারও তার প্রতিমা সোমবার উদ্বোধন করলেন এক মহারাজ।
তার পুজোয় জাঁকজমক নেই, নেই আর্থিক সামর্থ্য। তবে ষষ্ঠী থেকে দশমী সোমনাথ নিজেই মায়ের পুজো করে। সোমনাথের হাত ধরে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ায় আপ্লুত সোমনাথের জেঠু।
সোমনাথের কাগজের অভিনব দুর্গা দেখতে এখন গ্রামের মানুষ ভিড় জমান। কাগজের দুর্গার আরাধনায় সামিল হন তাঁরা।
কাগজ ব্যবহার করে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয় মূলত পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য। ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা বিসর্জনের সময় জলাশয়ে মিশে যাওয়া মাটি ও রাসায়নিক উপাদান পরিবেশের ক্ষতি করে | এই প্রতিমাগুলো শুধুমাত্র শিল্পকর্ম নয়, বরং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করার একটি মাধ্যমও বটে।
এই প্রসঙ্গে সোমনাথ দে জানায় গত প্রায় দুই মাস আগে প্রস্তুতি শুরু প্রতিমা তৈরির। সকলেই বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। আরও বেশি আনন্দের কথা হল নিজের হাতে তৈরি প্রতিমা মহারাজের হাত ধরে উদ্বোধন হচ্ছে।
সোমনাথের এমন কর্মকাণ্ডে খুশি পরিবার সদস্যরা। জেঠু জেঠিমা থেকে সকলেই তাকে এইরূপ কাজে উৎসাহ প্রদান করে থাকেন। শৈশব থেকেই অংকনের প্রতি দারুন আগ্রহ, গত কয়েক বছর নিজের হাতেই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছে সোমনাথ। স্কুল পড়ুয়া সোমনাথের হাতে এমন প্রতিমা তৈরি হতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় সকলেই খুশি। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় দুর্গা দাস জানান, আর পাঁচটা ছেলের থেকে অনেকটা আলাদা সোমনাথ। শৈশব থেকেই ভগবানের প্রতি ভক্তি। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির জেরেই তার হাতে সেজে উঠছে মা দুর্গা।