তবে নীল চাষ না থাকলেও নীলকুঠিগুলি আজও রয়েছে নিজের জায়গায় স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে। এরকমই একটি নীলকুঠি রয়েছে বীরভূমের লাভপুরে। চারিদিকে আগাছা তার সাথে বড় বড় গাছ আর ঘন গভীর জঙ্গল। আর এই বিস্তীর্ণ জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভগ্নপ্রায় গুনুটিয়া নীলকুঠিটি। বীরভূমের ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে তৈরি হয়েছিল এই নীলকুঠিটি।
advertisement
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বে বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাংলা বীরভূম তথা আমাদের ভারতবর্ষ। দেশ এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী বীরভূমের বিভিন্ন জায়গা। ঠিক সেই রকম বীরভূমের একটি জায়গা হল লাভপুরের নীলকুঠি। এই নীলকুঠি দাঁতন দিয়ে নীল চাষ এবং কৃষকদের উপর অত্যাচারের সাক্ষী থেকেছে একসময়।ইতিহাসকে জীবিত করে রাখা জঙ্গলে ঘেরা ওই নীলকুঠিটি হলও বীরভূমের লাভপুরের গুনুটিয়ার বোলপুর ও লাভপুরের রাস্তায় কুয়ে নদী পার হওয়ার পর লাভপুর থেকে লাঘাট যাওয়ার পথে সেতু পার হয়ে ময়ূরাক্ষী নদীর পাশে অবস্থিত।
আরও পড়ুনঃ হাতের অনামিকার মাপ, আকারই চিনিয়ে দেয় কে কেমন মানুষ! মিলিয়ে দেখুন ‘এই’ সহজ উপায়ে, চমকাবেন আপনিও
প্রসঙ্গত, জানা যায় সময়টা নেহাতই কম নয় আজ থেকে প্রায় ২৫০-৩০০ বছর আগে জলপথে যাতায়াতের সুবিধা,আবহাওয়া,কাঁচামাল, উর্বর জমির জন্য বীরভূম জেলায় লাক্ষা, তুঁত, রেশম, নীল প্রভৃতি ভাল চাষ হত। রেশম চাষের জন্য ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ বণিক এডওয়ার্ড হে বীরভূমের লাভপুরে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে গুনুটিয়া কুঠি তৈরি করেন। জানা যায়, প্রথম দিকে এখান থেকে রেশম, তুঁত প্রভৃতি চাষের তত্ত্বাবধান করা হলেও পরবর্তীকালে নীল চাষ শুরু হয়। তাই পরে এই গুনুটিয়া কুঠি নীলকুঠি হিসাবে পরিচিতি পায়।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৭৮৫ সালে ফরাসি বণিক জেমস ফ্রুশার্ড ২০ হাজার টাকায় এই গুনুটিয়া কুঠি কিনে নেন। সেই সময় কুঠির পরিধিও বৃদ্ধি পায়। ভারতে তখন ব্রিটিশ সরকার আধিপত্য জমাতে শুরু করেছে। তাই পরবর্তীতে ১৮০৮ সালে এই কুঠিটি ব্রিটিশ সরকার কিনে নেন। কুঠির দায়িত্ব দেওয়া হয় জন চিপের হাতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই নীলকুঠি আজকে প্রায় ভগ্নপ্রায় অবস্থা। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ আমলের সেই ইট ঝরে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে নীলকুঠির প্রাধান্য। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন অন্ততপক্ষে এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।