ইতিহাস বলছে, রাজনগরের পাহাড়ি অঞ্চলে একসময় পাহাড়ি জনজাতিরাই শাসন করতেন। তাঁদের প্রধান খাদ্য ছিল বরবটি কলাই, যার গুঁড়ো থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি হয়েছিল প্রথম অমৃতি। পরে সময়ের সঙ্গে উপকরণের বদল ঘটে। বরবটি কলাইয়ের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে থাকে কালো বিড়ি কলাই। দে পরিবারের দ্বারকানাথ দে-র হাত ধরেই জনপ্রিয় হয় এই নতুন স্বাদের জিলিপি, যা আজও ঐতিহ্য হিসেবে টিকে আছে। কালো বিড়ি কলাই, আতপ চালের গুঁড়ো ও নিপুণ কারিগরির সংমিশ্রণে তৈরি হয় এই অমৃতি। দেখতে খানিকটা ফ্যাকাসে সাদা, কারণ এতে কোনও কৃত্রিম রঙের ব্যবহার হয় না।
advertisement
আরও পড়ুন: অদূর ভবিষ্যতে AI ছড়ি ঘোরাবে বিশ্বে! ভাল-মন্দ বোঝাতে ১৩০০ ছাত্রীকে নিয়ে হয়ে গেল বড় কর্মযজ্ঞ
তৈরির প্রক্রিয়াটিও দীর্ঘ, কলাই শুকিয়ে সারারাত ভিজিয়ে খোসা ছাড়ানো, তারপর শিলনোড়ায় বাটা ও চালের গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে ভেজে ঠাণ্ডা রসে ডোবানো হয়। ফলাফল, বাইরে মুচমুচে, ভিতরে রসে ভরা, মুখে গলে যাওয়া এক অপূর্ব স্বাদ। বীরভূমের তাঁতিপাড়ার হাটতলার সুমন রুজ আজও বাবার কাছ থেকে শেখা সেই পুরনো রীতিতে জিলিপি তৈরি করেন। তিনি জানান, “আমাদের অমৃতি কালো বিড়ি কলাই দিয়ে তৈরি। দিনে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি বিক্রি হয়। উৎসবের সময়ে বিক্রি বেড়ে ৪-৫ কুইন্টাল পর্যন্ত পৌঁছে যায়।” বর্তমানে অমৃতির দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু ধীবর বলেন, “তাঁতিপাড়ার অমৃতি এক নম্বর অমৃতি। বহু দূর থেকে মানুষ আসে এই অমৃতি কিনতে। এটা আমাদের গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য।” দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটার মতো উৎসবে এই অমৃতির কদর আরও বেড়ে যায়। অতিথি এলেই তাঁতিপাড়ার বাসিন্দারা গর্ব করে দেন তাঁদের বিখ্যাত অমৃতি। বীরভূমের এই মিষ্টি শুধু একটি খাবার নয়, এটি এক ঐতিহ্য, এক স্বাদে ভরা ইতিহাস, যেখানে কলাই, কারিগরি আর সংস্কৃতির মিশেলে জন্ম নিয়েছে ‘তাঁতিপাড়ার জিলাপি’। কেননা এটি অমৃতি হলেও অধিকাংশরা এটিকে জিলাপি বলেন।





