অন্যদিকে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তাই নবান্ন আগেই বিভিন্ন দফতরকে গ্রামীণ উন্নয়নের প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের নির্দেশ দিয়েছিল। এবার পঞ্চদ্বশ অর্থ কমিশনের টাকা যাতে জেলাগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে দ্রুত খরচ করতে পারে সেজন্য পঞ্চায়েত দপ্তর উদ্যোগী হল।কারণ কমিশনের প্রথম কিস্তির টাকার একটা বড় অংশ এখনও খরচ হয়নি। এনিয়ে নবান্ন উদ্বিগ্ন। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আসতে চলেছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব পি উল্গানাথন জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে আগেই জানিয়ে দিয়েছে, এই টাকা যাতে পাওয়া মাত্রই খরচ করা যায় সেজন্য আগে থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সময় ধরে চূড়ান্ত করে ফেলতে বলা হয়েছে। যাতে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে দেওয়া যায়।
advertisement
পঞ্চায়েত দফতর টাইমলাইনে জেলাগুলিকে বলেছে, প্রকল্প চিহ্নিত করুন। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়ত সমিতি, জেলাপরিষদ সাধারণ সভা ডেকে অনুমোদন করে নিন। আগের প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যায় হয়ে থাকলে সে নিয়েও সাধারণ সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন করিয়ে রাখুন।এই অনুমোদন পাওয়ার পরই তা ই-গ্রামস্বরাজ পোর্টালে আপলোড করে দিন। নতুন প্রকল্পগুলি অনুমোদনের পরই তা চূড়ান্ত পরিকল্পনা ও খরচের রূপরেখা আইনি অনুমোজনের জন্য সংশ্লিষ্ট ভেটেড করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে পেশ করুন।
৯ জানুয়ারির মধ্যে তা করে ফেলতে হবে। তারপরই এই ভেটড স্কিম বা প্রকল্পগুলি ত্রিস্তরীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে সাধারণ সভায় অনুমোদন করাতে হবে। ১৪ জানুয়ারির মধ্যে টেন্ডার ডাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ শেষ করে রাখতে হবে। যাতে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বরাদ্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে দেওয়া যায়। আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই গ্রামীণ প্রকল্পরে কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। তারপরও পঞ্চদ্বশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ ২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা খরচ না করে জেলাগুলিতে পড়ে রয়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন নবান্ন।
আরও পড়ুন: D.El.Ed কোর্সে ভর্তিতেও দুর্নীতি? স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের! আর কোনও আবেদন নিতে পারবে না পর্ষদ
কেন এই টাকা গ্রাম পঞ্চায়েত খরচ করতে পারছে না জানতে চেয়ে মুখ্যসচিব ২ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার বৈঠক ডেকেছেন।এই বৈঠকে পঞ্চায়েত আধিকারিকদের সঙ্গে জেলাশাসকদেরও থাকতে বলা হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়নে অর্থ কমিশনের বরাদ্দের সবটাই মেলে কেন্দ্রীয় অনুদান হিসেবে। তাই খরচের ক্ষেত্রে গড়িমসি আগামী বছরগুলিতে কমিশনের সুপারিশ করা কেন্দ্রীয় অনুদান বরাদ্দ আদায়ের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে প্রশাসনিক মহলের আশঙ্কা।
অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রতিটি জেলাকে জনসংখ্যার নিরীখে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে এই টাকা কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়। কোনও বছরে এই টাকা কম খরচ হলে পরের বছরের বরাদ্দ কমে যায়। এজন্য নির্দিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক পরিকল্পনা মাফিক ৬০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ করা হয়। একে শর্তাধীন বা টায়েড তহবিল। পানীয় জল ও স্যানিটেশন প্রকল্পে এই টাকা খরচ করতে হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলাগুলিকে এই তহবিলের বরাদ্দ পেতে গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জমা দিতে হয়। বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয় আনটায়েড বা নিশ্বর্তাধীন তহবিলে।
সেক্ষেত্রেও গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বাধীনতা রয়েছে। তাদের এই বরাদ্দ অনুমোদন পেতে তাদের পছন্দ মতো প্রকল্প বছরের গোড়ায় নিয়ম করে জমা দিতে হয়। যা মূলত গ্রামীণ পরিকাঠমোগত বিকাশে খরচ করতে হয়। কোনও পঞ্চায়েত বেতন, প্রশাসনিক কাজে বা পরিবহণ সংক্রান্ত কাজে এই টাকা খরচ করতে পারে না। এলাকার সমষ্টিগত উন্নয়নের স্বার্থেই এই টাকা খরচ করতে হয়।
নবান্ন বলছে এই মুহূর্তে এর মধ্যে শর্তাধীন তহবিল বা টায়েড ফান্ড খরচ না হয়ে জেলাগুলিতে পড়ে রয়েছে ১৬৪৫ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে জেলাগুলিকে এই তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এই টাকা গ্রামীণ পানীয় জল,স্যানিটেশনের কাজে খরচ করার কথা। শুধুমাত্র গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পে পঞ্চায়েত ভিত্তিক অনুমোদন নিয়েও জেলাগুলি ১০৭৮ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনি। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও জেলাগুলিতে পরে রয়েছে ৫৬৭ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। দেখা গিয়েছে,পাঁচ জেলা বরাদ্দ অর্থের ৫০ শতাংশের কম খরচ করেছে। এই জেলাগুলি হল মুর্শিদাবাদ,উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা,পশ্চিম বর্ধমান এবং নদীয়া।
পানীয় জল ও স্যানিটেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রকল্পের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় টাকা থাকার পরও কেন তা খরচ হচ্ছে না-এই প্রশ্নই উঠে এসেছে প্রশাসনিক মহলে। মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের এব্যাপারে বার বার সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশেও স্টেট রুরাল লাইফহুড মিশন বা আনন্দধারা প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির কাজের অগ্রগতি নিয়েও ক্ষুব্ধ নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আনন্দধারা প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে নতুন দু’লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যমাত্র বেঁধে দিয়েছিলেন। নভেম্বর পর্যন্ত সেই লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ পূরণ করতে পারেনি।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়