আরও পড়ুন: জুমলাবাজি, শকুনি, স্বৈরাচারী...'অসংসদীয় শব্দ' বাছল মোদি সরকার! তুমুল বিতর্ক
এই মেট্রো যাত্রার তো এক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ, তাই যত না কাজের সূত্রে লোকে মেট্রো চড়ছে, তার থেকে অনেক বেশি লোক অনুভব করছেন রোমাঞ্চ। আট থেকে আশি, সকলের মুখেই নতুন মেট্রো যাত্রা নিয়ে আলোচনা। কথা হল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্মী অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁর অফিস করুণাময়ী, তিনি দমদমের বাসিন্দা। পথে শিয়ালদহ যুক্ত হওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। বলছেন, ‘‘১৯৮৪ সালে যখন এসপ্ল্যানেড থেকে তখনকার ভবানীপুর (যার বর্তমান নাম নেতাজি ভবন) পর্যন্ত মেট্রো লাইন চালু হল, তখন আমি প্রথম দিনের যাত্রী ছিলাম। এর পর দমদম থেকে লাইন জুড়ে গেল মেট্রোর, সেই যাত্রারও প্রথম দিনের যাত্রী ছিলাম আমি। আজ শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভের যাত্রা শুরু হল, সেখানেও প্রথম দিনের যাত্রী আমি। ভাল লাগছে।’’ হেয়ার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র অনিন্দ্যর মুখে ছিল তৃপ্তির ভাব। তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন স্মৃতি। মেট্রোর যাত্রা নিয়ে কত মজার সব গল্প কথা, বলছিলেন তিনি। সেই শুনে কথা বলে উঠলেন আরও এক সহযাত্রী। বললেন, কলকাতা মেট্রোর প্রথম যাত্রার টিকিট এখনও আমার কাছে রাখা আছে। বাঙালি সাধারণত স্মৃতি হাতড়ে আনন্দ পায়, এ যেন সেই স্মৃতির ময়দানে খেলে বেড়ানোর এক সূবর্ণ সুযোগ।
advertisement
শুধু স্মৃতির আনাগোনা ভিড় করে রইল মেট্রো যাত্রায়, তা নয়। পদ্মা সেতুর সময় যে মন করে দেখা গিয়েছিল ভ্লগারদের ভিড়, মেট্রোর প্রথম দিনের যাত্রাতেও তেমনই ভিড় রইল ভ্লগারদের। কেউ স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করলেন লাইভ, তার পর পুরো স্টেশন ঘুরে একে বারে ট্রেনে উঠে বসার আসন দেখিয়ে শেষ করলেন ভ্লগ। আর এমনিতে, মানে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেও ছিল ছবি তোলা, ভিডিও করার হিড়িক। আট থেকে আশি, আগে স্টেশনে ঢুকে এক বার নিজের স্মার্ট ফোনে মুহূর্তে বন্দি করার কথা ভুলছেন না কেউই। যেন ইতিহাসের পাতায় নিজের উপস্থিতির প্রমাণ রেখে যাওয়ার সুপ্ত বাসনা পূর্ণ করে নেওয়ার চেষ্টা।
আরও পড়ুন: ধুতি দিয়ে বাধা, পুড়ে ছাই গোটা শরীর! পাশে কাগজে লেখা...শিউরে ওঠা ঘটনা রাণীচকে
অনেক কষ্ট, অনেক যন্ত্রণা রোজ ভিড় করে এই মধ্যবিত্ত জীবনে, তবু তার মধ্যে জেমস টেলিস্কোপের তোলা তারাদের ছবি যেমন মানুষকে এখনও অবাক করে, তেমনই অবাক করে আশে পাশে ছড়িয়ে থাকা প্রযুক্তির আশ্চর্য কীর্তিকলাপও। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এই আংশিক যাত্রাপথ যেন সেই দিককেই নতুন করে উন্মোচন করে দিয়ে গেল। যেন শহরবাসীর কাছে এই আকালেও এল এক গর্বের দিন, এক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ। যে শিশু নতুন মেট্রোর কামরায় ছুটোছুটি করে অজান্তে উদযাপন করল নতুন পথে প্রথম মেট্রো যাত্রার দিনটিকে, বোধহয় কোথাও, সেও আত্মস্থ করল এক ইতিহাসের মুহূর্তকে। যে ইতিহাসের অংশ হয়ত ৩০০ পেরিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ শহরটিও।