কলকাতা: ৩২ হাজার চাকরি থাকবে? নাকি ফিরবে ২৬ হাজারের স্মৃতি৷ হাইকোর্টের বুধবারের রায়ের দিকে তাকিয়ে দমবন্ধ করে অপেক্ষা করছিলেন ২০১৪ সালের পরীক্ষায় প্রাথমিকে চাকরিপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা৷ অবশেষে মিলল স্বস্তি৷ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করে শিক্ষকদের চাকরি বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ৷
advertisement
একক বেঞ্চের নির্দেশ বাতিল করল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্র ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, চাকরি পাওয়ার ৯ বছর পরে যদি তা চলে যায়, তাহলে তার বড়সড় প্রভাব ফেলবে সেই সমস্ত পরিবারে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১২ মে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় ৩২০০০ চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছিলেন৷
কলকাতা হাইকোর্টের এদিনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জানান, ‘আজকে মহামান্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে অভিনন্দন জানাই। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বাতিল হয়েছে। ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রইল। শিক্ষকদেরও সতত শুভেচ্ছা। সত্যের জয় হল।’
মামলার টাইমলাইন ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে প্রাথমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়৷ তারপরে হয় টেট৷ সেই টেট-এর ফলাফলের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শুরু হয় ইন্টারভিউ৷
তারপরে, ২০১৭ থেকে ২০১৯, প্রায় ১৪ দফায় ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীর নিয়োগ করা হয়৷ এরপরেই ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ সালে বেনিয়মের অভিযোগে মামলা হয় হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে৷
প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ ওঠে। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালের নিয়োগের আইন মানা হয়নি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও সিলেকশন কমিটি ছিল না, থার্ড পার্টি এজেন্সি প্যানেল তৈরি করেছিল, অ্যাপটিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়নি, অ্যাপটিটিউট টেস্টের কোনও গাইডলাইনই ছিল না, অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়, কাট অব মার্কস নিয়ে উপযুক্ত তথ্য ছিল না বোর্ডের কাছে,শূন্যপদের অতিরিক্ত নিয়োগ হয়।
যদিও,প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে রাজ্য সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। রাজ্য যুক্তি দেয়, দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই। তবে কিছু বেনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করে। পরে তা সংশোধনও করা হয়েছে বলে দাবি করে রাজ্য।
১২ মে ২০২৩, ৩২ হাজার চাকরি বাতিল করে সিঙ্গল বেঞ্চ, নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেয়৷ ১৯ মে ২০২৩, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ৷ তবে, নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়ার নির্দেশ বহাল রাখে৷
মে-জুন ২০২৩, প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে৷ ২২ জুলাই ২০২৩, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ফেরায় সুপ্রিম কোর্ট৷ তারপর, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, হাইকোর্টের শেষ হয় ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি৷ আজ, ৩ ডিসেম্বর ছিল রায়৷
