এই প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, 'আসলে পোস্ত চাষের অনুমতি না দেওয়া নিয়ে হয়তো এবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ আনবেন মুখ্যমন্ত্রী।এটা হয়ত তারই ইঙ্গিত।
পোস্ত চাষ করতে চেয়ে আগেও কেন্দ্রের কাছে অনুমতি চেয়েছে রাজ্য। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২ মে কেন্দ্রের কাছে পোস্ত চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য। যদিও, রাজ্যের সেই আবেদনে কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের অনুমোদন পেতে আবার চিঠি দিল রাজ্য।
advertisement
আরও পড়ুন: রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পুলিশে বড় রদবদল, বদল হল কলকাতা পুলিশেও
আজ বিধানসভায় খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের বাজেট ডিমান্ড সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, 'আমরা সবাই পোস্ত ভালবাসি। কী উত্তরবঙ্গ, কী দক্ষ্মিনবঙ্গ- পোস্ত খেতে কে না ভালবাসে? তাই, আমি কেন্দ্রের কাছে আবার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছি। অন্য রাজ্য যদি চাষের অনুমতি পেতে পারে আমরা পাব না কেন?'
রাজ্য কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩ মার্চ এই মর্মে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিবকে আবার চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছেন, 'রাজ্যের মানুষের চাহিদা মেটাতে রাজ্য সরকার তার কৃষি খামারে নিয়ন্ত্রিত ভাবে পোস্ত চাষ করতে চায়। যেহেতু, ভোজ্য পোস্তর সঙ্গে মাদকাসক্তির উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত আফিমের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এই চাষে কোনও আপত্তি থাকা উচিত নয়।'
এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'আমরা তো খোলামেলা চাষের কথা বলছি না। আমরা বলেছি রাজ্যের কৃষি খামার গুলিতে উপযুক্ত নিরাপত্তায়, নিয়ন্ত্রিত ভাবে চাষের সুযোগ দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রী চান খাদ্যের বিষয়ে রাজ্য কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ন হোক। বীজের অভাবে, আলু থেকে পেঁয়াজ এমন অনেক কিছু যা আমাদের বাইরের রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। এখন রাজ্যের কৃষি খামার গুলিতে উন্নত গবেষণার ফলে আমরা রাজ্যের চাহিদার অনেকটাই পূরন করতে পেরেছি। পোস্তর ক্ষেত্রেও রাজ্যের চাহিদা প্রায় সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন। সবটাই আমাদের আমদানি করতে হয় ভিন রাজ্য থেকে। আমরা চাই সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে চাষ করতে। এতে আপত্তি থাকবে কেন? বিশেষত, যখন দেশের আরও কয়েকটি রাজ্যকে পোস্ত চাষের অনুমোদন দিচ্ছে কেন্দ্র।'
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের তিনটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মোট ২২ টি জেলার কয়েকশো কৃষককে শর্ত স্বাপেক্ষে পোস্ত চাষের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্র। এই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখেই রাজ্যে পোস্ত চাষের দাবিতে আবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: 'কখনও ভাঙা, কখনও গুড়ো!' কেন্দ্রের চাল নিয়ে বড় অভিযোগ মমতার
যদিও, ভোজন রসিক বাঙালির 'পোস্ত প্রেম' চরিতার্থ করতেই রাজ্য সরকার পোস্ত চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, এমনটা মনে করেন না অনেকেই। কারণ, আজ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষনে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে বলেন, রাজ্যের এই আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেই, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষক থেকে শুরু করে বন্ধ চা বাগান কিম্বা বন্ধ কারখানার প্রায় তিন কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দিতে মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু, রাজ্যের আয় বলতে তো জিএসটি-ই সম্বল। কেন্দ্রের উচিত এই চালের টাকা রাজ্যকে দেওয়া।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পোস্ত চাষের অনুমতি পেলে তাতে শুধু রাজ্যের মানুষের খাবার হিসাবে পোস্তর চাহিদাই মিটবে না, পোস্ত চাষ করে রাজ্যের কোষাগারে অর্থাগমের সম্ভবনাও রয়ছে। সম্ভবত, সেই সম্ভবনার কথা মাথায় রেখেই নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।