এই ইস্যুতে আজ নবদ্বীপে 'ধিক্কার সভা' করতে চলেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। শুধু নবদ্বীপেই নয়, এই ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে মতুয়া অধ্যুষিত জেলায় একই রকমের ধিক্কার সভা করার পরিকল্পনা করেছেন শান্তনু ঠাকুর।
আরও পড়ুন: 'ত্রিপুরায় কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি ছিল' জোটকে আক্রমণ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার
advertisement
২০১৯ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপির ১৮ টি লোকসভা আসনের মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ ও রাণাঘাট আসন জিতেছিল বিজেপি। ২১- এর বিধানসভা ভোটে রাজ্যের ২১ টি মতুয়া প্রধান আসনে বিজেপি ৯টি এবং তৃণমূল ১২টি আসনে জয়লাভ করে। এই আসনগুলি মূলত নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগণায়। বিধানসভা ভোট পরবর্তী বিজেপির সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মতুয়া ঘনত্ব বেশি এমন আসনে বিজেপির প্রভাব অক্ষুন্ন থাকলেও, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের গড়িমসিতে হতাশ মতুয়া সমাজ।
কেন্দ্রের এই গড়িমসির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার।রাজ্য নেতৃত্বকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েই, অসীম বলেছেন, ২৪- এর লোকসভা ভোটের আগে মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবি মেনে সিএএ লাগু না হলে, এলাকার মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবেন না তিনি। কিন্তু, রাজ্যে এনআরসি বা সিএএ লাগু করা নিয়ে কেন্দ্র মুখে কুলুপ এঁটে রয়ছে। আর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ফের জোরের সঙ্গে বলেছেন, 'রাজ্যে এন আর সি করতে দেব না।' এই আবহেই মতুয়া প্রধান হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের নাম বিকৃতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে কাল নবদ্বীপে সভা করতে চলেছেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ও বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন: হলদিয়া মেলায় আমন্ত্রণ পেলেন না দিব্যেন্দু অধিকারী, ‘ওসব ভাবার সময় নেই’, বললেন তিনি
সভার আগে, গতকালই অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর মতুয়াদের ইচ্ছাকৃত ভাবে আপমান করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন। শান্তনুর দাবিকে সমর্থন করেছে বিজেপিও।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই রাজনীতির অঙ্ক কষা চলছিল। কিন্তু, আচমকা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ এবং ঠাকুরবাড়ির সদস্য মমতাবালাও শুভেন্দু,শান্তনুর সুরে সুর মেলানোয় নতুন মাত্রা পেল কালকের সভা। তবে, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মমতাবালার বক্তব্যকে কোন গুরুত্বই দিতে চান না। জ্যোতিপ্রিয় বলেন," কোনভাবে হয়তো মুখ ফস্কে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু, মতুয়ারা জানে মমতা বন্দোপাধ্যায় তাদের জন্য কী করেছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায় মতুয়াদের শ্রদ্ধা করেন। এসব করে বিজেপি মতুয়াদের থেকে মমতাকে দূরে সরাতে পারবেন না। "
২০১৯ -এর লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের মতুয়া ভোট দলের ঝুলিতে ভরতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীকে সক্রিয় হতে দেখেছিল রাজ্যের মানুষ। মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে কৈলাস পৌঁছে গেছিলেন ঠাকুরবাড়ির অন্দরে। ভোট প্রচারে এসে ঠাকুরবাড়ি গিয়ে বড়মার পা ছুঁয়ে প্রণাম জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি, শাহের মুখ থেকে নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস শুনেছিল রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ।
তারও আগে ২০১৬-এ বিধানসভা ভোটের মুখে,তৃণমূলের টিকিটে পুত্র সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করা যাবে না বুঝে, রাজ্য বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি রাহুল সিনহার হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। বনগাঁ কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থীও হন সুব্রত। কিন্তু, সুব্রত নির্বাচনে হেরে যাবার পর মঞ্জুল আবার ফিরে যান তৃণমূলে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সেদিক থেকে, মতুয়া ভোট পেতে তৃণমূল কিম্বা বিজেপির এই রাজনীতি নতুন কিছু নয়। কিন্তু, তাতে ঠাকুরবাড়ির বাইরে ওই এলাকায় দলের কতটা উপকার হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়ছে দুই দলেই। যদিও, প্রকাশ্যে মতুয়া আবেগ হারানোর ভয়ে মুখ খোলেন না কেউই। এবার, ২৪ এর লোকসভায় বনগাঁ সহ রাজ্যের মতুয়া আসন ধরে রাখতে দলের সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। তবে, এতে মতুয়া ক্ষেভে প্রলেপ পড়বে কি না তা বলা শক্ত।