কলকাতা: রাজ্য সরকারকে উৎখাত করতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে সিঁদ কাটতে চায় বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে আইএসএফ নেতা ও সংখ্যালঘু মুসলিম বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির গ্রেফতার ইস্যুকে হাতিয়ার করে গতকাল শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'আপনারাই তো এই সরকারকে এনেছেন। এখন আপনাদেরই ঠিক করতে হবে একে রাখবেন না সরাবেন।'
বিগত বিধানসভা ভোটে ৪৭. ৯৪ শতাংশ ভোটের সুবাদে ২১৩টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। আর ৩৮.১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৭৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। মাত্র ১০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল রাজ্যে সরকার গঠন করে। আর, বিজেপিকে বিরোধী দল হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'সস্তা ভাষায় রাজনৈতিক চিরকুট লেখা হয়েছে,' বিশ্বভারতী বিতর্কে সুর চড়ালেন কুণাল
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজ নওশাদ ইস্যুতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বার্তা দিতে গিয়ে এই অঙ্ককেই সামনে আনলেন বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, "বেশি নয়, মাত্র ১০ শতাংশ ভোট কমে গেলেই এই সরকার আর থাকবে না।''
গোটা দেশেই বিজেপির সংখ্যালঘু নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে। মুসলিম ধর্মীয় প্রধানদের কাছে গিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করতে দেখা গিয়েছে আরএসএস- এর শীর্ষ নেতা মোহন ভগবৎকে। দলীয় সাংসদদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে মুসলিমদের যে বঞ্চিত করেনি মোদি সরকার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা বোঝাতে হবে মুসলিমদের। বোঝাতে হবে, এদেশের রাষ্ট্রবাদী মুসলিমদের বিজেপি শত্রু বলে মনে করে না।
প্রকৃতপক্ষে, ২৪- এর লোকসভা ভোটে দলকে ক্ষমতায় ফিরতে গেলে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট ছাড়া যে সম্ভব নয়, সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদী। এর পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে এ রাজ্যও বিজেপির নেতাদের "ভোল বদলের " রাজনীতি। যাঁরা এতদিন সনাতন হিন্দু জাগরণের কথা বলে বাজার গরম করতেন, দিলীপ, শুভেন্দুর মতো পোড়খাওয়া নেতারা এবার বলতে শুরু করেছেন একেবারে বিপরীত কথা।
রাজ্যের ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে সরাতে গেলে তৃণমূলের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে হবে। ২০১৪ থেকে সেই লক্ষ্যে নানা কৌশল নিলেও সফল হতে পারেনি বিজেপি। ২০২১- এর বিধানসভা ভোটে রাজ্যে মোট অ-মুসলিম ভোটের ৫৪ শতাংষ পেয়েছিল বিজেপি। সিংহভাগ হিন্দু ভোট পেয়েও বিজেপিকে বিরোধী বেঞ্চে বসতে হয়েছে। আর, ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের ৯০ শতাংশের বেশি একা পেয়ে সরকার করে ফেলেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরাতে জোর টক্কর মোদি-মমতা-শাহর! তিন-তিনটে সভা খোদ প্রধানমন্ত্রীর! চড়ছে পারদ
এই আবহে, আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকির দল ও তাঁর নীতির বিরোধী হয়েও, নওশাদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে বিজেপি।
নওশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসন। সেদিনের ঘটনায় আইএসএফকে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। আজ সেই অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েই শুভেন্দু বলেন, 'আমাদের ধমকে চমকে কোনও লাভ হবে না। কেউ যদি রুখে দাঁড়ায়, আন্দোলন করে আমরা তাঁকে সমর্থন করে বেশ করেছি। আমরা বলেছি এনআরসি নিয়ে মুসলিমদের ভুল ভাঙাও।'
রাজনৈতিক মহলের মতে, সংখ্যালঘু মুসলিম নেতা নওশাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ মুসলিমদের বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি। এক দিকে, রাষ্ট্রবাদী মুসলিমরা বিজেপির শত্রু নয় - এই বার্তা দিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন করা। অন্যদিকে, ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে 'পীরজাদা নওশাদ' এর উপর হামলাকে ধর্মপ্রান মুসলিমদের ওপর হামলা হিসাবে তুলে ধরে আসন্ন আসন্ন লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে বাজিমাত করতে চায় বিজেপি।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।