এদিন, ফুলেশ্বরী বট পাকুড় তলা শিবমন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য বাপি চন্দ বলেন, '২০০৯ সালে আমাদের এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকেই মহাধুমধামে শিবরাত্রি পুজোর আয়োজন করা হয়। শিবরাত্রির দিন রাত পর্যন্ত জল ঢালার রীতি, তাই মহিলাদের সুরক্ষার্থে আমরা কমিটির প্রত্যেকে এখানে উপস্থিত থাকি। এলাকার স্থানীয় সহ পাশের পাড়ার বহু মানুষ এদিন পুজো করতে এই মন্দিরে আসেন।' পাশাপাশি পুজো কমিটির সম্পাদক শুভঙ্কর গুহ জানান, পুজো মানেই তো সম্প্রীতি, উল্লাস ও সকলে মিলে আনন্দে মেতে ওঠা। এতদিন করোনার বাড়বাড়ন্তে সেই অর্থে পুজো করা হয়নি। এবার করোনার গ্রাফ কিছুটা হলেও কম। তাই সেই পুরনো দিনের মতোই মহাধুমধামে পুজো হবে।
advertisement
বৈদিক পুরাণ মতে, এদিন শিব ও পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। আবার ঈশান সংহিতা অনুযায়ী, এদিনই প্রকট হয়েছিলেন মহাদেব। এদিন শিব ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে বেলপাতা, দুধ, ফুল, অক্ষত অর্পণ করেন। ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও জ্যোতিষ দৃষ্টিতে মহা শিবরাত্রির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে শিব আবির্ভূত হওয়ায় মহাশিবরাত্রি হিসেবে এই উৎসব পালিত হয়। সকলে এই ব্রত করতে পারেন। এই ব্রত পালন না করলে ব্যক্তি দোষ ও পাপের অংশীদার হয়। মহা শিবরাত্রি আবার ব্রতরাজ নামে খ্যাত। শিবরাত্রি যমরাজের শাসন ধ্বংস করে ও শিবলোকের পথে নিয়ে যায়। শাস্ত্র মতে, যাঁরা মহা শিবরাত্রিতে রাত্রি জাগরণ করেন, তাঁরা মোক্ষ লাভ করতে পারেন।
এদিন শিলিগুড়ি ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক (উঃ পূঃ) নামকৃষ্ণ দাস বলেন, 'আজ প্রভু শিবশঙ্করের বিবাহতিথি। আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও শিবরাত্রি পালন করছি। শিলিগুড়ি ইস্কনের প্রাঙ্গণে শিব মন্দির রয়েছে। যার স্থাপনা ২০০৪ সালে করা হয়। আর এই মন্দিরে ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকে শিবরাত্রি পুজো করা হয়।' নামকৃষ্ণবাবু আরও বলেন, 'আমাদের মন্দিরের বিশেষত্ব হল এখানে সম্পূর্ণ বৈদিক ও ভাগবত মতে পুজো করা হয়।' ইস্কন মন্দিরে হায়দরপাড়া থেকে ব্রত পালন করতে আসেন পল্লবী সাহা। তিনি News 18 Local -কে বলেন, 'আমি ৫-৭ বছর ধরে শিবরাত্রির ব্রত পালন করছি। আর প্রতি বছর আমি ইস্কন মন্দিরেই আসি জল ঢালতে। কারণ এখানে জলের সুব্যবস্থা আছে। মন্দিরে এসে হাত পা ধুয়ে বের গর্ভগৃহে প্রবেশ করা যায়। জুতো সহ আনুষাঙ্গিক জিনিস রাখারও বন্দোবস্ত আছে। আর সব থেকে বড় বিষয় হল সুপরিচালন ব্যবস্থা। সবটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, যা অন্য কোনও মন্দিরে গেলে দেখতে মেলে না। তাই আমি এখানেই আসি।'
এক পুরাকাহিনী অনুযায়ী, মহা শিবরাত্রির দিনে ৬৪টি স্থানে শিবলিঙ্গ প্রকট হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্র ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের নাম জানা রয়েছে। মহা শিবরাত্রির দিনে উজ্জৈনের মহাকালেশ্বর মন্দিরে দীপস্তম্ভ লাগানো হয়। শিবের অগ্নি-রূপী অনন্ত লিঙ্গের অনুভূতির জন্য এই দীপ স্তম্ভ লাগানো হয়। এই মূর্তির নাম লিঙ্গোভব, অর্থাৎ যা লিঙ্গ থেকে প্রকট হয়েছে। এমন লিঙ্গ যাঁর আদি বা অন্ত নেই। সঙ্গে এও কথিত আছে, শিবলিঙ্গে যে জিনিসগুলি অর্পণ করলে ভগবান শঙ্কর সমস্ত ইচ্ছাপূরণ করেন, তাহল;
• জল - মন্ত্র পাঠ করার সময় শিবলিঙ্গে জল নিবেদন করা আমাদের প্রকৃতিকে শান্ত এবং স্নেহময় করে তোলে।
• দুধ - দেবাদিদেবকে দুধ নিবেদন করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রোগ নিবারণ হয়।
• বেলপত্র - শিবলিঙ্গে বেলপত্র নিবেদন না করলে, শিবের পূজা সম্পূর্ণ হয় না। শিবলিঙ্গে বেল পাতা অর্পণ করলে ভক্তরা আশানুরূপ ফল লাভ করেন।
• ধুতুরা- ভগবান শিবকে ধুতুরা নিবেদন করলে কালসর্প, পিতৃ দোষের মতো রাহু সংক্রান্ত দোষ দূর হয়।
• ঘি - শিবলিঙ্গের গায়ে ঘি নিবেদন করলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
• সুগন্ধি - শিবলিঙ্গে সুগন্ধি লাগালে চিন্তা শুদ্ধ ও পবিত্র হয়। এর মাধ্যমে জীবনে অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকা যায়।