এরই মধ্যে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তীতে বেশ কিছু বিখ্যাত বিরিয়ানি প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সেই ব্যান্ডের বিরিয়ানি খেতে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। অথবা দীর্ঘক্ষণ বাস ট্রেন জার্নি করেও বিরিয়ানি স্বাদ নিতে যান মানুষ। খাবার প্রিয় বাঙালির সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর হতে চান সঞ্জু। প্রায় এক দশকের বিভিন্ন কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। শ্রমিক থেকে সেলসম্যান বা ম্যানেজারের দায়িত্ব সামাল দিয়েছেন। একাধিক কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে সঞ্জুর।
advertisement
আরও পড়ুন New CEO of Twitter: কমছে বিপুল বিজ্ঞাপনের আয়, দায়িত্ব ছেড়ে ট্যুইটারে নতুন সিইও নিয়োগ এলন মাস্কের
পাঁচ থেকে সাতটি জব এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট রয়েছে তাঁর কাছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর প্রথম বর্ষে কলেজে পড়াও শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎই সংসারে কালো মেঘের মতো দুর্দিন নেমে আসে বাবার মৃত্যুর পর। তারপর আর লেখাপড়া এগোয়নি। বাড়ির একমাত্র ছেলেকে সংসারের হাল ধরতে, বেরতে হয়েছিল কাজের সন্ধানে। বেশ কয়েক বছরে বিভিন্ন কর্মজীবন। তবে তার পছন্দের হল সেলসম্যান চাকরি। এই পেশাকে বেশ রপ্ত করে নেয় সঞ্জু। কাজের সুবাদে যেমন প্রমোশন হয়েছে। তেমনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়ে কাজ করেছে সঞ্জু। ইচ্ছে ছিল নিজে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হবার।
এই মতোই কাজের ফাঁকে শিলিগুড়ি থেকে মোমো তৈরি শেখা। দেশে ফেরে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নেয়। ভাল রান্নার সঙ্গে সেলসের উপযুক্ত অভিজ্ঞতা, এই দুই থাকলেই খাবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। গত এক বছর আগে, বাড়ি থেকে সামান্য দূরে ফটিকগাছি মোড়। সেখানেই একটি মোমো ‘ র কাউন্টার দেন সঞ্জু। তারপর সেখান থেকেই বিরিয়ানি বিক্রি করার চিন্তাভাবনা তৈরি হয়। ১ বৈশাখ থেকে নতুন অধ্যায় শুরু করে সঞ্জু। যেখানে বাজারে ১০০ থেকে দেড়শ টাকায় বিরিয়ানি বিক্রি হচ্ছে। সেই দামের বিরিয়ানি কিনতে পিছুপা হচ্ছেন। সে বিষয় মাথায় রেখে সকলের সাধ্যমত দামে বিরিয়ানি সঞ্জুর কাউন্টারে।
মাত্র ৫০ টাকয় এক প্লেট বিরিয়ানি দেওয়ার চিন্তাভাবনা। বিক্রেতা সঞ্জু কাঁড়ার জানান, নিজের এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানকে আগামী পাঁচ বছরের প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ। একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। সেই লক্ষ্য মাত্রায় কিঞ্চিৎ আশার আলো। সবে ৩০ দিন পার হয়েছে। প্রথম দিন কুড়ি থেকে পঁচিশ প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে ‘টুলু মোমো’ পথ চলা শুর। প্রায় এক মাস শেষে ‘টুলু মোমো ‘ কাউন্টারের বিরিয়ানি চাহিদা বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ প্লেট দাঁড়িয়েছে। ৫০ টাকায় বিরিয়ানি! তাও আবার চিকেন ও আলু প্রথম শুনলেই অবাক হন ক্রেতারা। ১০-১২ কিলোমিটার দূর থেকেই ক্রেতা আসছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু অর্ডারও পেয়েছেন বিরিয়ানির। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে শিলিগুড়ি বা পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ‘ টুলু মোমো ‘ বিরিয়ানি পেতে চেয়েছেন।
সেই সমস্ত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে আগামী দিনে হোম ডেলিভেরি করারও চিন্তাভাবনায় রয়েছে সঞ্জুর। কাউন্টারে আসা ৫০ টাকার বিরিয়ানি খেয়ে ক্রেতারা বলছেন বেশ সুস্বাদু। খুব বেশি তফাৎ নেই ১০০ বা ১৫০টাকার বিরিয়ানি সঙ্গে, পরিমাণও নেহাত কম নয়। ক্রেতা সৌরভ জানান, প্রায় এক মাস আগে সবে টুলু মোমো কাউন্টারে বিরিয়ানি বিক্রি শুরু। তখন আমরা কিনে খেয়েছি। সে সময় সেভাবে চাহিদা ছিল না। এখন বিরিয়ানি নিতে হলে লাইন দিতে হয় বেশ কিছুক্ষণ। আবার কোনদিন তো পাওয়াই যায় না। সঞ্জু জানান, টুলু মোমো’ কে একটি ব্র্যান্ড পরিণত করার লক্ষ্যে নেমেছি। মোমো বিক্রি করে প্রথম শুরু হয়েছিল কাউন্টার। বিরিয়ানিতে ও বেশ ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি। কাস্টমার রিটার্ন আসছেন। এখন মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তটা হয়তো ঠিকই নিয়েছিলাম।
রাকেশ মাইতি





