কখনও শিব, কখনও কালী অথবা পৌরাণিক নানান চরিত্র- মুখে রং মেখে নিজেদের ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। থিয়েটার বা যাত্রাপালার মঞ্চ নয়, মেঠো পথ, গৃহস্থের বাড়ি এগুলোই তাঁদের অভিনয়ের পোডিয়াম। সামান্য কিছু পারিশ্রমিক মেলে, সঙ্গে মুঠো চাল, আলু, কখনও তাও নয়। এই বহুরূপী শুধুমাত্র গ্রামবাংলার নয়, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের এক প্রচলিত লোকশিল্প। এরফলে একসময় বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বহুরূপীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মকে মাথায় রেখে তাঁদের রুচির সঙ্গে হয়তো আপস করতে হয়েছে। তবুও এই লোকশিল্প মরে যায়নি। যেমন হুগলি জেলায় রয়েছে একটি বহুরূপী গ্রাম। যেখানে গ্রামের মানুষের জীবিকা বহুরূপী সাজা। হুগলির তারকেশ্বরে জোৎসম্ভু গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার যুক্ত এই পেশার সঙ্গে। প্রত্যেকদিন সকালে মুখে রং লাগিয়ে নানা ধরনের রঙিন পোশাক পরে বেরিয়ে পড়েন কাজের উদ্দেশ্যে।
advertisement
আরও পড়ুন : পুজোর ছুটিতে ইতিহাসের সাক্ষী হতে ঘুরে আসুন নবাবের শহর মুর্শিদাবাদ
আরও পড়ুন : চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা বীরভূমের বিশেষভাবে সক্ষমদের
কখনও কালী, কখনও দুর্গা,আবার কখনও বা শিব নিজেদের অবিকল দেবতাদের মতন রূপান্তরিত করে নেন বহুরূপীরা। ভোর হতে না হতেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় প্রত্যেকের। প্রথমে মুখে তেল লাগিয়ে তার উপরে রং করতে শুরু করেন তারা নিজেরাই। সারাদিন হেঁটে লোকজনদের মনোরঞ্জন করে এই বহুরূপী মানুষেদের উপার্জন হয় মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কখনও বা তার ও কম। সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার বাড়ি ফেরেন রাতে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেও কখনও কখনও ভৎসনার শিকার হতে হয় এই মানুষগুলোকে।
ধীরে ধীরে বিলুপ্তর পথে এই গ্রামের বহুরূপী পেশা। নতুন প্রজন্মের কেউই আর এই পেশার মধ্যে আসতে চাইছেন না। একসময় এই গ্রামে প্রায় প্রতিটি ঘরেই একজন করে বহুরূপী মানুষকে পাওয়া যেত। বর্তমানে তা কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ জনের মধ্যে।এই বিষয়ে এক বহুরূপী দীপঙ্কর হালদার বলেন, বহুরূপী সাজাটা তাদের কাছে এক ধরনের শিল্প। নিজের জীবন থাকতে তিনি শিল্প থেকে কিছু পাবেন না। তবে আগামী প্রজন্ম কি করবে তা তিনি জানেন না। মানুষের মনোরঞ্জন করিয়ে রোজগার করা তার পূর্বপুরুষদের থেকে শেখা।





