সেদিন শীতের রাত! ঘড়িতে আটটা ছুঁই ছুঁই! হাইকোর্টের এক কর্মী জজসাহেবের কাছে গিয়ে বললেন, 'স্যর একটু বাইরে থেকে আসছি!' শুনে পেশকার বললেন, 'জজসাহেবের এজলাসের পেছন দিকটায় যে পেচ্ছাবখানা আছে, ওখানটিতে যেয়ো না ভুল করেও!' কর্মীটি মুখে 'যাব না' বললেও সেখানেই গেলেন। বিশাল করোডর... একেবারে শেষ প্রান্তে তাকিয়ে তাঁর মনে হল, কে যেন দাঁড়িয়ে আছে! কৌতূহলী মনে এগিয়ে যেতে লাগলেন ভদ্রলোক ! হঠাৎ শুনতে পেলেন, অন্ধকার ফুঁড়ে নূপুরের আওয়াজ! কে যেন হেঁটে আসছে! ঝম ঝম ঝম! তারপর... ? নিস্পলক হয়ে গেল ভদ্রলোকের চোখ! মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে যেতে থাকত হিমশীতল এক স্রোত! তিনি স্পষ্ট দেখছেন, তারদিকে এগিয়ে আসছে একটি মেয়ের কবন্ধ মূর্তি ...! আচমকা সে ঘুরে দাঁড়িয়ে জাস্টিস আমির আলি সাহেবের স্মৃতিফলকের আড়ালে লুকিয়ে গেল!
advertisement
ভদ্রলোকের মাথার ভিতর সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যেতে লাগল! একটা চিৎকার বেরতে গিয়েও গলার কাছে দলা পাকিয়ে গেল! সংজ্ঞা হারিয়ে তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন। এদিকে ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে পেশকার মশাই তাঁকে খুঁজতে বেরলেন। করিডরে এসে দেখেন ভদ্রলোক মাটিতে চিৎপাত হয়ে পড়ে রয়েছেন, আর তার সঙ্গেই যে দৃশ্যটা দেখলেন তাতে পেশকারের মনে হল তার মাথার তালু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অবশ, হিমশীতল হয়ে গিয়েছে, এক পা চলার ক্ষমতা আর নেই...!
সেদিন পেশকার দেখেছিলেন, একটা ঝলমলে ঘাগড়া পরা কবন্ধ মেয়ে ভদ্রলোকের মুখে জলের ছিটে দিচ্ছে! পেশকারকে দেখেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল!
পেশকার মশাইয়ের মনে পড়ে গিয়েছিল অনেকদিন আগে শোনা এক ফিসফিসানি কাহিনি! এখানে জজসাহেবের আদালতে একটা দরখাস্ত জমা পড়েছিল--'হামার শরিল কিছু সময় ধরে ভালো যাইতেছে না! মহামান্য আদালত নজদিকে হামার নিবেদন হ্যায় কী, কমন প্রস্টিটিউটের রেজিস্টারি থেকে হামার নাম কাটিয়া দেওয়া হউক!'
দরখাস্তটা দিয়েছিলেন তখনকার জনপ্রিয় গণিকা নিস্তার! তিনি বাঁধাবাবু শালিখরামের কাছে ধরা দিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু শালিখরাম ছিল এক শয়তান। তাঁর খোঁজে পুলিশ এসে নিস্তারকে পাকড়াও করে নিয়ে যায়। নিস্তার তো সত্যিই সাধারণ গণিকা নন, তাঁর ঘরে অন্য বাবু আসেন না। সেজন্যই তিনি ওই তালিকা থেকে তাঁর নাম কেটে দিতে বলেছিলেন! ভেবেছিলেন বাঁধাবাবু শালিখরামকে বিয়ে করে গণিকা নাম ঘুচিয়ে ফেলবেন! এদিকে মামলা শুরু হয়েছে! শপিনা গেল নিস্তারের নামে! কিন্তু তিনি হাজিরা দেন না! পুলিশ শালিখরামের বাড়িতে এসে নিস্তারের পচাগলা দেহ উদ্ধার করল, কিন্তু মুন্ডুটা লোপাট! পরনে বাইজির ঘাগরা, পায়ে রুপোর তোড়া। গোটা শরীরে মাছি ভনভন করছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮৮১ সালের ২ জুন।
বিচারে শালিখরামের ফাঁসি হল। আজও হয়তো শালিখরামকে ভুলতে পারেননি নিস্তার! আজও হাইকোর্ট চত্বরে নিস্তারের কবন্ধ শালিখরামকে খুঁজে বেড়ায়...
ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ১ পড়তে ক্লিক করুন--ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ১: একটা হাত ঝুলছে পালকির বাইরে, কাঁধ থেকে বইছে রক্ত...
ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ২ পড়তে ক্লিক করুন--ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ২: সমস্ত নিস্তব্ধতাকে চিরে একটা তীব্র আওয়াজ উঠেছিল--চিঁহি চিঁহি...
ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ৩ পড়তে ক্লিক করুন-ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ৩: কে যেন তিনতলার কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে...! খট খট খট !
.quote-box { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #767676; padding: 15px 0 0 90px; width:70%; margin:auto; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box img { position: absolute; top: 0; left: 30px; width: 50px; }
.special-text { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #505050; margin: 20px 40px 0px 100px; border-left: 8px solid #ee1b24; padding: 10px 10px 10px 30px; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
@media only screen and (max-width:740px) {
.quote-box {font-size: 16px; line-height: 24px; color: #505050; margin-top: 30px; padding: 0px 20px 0px 45px; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.special-text{font-size:18px; line-height:28px; color:#505050; margin:20px 40px 0px 20px; border-left:8px solid #ee1b24; padding:10px 10px 10px 15px; font-style:italic; font-weight:bold}
.quote-box img{width:30px; left:6px}
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
}
