ভূতে পাওয়া কলকাতা, কিস্তি ১: একটা হাত ঝুলছে পালকির বাইরে, কাঁধ থেকে বইছে রক্ত...
Last Updated:
#কলকাতা: ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, জাতীয় গ্রন্থাগার... যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সে সারা দেবে বেশি ' বেলভেডেয়ার প্যালেস' ডাকেই! ১৭ শতকের শেষের দিকে এটি দিল্লীশ্বর আজিম ওসমানের সাময়িক নিবাস ছিল, পরে হাত বদল হয়ে নয়া মালিক হন বিখ্যাত-কুখ্যাত মিরজাফর। এটাই ছিল তাঁর নবীনা সুন্দরী মহিষী মণিবেগমের খাসমহল। কী এক ব্যাপারে ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস একবার সেবাড়িতে এসেছিলেন ! প্রৌঢ় নবাবের পাশে নবীনা উদ্ভিন্নযৌবনা মণিবেগমকে দেখে তাঁর মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল...বুড়োটার পাশে যুবতী! বরং তাঁর পাশেই বেশি মানাত! এরপর সেই প্রাসাদে ঘনঘন আসাটাই তাঁর সমস্ত কাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়াল। মণিবেগমও সাহেবকে দেখে উন্মনা! একদিন নবাবের গলা জড়িয়ে ধরে আদর করে বললেন, ''আমাকে একটা নিভৃত মহল গড়ে দেবে... যেখানে আমি নির্জনে এবাদত করতে পারব!'' আর্জি মঞ্জুর হল! চুমু খেয়ে, নরম স্পর্শ দিয়ে মণিবেগম শর্ত করে নিলেন এই খাসমহলে সপ্তাহে একদিন তাঁকে সম্পূর্ণভাবে পাবেন নবাব! বাকি ক'টা দিন তাঁর কাটবে আল্লাহর আরাধনায়! একদিন কী যে মনে হল নবাবের, বাঁধা দিনের বাইরে তিনি মণিবেগমের খাসমহলে ঢুকে গেলেন কোনও এত্তেলা না দিয়েই! এবং ঘরে ঢুকেই দেখলেন অসংবৃতা মণিবেগম হেস্টিংসের বক্ষলগ্না! এমনই ছিলেন হেস্টিংস, পরধন ও পরনারীতে এতটুকু শ্রান্তি ছিল না ! আর এই স্বভাবের জন্যই তাঁর জীবনে নেমে এল এক বিশাল বিভ্রাট !
কলকাতায় তখন এক ডাকসাইটে সুন্দরীর বাস...মাদাম গ্র্যান্ড। তিনি থাকতেন আলিপুর লেনের রেড গার্ডেন হাউজে ! সেদিন ২০ নভেম্বর ১৭৭৮ ! জজ কোর্টের পাশে, বেলেভেডেয়ার রোডে ওয়ারেন হেস্টিংস-এর বাসস্থান হেস্টিংস হাউসে বল নাচের আসর বসালেন লাটসাহেব! আর সেখানেই নেমন্তন্ন করে বসলেন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস গ্র্যান্ডকে। নিমন্ত্রিত ছিলেন হেস্টিংস-এর বন্ধু ও কাউন্সিলর ফিলিপ ফ্রান্সিসও ! সেখানেই মিসেস গ্র্যান্ডের প্রেমে পড়লেন ফ্রান্সিস! বাদ গেলেন না হেস্টিংসও! মাদাম গ্র্যান্ডের স্মামী ফ্রান্সি গ্র্যান্ড বাড়িতে না থাকলেই সেখানে গুটগুটি হাজির হতেন ফ্রান্সিস! যেতেন হেস্টিংসও। তবে লাটসাহেব বলে যখনতখন যেতে পারতেন না। ফ্রান্সিসের সেই অসুবিধে ছিল না। হেস্টিংস, ফ্রান্সিস... দু'জনই হাবুডুবু খাচ্ছিলেন মিসেস গ্র্যান্ডের প্রেমে । কিন্তু শ্রীমতী যে কার দিকে ঝুঁকে তা বোঝা যেত না!
advertisement
হেস্টিংস থাকতে মিসেস গ্র্যান্ডকে প্রেম করবে ফ্রান্সিস? এও কী সম্ভব? মেনে নিতে পারলেন না হেস্টিংস! তিনি ফ্রান্সিসকে ডুয়েলে আহ্বান করলেন! ১৭৮০ সালের ১৭ আগস্ট! ময়দানে শুরু হল লড়কে লেঙ্গের আসর! দু'জনেই গুলি ছুড়ছেন! হেস্টিংসের ছোড়া একটি গুলি ভেদ করে গেল ফ্রান্সিসের কাঁধের ভিতর! একটা পালকিতে করে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু আদিগঙ্গায় তখন জোয়ারের বান ডেকেছে...। পার হতে পারল না পালকি। রক্তাক্ত ফ্রান্সিস মারা গেলেন পালকির ভিতরই!
advertisement
advertisement
তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে! বেলভেডেয়ার বাড়িতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগার ! একদিন সেখানে
রাতের বেলা ডিউটিতে থাকা গার্ড দেখতে পেলেন, একটা পালকি ভিতরের রাস্তা দিয়ে হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে, দুটি দরজাই খোলা! কোনা থেকে চাঁদের আলো পড়েছে সেই খোলা দরজায়। পালকির মেঝেতে একজন সাহেব শুয়ে আছেন! একটা হাত ঝুলছে পালকির বাইরে, কাঁধ থেকে ঝরঝর করে রক্ত বয়ে চলেছে! তবে কি বাগানটায়...
advertisement
গোটা চত্বরে জনমানবটি নেই! চোখের সামনে দিয়ে সেই পালকিটা চলে যাচ্ছে...! হাত ঝুলছে, রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে! অন্য রক্ষীরা ছুটে এসে দেখলেন ওই নৈশপ্রহরীর দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছে!
হেস্টিংস হাউস তৈরি হয়েছিল ১৭৭৭ সালে। এখানে অনেক কীর্তি রেখে বিলেতে ফিরে গেলেন লাটসাহেব। সঙ্গে জাহাজে তাঁর বিপুল মালপত্র! তারমধ্যে একটা কালো বাক্সও ছিল! কিন্তু পরে সেই বাক্সটা আর খুঁজে পাননি হেস্টিংস! তাঁর সঙ্গে ভারত ছেড়েছিলেন স্ত্রী ম্যারিয়ানও, যাঁর আগের স্বামী ছিলেন ব্যারন ইমহফ! তাঁর সুন্দরী স্ত্রীকে ওয়ারেন হেস্টিংস ফুঁসলে নিয়েছিলেন। তখন ম্যারিয়ন গর্ভবতী, ইমহফের সন্তান তাঁর পেটে! তাঁর নাম ছিল জুলিয়াস। বড় হয়ে জুলিয়াস ভারতে ফিরে হেস্টিংস হাউসেই ওঠেন এবং তিন ছেলেকে রেখে সেখানেই মারা যান ! জুলিয়াস ও পরবর্তী কালে তাঁর তিন ছেলেকে ওই বাড়িতেই সমাধিস্থ করা হয়।
advertisement
কিন্তু ম্যারিয়নের পূর্বাতন স্বামী ব্যারন ভারত ছেড়ে যাননি। এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিশুতি রাতে অনেকেই দেখেছেন হেস্টিংস হাউসে কবরের সারির মাঝে কে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন! কে তিনি ? ব্যারন ইমহফ ? রক্ষীরা বহুবার দেখেছেন,
মাঝরাত্তিরে এক সাহেব হেস্টিংস হাউসের ঘরে ঘরে ঘুরে কী যেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ক্ষিপ্র হাতে উলটেপালটে দেখছেন জিনিসপত্র ! তিনিই বা কে ? ওয়ারেন হেস্টিংস ? কী খুঁজছিলেন? সেই কালো বাক্সটা? জানা যায়, সেই বাক্সে নাকি ছিল গোপন কিছু লেখা আর রহস্যময় নানা ছবি। সেসব খুঁজতেই তিনি রোজ ঘোড়ার গাড়ি চেপে হেস্টিংস হাউসে আসতেন!
ওই বাড়িতে ছিল একটা পিয়ানো! আলিপুরের জেলের কারাবন্দিরা রাতের গভীরে বহুবার শুনতে পেয়েছেন পিয়ানোর মূর্ছনা....quote-box { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #767676; padding: 15px 0 0 90px; width:70%; margin:auto; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box img { position: absolute; top: 0; left: 30px; width: 50px; }
.special-text { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #505050; margin: 20px 40px 0px 100px; border-left: 8px solid #ee1b24; padding: 10px 10px 10px 30px; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
@media only screen and (max-width:740px) {
.quote-box {font-size: 16px; line-height: 24px; color: #505050; margin-top: 30px; padding: 0px 20px 0px 45px; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.special-text{font-size:18px; line-height:28px; color:#505050; margin:20px 40px 0px 20px; border-left:8px solid #ee1b24; padding:10px 10px 10px 15px; font-style:italic; font-weight:bold}
.quote-box img{width:30px; left:6px}
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
}
Location :
First Published :
February 26, 2019 10:09 PM IST

