বিশ্বজুড়ে করোনা টিকাকরণ একদিকে যেমন চলছে, তেমনই করোনা বিধি মানতেও বলা হচ্ছে (EXPLAINED | Omicron Symptoms)। বিভিন্ন জায়গায় করোনা বিধি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। কোথাও চলছে জরিমানা তো কোথাও সচেতনতামূলক প্রচার। তবুও মানুষের মধ্যে এই বিধি নিষেধ মানা নিয়ে বিশেষ করে মাস্ক পরা নিয়ে ঢিলেঢালা মনোভাবই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে এদেশে। আর এই সব কিছুর মাঝেই মাথাচাড়া দিয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (Omicron Varient) (EXPLAINED | Omicron Symptoms), যা রীতিমতো মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক থেকে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার।
advertisement
আরও পড়ুন: ভারতে ওমিক্রনের থাবা, শিশুদের জন্য কতটা ভয়ের ? কীভাবে মোকাবিলা করবেন? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ভারতে কোভিডের এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেয মহারাষ্ট্রে ২ জন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। গুজরাতের সুরাতেও দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত ১ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত। এই নিয়ে দেশে মোট ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১।
দেশে ওমিক্রনের পরিস্থিতি দেখে সম্প্রতি নীতি আয়োগের সদস্য ডক্টর ভি কে পল একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, "দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব কমতে শুরু করেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও কমছে। কিন্তু যেভাবে মানুষ মাস্ক পরায় অনীহা দেখাচ্ছে তাতে ফের সংক্রমণ বাড়তে পারে যেকোনও সময়ে। হয় তো ফের করোনার বিপদ সীমায় প্রবেশ করছি আমরা।"
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মাস্ক পরা তো অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, বেশি ভিড়ে না যাওয়া, মাস্ক বার বার না খোলা এবং হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করাও জরুরি। এরপরও করোনায়, বিশেষ করে ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এই নতুন ভ্যারিয়ান্টের উপসর্গও আগের ভ্যারিয়ান্টগুলির থেকে আলাদা। ফলে চিনতে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে এবং চিকিৎসা এর জন্য দেরিতে শুরু হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মিউটেশন বিপজ্জনক! করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কে বিশেষজ্ঞরা
প্রথমেই মনে রাখা দরকার, ওমিক্রনের সংক্রমণের গতিবিধি ও লক্ষণ ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের মতো নয়। এই দুই ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু বর্তমানে ডেল্টা এবং ওমিক্রন দুই'ই রয়েছে তাই ডেল্টায় আক্রান্ত না ওমিক্রনে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে যাচ্ছে। ফলে চিকিৎসকদেরও চিকিৎসা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এই নতুন ভ্যারিয়ান্ট আসার পর বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে।
ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী কি করোনার উপসর্গে পার্থ্যক্য দেখা দিতে পারে?
প্রত্যেকবার যখনই করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট আসছে তখনই এটি আরও শক্তিশালী হয়ে আসছে এবং সংক্রমণ ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে, বাড়ছে এর প্রখরতা বা সিভিয়ারিটিও।
মনে করা হচ্ছে, করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনও একইভাবে অনেক বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে আর বিশ্বে এটাই ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-র রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে কোভিডের এই নতুন ভ্যারিয়ান্টটি পাওয়া গিয়েছে মোট ৬৩ টি দেশে এবং সংক্রমণের হারের নিরিখে এটি ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে, যদি উপসর্গ ও এই ভাইরাসের গুরুতর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা যায়, তা হলে দেখা যাবে এটি ডেল্টার থেকে এক্ষেত্রে কম শক্তিশালী ফলে এই নিয়ে কম চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।
এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে ওমিক্রনের উপসর্গ মারাত্মক নয় -
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, SARS-CoV-2 এর নতুন এই ভ্যারিয়ােন্টে একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে যাঁরা আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বা করোনা টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করে ফেলেছেন তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, এতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। এক্ষেত্রে ডেল্টা অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল এবং এতে মৃত্যুর হারও তাই বেশি ছিল।
এবিষয়ে WHO বলছে, চিকিৎসাগত দিক থেকে ওমিক্রনের গুরুতর প্রভাব নিয়ে এখনও পর্যন্ত খুবই সীমিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের থেকে এই ভ্যারিয়েন্ট কম ভয়ঙ্কর। পাশাপাশি EU/EEA থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতেও দেখা গিয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উপসর্গ কম দেখা দিয়েছে এবং সেভাবে বাড়াবাড়িও হয়নি। তবে, সবটাই প্রাথমিক স্তরের তথ্য। এই ভ্যারিয়ান্ট কী প্রভাব ফেলতে পারে, কতোটা মারাত্মক হতে পারে, তা সময়ই বলবে এবং এর জন্য আরও তথ্যের প্রয়োজন।
এখনও পর্যন্ত যে ক'জন এই ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে প্রভাব তেমন বেশি নয়। এমনকী সাউথ আফ্রিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ার পারসন Dr Angelique Coetzee, যিনি প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পেয়েছেন, তিনিও জানিয়েছেন, এই ভ্যারিয়ান্টের শক্তিশালী প্রভাব তেমন নেই।
আরও পড়ুন: করোনার বিরুদ্ধে নাকে দেওয়া স্প্রে-ই কি কোভ্যাক্সিনের বুস্টার ডোজ হিসেবে কাজ করবে? জানুন বিশদে
ওমিক্রনের উপসর্গ হতে পারে গা- হাত-পা ব্যথা -
ওমিক্রন খুব বেশি সংক্রামক হলেও এর উপসর্গ তেমন একটা বেশি নয়।
কোভিডের এই ভ্যারিয়ান্টের সবচেয়ে বড় উপসর্গ হল গা-হাত-পা ব্যথা। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগের জেনেরাল প্র্যাক্টিশনার Dr Unben Pillay এবিষয়ে বলছেন, রাতে ঘাম হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টের অন্যতম উপসর্গ। তবে, এর সঙ্গেই অত্যন্ত বেশি গা- হাত-পা ব্যথা হওয়া এর প্রধান উপসর্গ।
এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, গা- হাত-পা ব্যথা ইনফেকশনের লক্ষণ সঙ্গে ইমিউন সিস্টেম আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ।
করোনার চেনা উপসর্গের থেকে একটু আলাদা ওমিক্রন ভ্যরিয়েন্টের উপসর্গ-
অনেক সময়ই করোনা আক্রান্ত হলে জ্বর হয় না বা শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে না কিন্তু নাকে গন্ধ ও মুখে স্বাদ উধাও হয়। এই থেকেই এতদিন সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারছিলেন তিনি করোনায় আক্রান্ত কি না। তবে, করোনার এই ভ্যারিয়ান্টে এই উপসর্গ অনেকাংশেই কম দেখা যাচ্ছে।
Dr Angelique Coetzee জানাচ্ছেন, ওমিক্রনে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের এই উপসর্গ সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে, তাপমাত্রা শরীরের বাড়তে পারে এবং নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ওমিক্রনের অন্যান্য উপসর্গ-
গা- হাত-পা ব্যথা, দুর্বলতা, গলায় খুশখুশানি, রাতে ঘাম বেশি হওয়া বা গরম লাগা ইত্যাদি কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের উপসর্গ। এগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।