#কলকাতা: মারণ করোনাভাইরাসের (Coronavirus) সঙ্গে লড়াই করতে এবং কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকাকরণ বা ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি জোরকদমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু দেশে ইমিউনিটি (Immunity) এবং কোভিড ১৯ (Covid-19) ভ্যাকসিনের (Vaccine) নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বুস্টার ডোজ (Booster Dose) দেওয়ারও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিগত কয়েক মাস ধরে আমাদের দেশেও বুস্টার ডোজ নিয়ে জোরদার আলাপ-আলোচনা চলছে।
সম্প্রতি ভারত ১০০ কোটি টিকার মাইলফলক ছুঁয়েছে। এক দিকে এই খবর কিছুটা স্বস্তির দিলেও আমাদের কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, করোনাভাইরাস এখনও পুরোপুরি চলে যায়নি। ও-দিকে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কতটা শক্তিশালী থাকবে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই বুস্টার ডোজের কথা ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। আসলে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও কিছুই জানি না। এমনকী ওই বুস্টার ডোজ কতটা কার্যকরী, সেই বিষয়েও কোনও তথ্য এখনও হাতে আসেনি।
আরও পড়ুন: বুকে ব্যথা আর জ্বালা-জ্বালা ভাব! হার্ট অ্যাটাক না হার্টবার্ন, বোঝা যাবে কী ভাবে?
এই অবস্থায় আমাদের দেশের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিনের (Covaxin) তৃতীয় ডোজ আনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। যা অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় অনেকটা আলাদা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এটা কি আদতে সত্যি? এই বুস্টার ডোজ কি কোভিড ১৯-এর ঝুঁকি কমিয়ে আশার আলো দেখাবে?
ভারতে বুস্টার শট-এর সম্ভাবনার বিষয়ে কী কী জানা যাচ্ছে?
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কোভ্যাক্সিনের বুস্টার শট বাজারে আসতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি একটি প্যানেল আলোচনায় ভারত বায়োটেক-এর সিএমডি এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. কৃষ্ণ এল্লা এই গুঞ্জন আরও উস্কে দিয়েছেন। ভারতে বুস্টার শটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। ড. এল্লা জানিয়েছেন, ফার্মা মেজর ইতিমধ্যেই ন্যাজাল ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। আসলে সাবেকি কোভ্যাক্সিন শটের (যেটা পেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়) তুলনায় এই ন্যাজাল ভ্যাকসিন (Nasal Vaccine) আলাদা। যদিও এর নির্দিষ্ট সময় কাল সম্পর্কে সে রকম কিছুই জানানো হয়নি। ভারত বায়োটেক (Bharat Biotech)-এর সিএমডি জানান, এই সংস্থার ন্যাজাল ভ্যাকসিনগুলির মধ্যে বুস্টার ভ্যাকসিনও থাকতে পারে। যা আরও বেশি নিরাপত্তা দেবে এবং এই ভ্যাকসিনগুলি ইন্ট্রামাসকুলার ভ্যাকসিনের তুলনায় বেশি কার্যকর।
ন্যাজাল ভ্যাকসিন কি সব কিছু বদলে দিতে পারবে?
কোভিড যুদ্ধে সব থেকে বড় আবিষ্কার হল, ন্যাজাল ভ্যাকসিন। জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য বাজারে নানান রোগের ন্যাজাল ভ্যাকসিন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নাকের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ এটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দারুণ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে বলে প্রমাণিত। বাড়বে ইমিউনিটিও। গবেষকরা মনে করেন, নাকের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা উপস্থিত ভাইরাসের কোষগুলিকে প্রাথমিক স্তরেই কার্যকর ভাবে ধ্বংস করতে পারবে। অর্থাৎ ভাইরাস দেহে প্রবেশ করে শ্বাসনালীতে থাকাকালীনই তাকে অঙ্কুরে বিনাশ করে দিতে পারবে ন্যাজাল ভ্যাকসিন। ফলে দেহের অন্য অংশে আর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। এই ভাবে বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমবে এবং উপসর্গের মাত্রার ভয়াবহতাও হ্রাস পাবে।
আরও পড়ুন: ওপেন হার্ট সার্জারি নয়, হৃদরোগীর নিরাময়ে ট্রান্সক্যাথিটার এওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট আদতে কী?
কিছু গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, ন্যাজাল ভ্যাকসিন অনেকটা সাধারণ ইমিউনিটির (কোভিড ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার পর যে সুরক্ষা তৈরি হয়) মতোই সুরক্ষা দেবে। ভারতে শিশুদের জন্যই প্রথম ন্যাজাল ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে বলে খবর। সব দিক থেকে এই ধরনের ভ্যাকসিন উপযোগী হয়ে উঠবে। শুধু তা-ই নয়, এর ব্যবহারও হবে খুবই সহজ। সিরিঞ্জ অথবা ন্যাজাল স্প্রে-এর মাধ্যমে নাসিকা গহ্বরের মধ্যে এই ভ্যাকসিন প্রবেশ করানো হবে। আর এই ভ্যাকসিন যাঁরা দেবেন, তাঁদের বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে না। আর কম সময়ে কার্যকরী ভাবে বহু মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে সময়কাল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ডা. এল্লা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, ন্যাজাল ভ্যাকসিন শীঘ্রই বাজারে আনতে সংস্থা আপ্রাণ খেটে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে অতিরিক্ত এই বুস্টার ডোজ নেওয়ার সময়কালটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পর বুস্টার ডোজ নেওয়া সব থেকে ভালো। তবে এটা কবে থেকে পাওয়া যাবে, তার পর জনসাধারণের কাছে পৌঁছনোর জন্য আগে সরকারের অনুমতি- এই সব বিষয়ও রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলিতে পুরোপুরি টিকাপ্রাপ্তদের জন্য অতিরিক্ত বুস্টার শট দেওয়ার কাজের গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে যাঁদের অনেক আগে ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগকেই বুস্টার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, ভ্যাকসিন ডোজ সম্পূর্ণ হওয়ার ৫-৬ মাস পর থেকে ইমিউনিটির মাত্রা কমে আসছে। আর তার জন্য একটা সুরক্ষাকবচ চাই, আর সেটাই হল বুস্টার শট।
এটা কি আসন্ন তৃতীয় অথবা চতুর্থ ঢেউ রুখতে পারবে?
ভারতের পরিস্থিতির নিরিখে বুস্টার ডোজের বিষয়ে কথা বলতে গেলে বলতে হবে যে, আগামী কিছু মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মাসগুলিতে আমরা দেখতে পাব যে, কোভিডের বিরুদ্ধে মানুষের ইমিউনিটি ক্রমশ কমে আসছে। এই মাসগুলিতে যদি বুস্টার শট দেওয়া যায়, তা হলে খুবই ভালো হবে। কারণ এটাই মানুষের ইমিউনিটি বাড়ানোর সব থেকে ভালো উপায় এবং সময়। আর বিশেষ করে যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে অথবা ইমিউনিটি কম, তাঁদের জন্য তো বুস্টার ডোজ আরও ভালো হবে।
আরও পড়ুন: দাপট বাড়ছে মশার, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া-চিকুনগুনিয়ার পার্থক্য এবং প্রতিরোধ জেনে সতর্কতা নিন!
বুস্টার ডোজ ছাড়াও কি কোভিডের সঙ্গে লড়াই করা যাবে?
সাম্প্রতিক কালে দেশের গড় কোভিড কেস নিচের দিকে নামছে। তার ফলে অনেকেই মনে করছেন যে, বিশ্বব্যাপী মহামারীর সব থেকে খারাপ অবস্থাটা হয় তো এর পরেই এসে পড়বে। যদিও সময়ে টিকাকরণ এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে আমাদের অনেকটাই সাহায্য করেছে। এই রোগ সংক্রান্ত জটিলতা থেকে অনেকটাই সুরক্ষা দিচ্ছে এবং তুলনামূলক ভাবে নিরাপদে আমরা বাইরে বেরোতেও পারছি। তবে এটা এখনই বলা যাচ্ছে না যে, আদৌ আমরা বুস্টার ডোজের উপর কতটা নির্ভর করতে পারি। অথবা মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই জারি রাখতে কতটা পরিমাণে বুস্টার ডোজ প্রয়োজন, সেই ব্যাপারেও সে রকম কোনও তথ্য হাতে আসেনি। যদিও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, ভ্যাকসিন বারবার দিলে অথবা ডোজ আপগ্রেড করলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তবে এটা নিশ্চিত যে, যদি বেশি সংখ্যক মানুষ ইমিউনিটির দিক থেকে সুরক্ষিত থাকে, অথবা তাদের দেহে ভালো পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে, তা হলে সে ক্ষেত্রে সুরক্ষাও দীর্ঘমেয়াদী হবে। আর সেটা একমাত্র বুস্টার ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমেই সম্ভব। এমনটা হলে তবেই বিশ্বব্যাপী মহামারীকে অনেকটাই নিরস্ত করা যাবে।
এ ক্ষেত্রে কি কোনও রকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে?
ভারতীয় বাজারে কবে থেকে বুস্টার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, সেটা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। এমনকী বুস্টার ভ্যাকসিন ডোজের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সীমাবদ্ধতা হল, ক্লিনিক্যাল ডেটা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব। ক্লিনিক্যালি দেখা গিয়েছে যে, এই ধরনের ডোজ ইমিউন রেসপন্স বাড়াবে এবং আমাদের দেহে পর্যাপ্ত ইমিউনিটিও গড়ে তুলবে। তবে বিশেষজ্ঞরা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশ চিন্তিতই। তাঁদের বক্তব্য, এই বুস্টার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। ফলে এটা এখনই প্রত্যেকের জন্য ব্যবহার না-ও করা হতে পারে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।