কিন্তু এখনও অবধি যা জানা গিয়েছে, তাতে ওমিক্রনের প্রভাবগুলি কম গুরুতর। ওমিক্রনের কারণে হালকা সংক্রমণ হচ্ছে, বেশির ভাগ সংক্রমিতকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ওমিক্রন প্রজাতি অত্যন্ত সংক্রমণযাগ্য হলেও ডেল্টার (Delta Variant) মতো বিপজ্জনক নয়। এটি তুলনায় হালকা সংক্রমণ সৃষ্টি করছে। যাই হোক, এটি বলা যায় যায় না যে, জটিলতাগুলি একেবারেই হবে না। ওমিক্রনের উপসর্গগুলি যতটা ক্ষতিকারক, তার চেয়েও বেশি বিরক্তিকর হতে পারে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না-করা হয়, তবে এটি শ্বাসকষ্টের অন্যান্য জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
advertisement
ওমিক্রনের উপসর্গগুলিকে কি হালকা ভাবে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারি?
ওমিক্রন সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত পর্যন্ত জ্বর, কাশি, সর্দি এবং শরীরে ব্যথা-সহ ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার আরভি হাসপাতালের চিকিৎসক পবন যাদবের (Pavan Yadav) মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওপিডি স্তরেই রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা (Oxygen Levels) কমে যাওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় কম। তবে তিনি কোমর্বিডিটি থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের এই প্রজাতির বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন এবং বয়স্কদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার কথা বলেছেন।
মণিপাল হাসপাতালের (Manipal Hospital) চিকিৎসক রাজেন্দর সাইনি (Rajender Saini)-র মতে, ওমিক্রনের উপসর্গ যতই হালকা হোক না-কেন, সুরক্ষায় ঢিলেমি দিলে হবে না। একটা ভাইরাসের প্রজাতির তীব্রতা সম্পর্কে খুব তাড়াতাড়ি ভবিষ্যদ্বাণী করা ঠিক নয়। এটাও অনুমান করা ঠিক নয় যে, আগামী দিনেও ওমিক্রনের কারণে হালকা সংক্রমণ হবে।
কাশি হল সব কোভিড প্রজাতির জন্য একটি সাধারণ উপসর্গ: কোভিড একটি শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, যার কারণে হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, সংক্রমণের তীব্রতার হার বেশি হতে পারে। যার ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। যতটা জানা গিয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে যে, নতুন করোনাভাইরাস প্রজাতি ওমিক্রন এখনও পর্যন্ত এটি উপরের শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। যার ফলে চুলকানি, গলা ব্যথা এবং কাশির (Cough) মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শুষ্ক কাশি কোভিডের সাধারণ উপসর্গ। ল্যানসেট-র (Lancet) গবেষণা অনুসারে, ৬০-৭০ শতাংশ উপসর্গযুক্ত করোনাভাইরাস রোগীদের মধ্যে প্রাথমিক উপসর্গ হিসাবে শুষ্ক কাশি দেখা যায়। যেহেতু ওমিক্রন গলায় বহুগুণ বেড়ে যায়, তাই এটি গুরুতর নিউমোনিয়া সৃষ্টি করবে না। ওমিক্রনের উপসর্গগুলি ডেল্টার তুলনায় হালকা, তবে তুলনায় ৭ গুণ সংক্রমণযোগ্য। এর অর্থ এটি সম্ভবত বেশি লোককে সংক্রমিত করতে পারে, তবে গুরুতর সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। তবে, এই বিষয়ে আরও জানতে অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
শুষ্ক, ক্রমাগত কাশি মোকাবিলা করার উপায়:
কাশি অবশ্যই অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক হতে পারে। কাশি হল শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার করার জন্য শরীরের প্রক্রিয়া। শ্লেষ্মা, পরাগ, ধোঁয়া বা অ্যালার্জেনের মতো বিরক্তিকর উপাদানগুলিকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক ক্রিয়া। ডাক্তারি চিকিৎসা এবং প্রাকৃতিক, উভয় উপায়েই এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। ডাক্তার সাইনির মতে, শুষ্ক ও ক্রমাগত কাশির ক্ষেত্রে অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের (Flu virus) মতোই চিকিৎসা করা যেতে পারে। গার্গলের সাহায্যে, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ ব্যবহার করে কেউ স্বস্তি পেতে পারে এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পেতে পারে।
হাইড্রেটেড থাকা (শরীরে জলীয় ভাব), পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পরিপূরকগুলির সাহায্যে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করা কাশির চিকিৎসায় কিছু প্রাকৃতিক উপায়। যাইলহোক, গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ইনহেলার/ডিকনজেস্ট্যান্ট লজেন্সের মতো ওষুধের পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: করোনায় দু'বছরের কম বয়সি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে কেন?
কাশির চিকিৎসার জন্য কি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত?
কোভিড একটি ভাইরাল রোগ এবং এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, ভাইরাল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিকের (Antibiotics) কোনও প্রভাব নেই। অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় কার্যকর। নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত ব্যবহারের নেতিবাচক দিক:
প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার মানুষের শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় বা অনুপযুক্ত। অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার ব্যয়বহুল। এ ছাড়াও এটি ব্যাকটেরিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের কারণে ব্যাকটেরিয়া চিকিৎসার জন্য অজেয় হয়ে ওঠে এবং মানিয়ে নিতে শেখে। উপরন্তু, অ্যান্টিবায়োটিক মাথা ঘোরা, বমি, অ্যালার্জি, শ্বাস নিতে অসুবিধা-সহ আরও অনেক কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন: কখন কোভিড টেস্ট করা প্রয়োজন, কখন নয়? জেনে নিন
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ নয়:
করোনার উপসর্গের মতো উপসর্গ দেখা দিলেই অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খান। এটা মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খেলে ফুসফুসের বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণও ঘটতে পারে। এ ছাড়াও, এটি অবাঞ্ছিত অন্য সংক্রমণকেও ডেকে আনতে পারে। মেডিক্যাল অফিসারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া, রক্ত পরীক্ষা বা রেডিওলজিক্যাল ইমেজিংয়ের মতো বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান না-করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা আরও বলেছেন যে, স্টেরয়েড হালকা সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয় না। তাই এটা নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি আরও জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ওমিক্রন আশীর্বাদ না অভিশাপ? এর সঙ্গেই কি শেষ হতে চলেছে অতিমারি?
মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি:
টিকা নেওয়া হোক বা না-হোক, বর্তমানে সবাই সংক্রমণ প্রবণ। প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু এবং বয়স্ক, সবাই করোনভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ ভাইরাসটিই অত্যন্ত সংক্রামক। যারা বয়স্ক এবং আগে থেকেই কোনও রোগে আক্রান্ত বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তাই কোভিড বিধি ও অন্য সব সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। নতুন প্রজাতি ওমিক্রনও অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য এবং টিকা প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে পারে। এটা বিবেচনা করে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, মাস্ক (Mask) পরতে হবে। অন্য লোকেদের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। টিকা অবশ্যই নিতে হবে। যাঁরা বুস্টার ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের এটা অবশ্যই নিতে হবে।