করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মারণ ভাইরাসের মোকাবিলায় মানুষকে সতর্ক থাকতে এবং সময় মতো টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। আবার নতুন ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গেই বুস্টার ডোজ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (US) এবং ইজরায়েলের (Israel) মতো কিছু দেশে পুরোদমে বুস্টার ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু হচ্ছে সেখানে ভারতে বুস্টার ডোজের অনুমোদনের বিষয়টি এখনও বিবেচনার স্তরে রয়েছে। কারণ ভারতের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে অনেকের শরীরে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে এবং কোভিড ভ্যাকসিনের দু'টি ডোজ যথেষ্ট সুরক্ষা দিচ্ছে।
advertisement
আরও পড়ুন: যে কোনও আরটি-পিসিআর টেস্টে কাজ না-ও হতে পারে, ওমিক্রন সনাক্ত করতে দরকার নয়া টেস্ট কিট!
যদিও অনেকেই যুক্তি দেন যে সময়ের সঙ্গে টিকা থেকে পাওয়া শরীরের ইমিউনিটি কমে যায়। আর যাঁদের আগে থেকে কোনও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় দুর্বল ইমিউনিটি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি থাকতে পারে। একই সঙ্গে, নতুন প্রজাতির কোভিড ভাইরাস ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তাই ভারত যদি বুস্টার শট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটি ফ্লু-র টিকার মতো প্রতি বছর নিতে হবে কি না তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাস বুস্টার শট কখন নেওয়া উচিত
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতামত এই যে বুস্টার শট কোভিড-১৯ টিকার দু'টি ডোজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। টিকা থেকে পাওয়া শরীরের ইমিউনিটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে অতিরিক্ত শট শরীরে কার্যকরী ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। একই সঙ্গে শরীরের অ্যান্টিবডির সংখ্যাও বাড়তেও পারে। তাই বুস্টার ডোজ নেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় শরীরে ইমিউনিটির মাত্রা দিয়ে বোঝা যাবে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যান্টিবডির মাত্রা নির্ণয় করা যেতে পারে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, যাঁরা ফাইজার-বায়োএনটেকের ২টি শট নিয়েছেন তাঁরা দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পরে কোভিড-১৯ বুস্টার শট নিতে পারেন।" একইভাবে এক একটি শটের মধ্যে বেশি বিরতি দিলে শরীরে বেশি ভালো ইমিউন প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে দ্রুত বুস্টার ডোজ নিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
আরও পড়ুন: ভারতে ওমিক্রনের থাবা, শিশুদের জন্য কতটা ভয়ের ? কীভাবে মোকাবিলা করবেন? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বাড়তে থাকা নতুন ভ্যারিয়ান্ট উদ্বেগের কারণ
প্রথমে ডেল্টা, এখন ওমিক্রন, সব মিলিয়ে কোভিড-১৯-এর একের পর এক নতুন প্রজাতি আসতে থাকায় ভ্যাকসিন বুস্টারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কারণ দু'টি ডোজ নেওয়া থাকলেও ঝুঁকি পিছু ছাড়ছে না। এদিকে এখন নতুন, ক্রমশ বহুরূপে পরিবর্তিত ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্তদের মধ্যে সামান্য উপসর্গই দেখা গিয়েছে, তবে আক্রান্তের সংখ্যার গ্রাফ রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
বর্তমানে, অনেক ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে যে কোম্পানিগুলি ভ্যাকসিন টুইক করতে পারে বা সম্ভবত একটি নতুন ওমিক্রন-নির্দিষ্ট শট তৈরি করতে পারে, যা কোম্পানিগুলির মতে নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হবে। যদিও অনেক জল্পনাই এখন আলোচনার স্তরে রয়েছে।
ক্ষীয়মান ইমিউনিটির সমস্যা বাড়াতে পারে
ভারতে প্রায় এক বছর ৪৫ বছর বয়সীদের কোভিড-১৯ টিকা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীদেরও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস যে সময়ের সঙ্গে ভ্যাকসিন থেকে পাওয়া ইমিউনিটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে বুস্টার শট ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারে। যদিও এব্যাপারে এখনো কোনও জোরদার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কোভিড-১৯ বুস্টার শট কি নিয়মিত নিতে হবে?
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন হল আসল ভাইরাসের একটি অনুকরণ। ভ্যাকসিনের প্রকারের উপর নির্ভর করে, এমআরএনএ ভ্যাকসিন বা ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন, এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস কণা বা স্পাইক প্রোটিন সনাক্ত করতে এবং প্রয়োজনীয় প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করবে, যা পরে অ্যান্টিবডি তৈরির দিকে এগোয়। পরবর্তীকালে, যখন একটি আসল ভাইরাস শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে আক্রমণ করে, তখন এই অ্যান্টিবডি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
শরীরে ভ্যাকসিন থেকে হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় বলে বুস্টার শটগুলি ইমিউনাইজিং অ্যান্টিজেনে একজন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম ফের কার্যকর করে তোলে। যদিও এক্ষেত্রে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই যে ভ্যাকসিনের ইমিউনিটি সময়ের সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়, তবে যদি করোনার টিকা অন্যান্য ভাইরাল টিকার মতো হয় তবে তা নিয়মিত উন্নত করতে হবে। এক্ষেত্রে বুস্টার শট প্রতি বছর অতিরিক্ত বা বার্ষিক শট হিসাবে প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুন: নাগাল্যান্ডে হত্যাকাণ্ডের পরেই আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি উঠছে; জানুন কী আছে এই আইনে?
যাঁদের এখন কোভিড বুস্টার ডোজ প্রয়োজন
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মতোই বুস্টারও প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তি, স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুক্তভোগী এবং যাঁরা রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, অথবা ইমিউনোসপ্রেসেন্টসের মতো গুরুতর চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁদের দেওয়া হবে।
কোভিড-উপযুক্ত আচরণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ:
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের জীবনকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছে। মানুষ অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তাই নতুন প্রজাতি সামনে আসার পর কোভিড উপযুক্ত আচরণ (Covid-Appropriate Behaviour) মেনে চলা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। টিকা নেওয়া ছাড়াও মাস্ক পরা, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা, কোভিড উপযুক্ত আচরণ অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই ভারতে থাবা বসিয়েছে ওমিক্রন। তাই আমাদের অবশ্যই সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।