PCA ফ্রেমওয়ার্ক কী?
PCA হল কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তৈরি করা একটি ফ্রেমওয়ার্ক। যারা মূলত দুর্বল ব্যাঙ্কগুলির উপর নজর রাখে। মূলত কোনও ব্যাঙ্কের অবস্থা দুর্বল হলে সেই সব ব্যঙ্কগুলির উপর নজরদারি চালায় এবং যাতে সেই ব্য়ঙ্কগুলি সবল হয়ে উঠতে পারে তার চেষ্টা করে। ব্যবসার ক্ষেত্রে কী কী পদ্ধতি মেনে চলা উচিত এবং কোন পদ্ধতি মেনে ব্য়বসা করা দরকার সেই সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দেয় বিভিন্ন বিধি আরোপ করে।
advertisement
কবে থেকে PCA ফ্রেমওয়ার্ক চালু হয়েছিল?
প্রথম ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে PCA ফ্রেমওয়ার্ক শুরু হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডেরাল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন বা FDIC (US Federal Deposit Insurance Corporation) এর যে PCA ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে তার গঠন অনুসরণ করেই এখানকার PCA ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল। পাশাপাশি PCA-র উপর সম্পূর্ণ নজর রেখেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ওয়ার্কিং গ্রুপ অফ দ্য় ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি অ্য়ান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (FSDC) পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ফিনান্সিয়াল সেক্টর লেজিসলেটিভ রিফর্ম কমিশনের (FSLRC) বিভিন্ন নীতিও মানা হয়েছিল।
এর পর ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া PCA ফ্রেমওয়ার্কের পুনর্গঠন করে। এবং ২০১৭ সালে যে সব ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজন সেই সব ব্যাঙ্কের উপর PCA লাগু করে।
আরও পড়ুন: Stock SIP-তে বিনিয়োগ করলে সুবিধা কী? রইল বিশেষজ্ঞের মতামত!
কখন একটি ব্যাঙ্ক PCA তালিকায় ওঠে?
মোট তিনটি প্য়ারামিটারের ভিত্তিতে RBI নির্ধারণ করে কোন ব্যাঙ্কের নাম PCA তালিকায় থাকবে। প্রথমটি হল ক্য়াপিটাল টু রিস্ক ওয়েজড অ্য়াসেট রেসিও (capital-to-risk weighted assets ratio), নেট নন-পারফরমিং অ্য়াসেট (NPA), রিটার্ন অন অ্য়াসেট (RoA)। শুধুমাত্র কমার্সিয়াল ব্যাঙ্কগুলিকেই PCA তালিকায় তোলা যেতে পারে। কোনও সমবায় ব্যাঙ্ক বা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক এবং নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল সার্ভিস সংস্থাগুলিকে ওই তালিকায় তোলা যাবে না।
কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?
অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি CRAR বা (capital to risk-weighted assets ratio) ৯ শতাংশের নিচে নেমে যায় তখন রিজার্ভ ব্যঙ্ক সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে বলে ক্য়াপিটাল বা সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য। নতুন বাণিজ্যিক ও ডিভিডেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে রাশ টানা হয়। যেমন, ইন্টার ব্যাঙ্ক মার্কেট থেকে ধার নেওয়া বন্ধ করা হয়, রিয়াল এস্টেট সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে নিষেধ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
CRAR যদি ৬ শতাংশে নেমে যায়?
যদি ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায় এবং ৩ শতাংশের সমান বা তার থেকে বেশি থাকে সেক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের নতুন ম্যানেজমেন্ট বা বোর্ড গঠন করতে পারে। ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য় কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে পারে। এমনকী, মালিকানা পরিবর্তন করতে পারে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ করে দিতে পারে যাতে করে ওই ব্যাঙ্কটি অর্থনৈতিকভাবে আবার সবল হয়।
যদি ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়?
যদি কোনও ব্যঙ্কের CRAR ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায় তাহলে আগের পদক্ষেপগুলি তো নেওয়া হতেই পারে, তার সঙ্গে আরও কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যঙ্কের ক্ষেত্রে মোরোটোরিয়াম লাগু করতে পারে। এর পর এক বছরের মধ্য়েও যদি কোনও অবস্থার পরিবর্তন না হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের উপর কর দেওয়ার নতুন নিয়ম কী? বিশদে জানুন!
NPA (নন পারফরমিং অ্য়াসেট) লেভেল কী?
PCA তালিকায় নাম ওঠার জন্য় এটা দ্বিতীয় কারণ। যদি নিট NPA বেড়ে ১০ শতাংশের উপরে চলে যায় এবং ১৫ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে NPA যাতে আর না বৃদ্ধি হয় তার দিকে নজর রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যঙ্কের লোন পলিসির উপর নজরদারি চালায় RBI এবং ক্রেডিট রিস্ক পলিসির উপর পর্যালোচনা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
NPA যদি ১৫ শতাংশের উপরে উঠে যায়?
আগের সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সঙ্গে ব্য়ঙ্কের বোর্ডকে ডাকা হয় CPA নিয়ে আলোচনার জন্য়।
ROA কী?
ROA-র পুরো কথা রিটার্ন অন অ্য়াসেট। PCA তালিকায় নাম ওঠার জন্য় এটা তৃতীয় ধাপ। ROA যদি .২৫ শতাংশের থেকে কম হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্য়াঙ্ককে নতুন কোনও ব্য়বসা শুরু করতে নিষেধ করে RBI। পাশাপাশি ইন্টার ব্যাঙ্ক মার্কেট থেকে ধার নেওয়ার ক্ষেত্রেও রাশ টানা হয়।
PCA উঠে যাওয়ায় কী সুবিধা হল?
UCO ব্যাঙ্কের নাম PCA তালিকা থেকে বাদ যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক এবং ব্যাঙ্কিং সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মধ্য়ে একাংশের মত দীর্ঘ দিন ধরে ঋণ দান বন্ধ থাকার ফলে সেভাবে ব্যাঙ্কটি লাভের মুখ দেখতে পারেনি। কিন্তু সেই বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর এবার ঋণ দান প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ হবে। ফলে মুনাফা করতে সক্ষম হবে। অন্য় দিকে, আরও একটি অংশ এর সঙ্গে জানিয়েছে, PCA তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ফলে অনান্য় ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে।
PCA তালিকা তেকে নাম বাদ যাওয়ার পর পরই তরতরিয়ে উঠেছে UCO ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম। গতকাল প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে শেয়ারের দাম। গতকাল সকাল ১০টা নাগাদ বাজার খোলার আগে অর্থাৎ আগের দিন UCO ব্য়াঙ্কের শেয়ার দর ছিল ১৪.১৩টাকা। আর তার পরেই এই খবর প্রকাশ হতেই দাম হয় ১৪.৮৫ শতাংশ। যা ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি।
আরও পড়ুন: Explained: সৌর ঝড় কী? এটা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?
অন্য় দিকে, UCO ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে আরও একটি পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই ব্যঙ্কের ম্য়ানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ একজিকিউটিভ অফিসারের পদে দায়িত্বে ছিলেন অতুল কুমার গোয়েল। তাঁর মেয়াদ আরও ২ বছরের জন্য় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মেয়াদের শেষ দিন ছিল, ১ নভেম্বর ২০২১।