আরও পড়ুন-ইডেনে শেষ ম্যাচে নেই কোহলি, জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে বেরিয়ে গেলেন প্রাক্তন অধিনায়ক
এ নিয়ে দ্বিতীয় বার অভিনব আইপিএল নির্বাচনের ট্রায়ালে (IPL Selection Trials) অংশ নিয়েছিলেন। এর আগে চার বছর আগে তিনি ট্রায়ালে অংশ নেন। এই বছর, অভিনব পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দ্বারা পরিচালিত ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিল। উল্লেখযোগ্য ভাবে ট্রায়াল পরিচালনা করেনি এমন এক দলের দ্বারা বাছাই করা হয়েছিল তাঁকে। অভিনব বলেন, "চার বছর আগে আমি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (Mumbai Indians) ট্রায়ালে গিয়েছিলাম। এর পর আর কোনও দলের কাছে যাইনি। এই বছর আমাকে আটটি দল ডেকেছিল এবং আমি তাদের মধ্যে পাঁচটিতে যোগ দিয়েছিলাম। বাকি তিন দলের ট্রায়ালে যাইনি। পাঁচটি ট্রায়ালই ভালো হয়। কোথাও নেটে ব্যাট করেছি, কারও কারও ট্রায়ালে ম্যাচের উত্তেজনা ছিল। আবার অন্যটিতে আমি ব্যাট করার জন্য কয়েক ওভার পেয়েছি। সবটাই ছিল আমার ভূমিকার উপর ভিত্তি করে।"
advertisement
অভিনব এই বছর সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি টি-২০ (Syed Mushtaq Ali Trophy T20)-তে কর্নাটকের হয়ে অভিষেক করেছিলেন। অভিষেক ম্যাচেই তিনি সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৭০ রান করেন। ওই ম্যাচে ৫ নম্বরে নেমে অভিনব দুটি চার ও ছয়টি ছক্কা হাঁকান। ম্যাচটি ২ উইকেটে জিতে যায় কর্ণাটক।
আরও পড়ুন-Viral News: বিষাক্ত সাপ ! তাও আবার যাত্রীবোঝাই বিমানে, তার পর যা হল...
অভিনবের মতো বেশ কয়েক জন রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির (IPL franchise) প্রতিভা বাছাইকারী বা ট্যালেন্ট স্কাউটদের (Talent Scouts) প্রভাবিত করেছেন। মূলত অবসর নেওয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের দ্বারা গঠিত প্যানেল নতুন প্রতিভা খুঁজে আনে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির কয়েক জন হাই প্রোফাইল ট্যালেন্ট স্কাউটের মধ্যে রয়েছেন– টিএ সেকার (TA Sekar), কিরণ মোরে (Kiran More) এবং প্রবীণ আমরে (Pravin Amre)। আন্তর্জাতিক কিংবদন্তিদের মধ্যে জন রাইট (John Wright) আরও একটি নাম। সম্প্রতি অবসর নেওয়া ক্রিকেটার পার্থিব প্যাটেল (Parthiv Patel) এবং আর বিনয় কুমারকে (R Vinay Kumar) মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ট্যালেন্ট স্কাউট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
সিলেকশন ট্রায়াল:
প্রতিশ্রুতিমান তরুণদের ট্রায়ালের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি বিভিন্ন রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনগুলির (State Cricket Associations) সঙ্গে যোগাযোগ করে। ট্যালেন্ট স্কাউটদের দ্বারা তীক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করা ট্রায়ালগুলি হল ব্যবহারিক পরীক্ষার মতো। বিভিন্ন ম্যাচের পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করা এবং তাঁরা কী ভাবে চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করেন, কী ভাবে তাঁরা চাপ সামলান, কী ভাবে তাঁরা পাওয়ার-প্লে ওভারে খেলেন, তাঁরা কী ভাবে মাঝ-মাঠ পরিচালনা করেন ইত্যাদি বিষয় মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়াও ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে কতটা আক্রমণাত্মক বা কী ভাবে তাঁরা ৪ ওভারে ৪৫ রান বা ৪ ওভারে ৫২ রানের লক্ষ্যে পৌঁছন ইত্যাদি বিষয়ও মাথায় রাখা হয়।
এখনও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি কয়েক জন খেলোয়াড়কে দলে রাখে, যাঁরা নেটে বোলিং করেন। এর আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্য অ্যাসোসিয়েশনগুলি স্থানীয় ক্রিকেটারদের নেট বোলার হিসাবে সরবরাহ করত। এখন, বায়ো-বাবল আসায় দলগুলি তাদের নিজস্ব নেট বোলারদের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করে।
ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এক জন খেলোয়াড় বলেছেন যে, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া একটি ভালো অভিজ্ঞতা৷ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার এবং যিনি ভারতের জুনিয়র দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি প্রথমবারের মতো ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। নিলামে না-নেওয়ায় হতাশ হলেও সেই খেলোয়াড় বলেছেন, ‘‘ট্রায়ালের জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে আমি তাতে অংশ নিয়েছিলাম। এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল। আমি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী আমার ভূমিকা পালন করেছিলাম, এক বলে প্রায় দুই রান করেছিলাম এবং এক জন প্রতিভা স্কাউট আমাকে প্রশ্ন করেছিল যে, আমি কী ভাবে একটি পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। ট্রায়ালে অংশ নেওয়াতে আমার অভিজ্ঞতা আরও বাড়বে। এখন আমি জানি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি থেকে কী আশা করা যায় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। প্রথম দিকে, আমি যখন ট্রায়ালে ব্যাট করতে গিয়েছিলাম, তখন আমি জানতাম না কী ভাবে অ্যাপ্রোচ করতে হয়। আমি আমার কেরিয়ারে যা করেছি, সেটাই আমাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছে। তার পর, আমি আমার স্বাভাবিক খেলা খেলতে গিয়েছিলাম।"
ট্রায়ালে কী হয়?
সুতরাং, ট্রায়ালে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কী করে এবং সারা দেশ থেকে তাদের অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের কাছ থেকে তারা কী আশা করে? খেলোয়াড়দের ম্যাচের মতো পরিস্থিতি দেওয়া হয়। ওপেনারদের প্রথম ছয় ওভার খেলতে পাঠানো হয়, কিন্তু শেষ পাঁচ ওভার নয়। যদি সংশ্লিষ্ট ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে যান, তখন দেখা হয় তাঁরা কী ভাবে মাঝের ওভারগুলিতে খেলেন এবং কী ভাবে তাঁরা স্পিনারদের মোকাবিলা করেন, তাঁরা কি বাউন্ডারি মারতে পারেন? এটি একটা প্রক্রিয়া, যা সাধারণত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি অনুসরণ করে। ট্রায়ালে এক জন ব্যাটসম্যান আউট হলেও তিনি রোটেশন নীতির মাধ্যমে আবারও ব্যাট করেন।
পঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) সিইও সতীশ মেনন (Satish Menon) ব্যাখ্যা করেছেন যে, কী ভাবে তাঁর দল সিলেকশন ট্রায়ালে ঘরোয়া খেলোয়াড়দের নির্বাচন করে। তিনি বলেন, "একটি হল প্রচলিত পদ্ধতি। আমরা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, যারা উদীয়মান খেলোয়াড়দের তালিকা পাঠায়। অন্যটি হল আমাদের নিজস্ব ফিল্ড স্কাউট রয়েছে, যারা সব কিছু খতিয়ে দেখতে যান। তৃতীয়ত, আমাদের অ্যানালিটিক্স টিম প্রতিটি খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের পরিপ্রেক্ষিতে নম্বর দেয়।"
মেনন বলেছেন যে, তাঁদের অ্যানালিটিক্স টিমকে পুরো বছরের জন্য বেতন দিয়ে নিয়োগ করা হয়। শঙ্কর রাজগোপাল এই কাজে পঞ্জাব কিংসকে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, "হ্যাঁ, ছেলেরা ট্রায়ালে অংশ নেয়। কিন্তু বছরব্যাপী, আমাদের অ্যানালিটিক্স টিম ক্রমাগত আমাদের এমন তথ্য দেয়, যা আমরা অভ্যন্তরীণ ভাবে খতিয়ে দেখি। আমাদের অ্যানালিটিক্স লোক প্রতিদিন ডেটা প্রসেস করে এবং ম্যানেজার অবিনাশ বৈদ্যের মাধ্যমে কোচিং টিমকে তথ্য প্রদান করে এবং এটি অনিল কুম্বলে অ্যান্ড কোম্পানির কাছে যায়। এই বার দুর্ভাগ্যবশত আমরা কোভিড পরিস্থিতির কারণে মাত্র দুটি ট্রায়াল পরিচালনা করতে পেরেছি।"
আরও পড়ুন-নকল ডাক্তার সেজে ১৮ জনকে বিয়ে, অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার ৫৪ বছরের ব্যক্তি!
যদিও কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলোয়াড়দের দক্ষতার দিকটি দেখে। পাঞ্জাব কিংসের মানসিক দৃঢ়তা প্রদানকারী কোচ একটি সেশন করেন, যারা ট্রায়ালের জন্য আসেন, তাঁরা ওই সেশনে অংশ নেন। মেনন বলেছেন, "আমাদের মানসিক দৃঢ়তা প্রদানকারী কোচ আগে ভারতের অলিম্পিক্স দলে কাজ করেছেন। ট্রায়ালের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ছেলেরা মানসিক ভাবে কতটা শক্তিশালী, তা জানার জন্য একটি সেশন করা হয়।"
কয়েকটি দল আবার আম্পায়ার এবং রেফারিদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নেয়। আম্পায়ার ও রেফারিরা কোনও বিশেষ প্রতিভা সম্পর্কে জানিয়ে দলগুলিকে সাহায্য করে। বর্তমান জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় বিগত দিনে ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। জসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া, বরুণ চক্রবর্তী হল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আইপিএলে ট্যালেন্ট স্কাউটরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তার কয়েকটি উদাহরণ হল এই নামগুলি।
ডিফেন্ডিং আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস (Chennai Super Kings)-র সিইও কাশী বিশ্বনাথন (Kasi Viswanathan) বলেছেন, "আমাদের অনেক ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা বর্তমানে ম্যাচ রেফারি এবং তাঁর প্রতিভা খোঁজার জন্য উপলব্ধ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আমাদের তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আম্পায়ার। আমরা এটি করতে আমাদের প্রাক্তন খেলোয়াড়দের ব্যবহার করি। কোন কোন খেলোয়াড়কে দেখেছেন, আদৌ তাঁরা সিএসকে-র জন্য উপযুক্ত কিনা, এই বিষয়গুলি জানিয়ে তাঁরা পর্যায়ক্রমে রিপোর্ট দেন। কখনও কখনও আমরা ক্যাম্প করি। তার পর ট্যালেন্ট স্কাউটদের মতামত নিই এবং কোচিং স্টাফদের ভিডিওগুলি দেখাই, যাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন কে ভালো পছন্দ। প্রতিটি বিভাগের জন্য আমরা কমপক্ষে দুই বা তিন জন খেলোয়াড়কে বেছে নিই, যাতে আমরা তাঁদের মধ্যে এক জনকেও পেতে পারি।"
ঘরোয়া ম্যাচ:
ট্যালেন্ট স্কাউটরা শুধুমাত্র ট্রায়ালে খেলোয়াড়দের দেখেন না, বরং সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফি (Vijay Hazare Trophy), রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy) এবং জুনিয়র টুর্নামেন্ট সহ যতটা সম্ভব ঘরোয়া ম্যাচও দেখেন। স্থানীয় লিগগুলিও নজরে রাখা হয়। বিশ্বনাথন বলেছেন, "আমরা সারা দেশ থেকে খেলোয়াড়দের ডাকি। আমরা প্রচুর ঘরোয়া ক্রিকেটও দেখি। প্রচুর খেলোয়াড় তামিলনাড়ুর ঘরোয়া লিগে খেলেন, যেখানে তিন জন বিদেশি খেলোয়াড়কে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। আমাদের একটি ভালো দল আছে, যারা দলের সম্ভাবনার দিকে নজর দেয়।" ট্যালেন্ট স্কাউটরা শুধু ভারতীয় ঘরোয়া খেলোয়াড়দের দিকে তাকান না। অন্য দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই প্রতিভা খুঁজে আনেন। যেমন কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান ডেনিস লিলি (Dennis Lillee) ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া টুর্নামেন্টের উপরে নজর রেখেছিলেন। তার পর ডেভিড ওয়ার্নার (David Warner) এবং পরে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (Glenn Maxwell) মতো প্রতিভাকে খুঁজে আনেন।
নিলামের মহড়া:
আইপিএল ট্যালেন্ট স্কাউটরা শুধুমাত্র নাম প্রস্তাব করতে পারেন। তবে তাঁরা নিলাম মহড়াতে (Mock Auctions) অংশগ্রহণ করেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি আসল নিলামের আগে এটি পরিচালনা করে।
নেট বোলার থেকে দলে:
যে সমস্ত খেলোয়াড়রা নিলামে দল পান না, তাঁদের সব হারিয়ে যায় না। ট্যালেন্ট স্কাউটরা ট্রায়াল থেকে ভাল বোলারদের চিহ্নিত করেন এবং নেটে বোলিং করার জন্য তাঁদের ট্রাভেলিং স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তী কালে সেই নেট বোলার দলে জায়গা পেয়ে যান। সেই রকম দু'জন ক্রিকেটার হলেন ভারতের বলতেজ সিং ও শ্রীলঙ্কার মহেশ থেকশানার।