ডেল্টা প্রজাতি এবং ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ অবশ্যই অবিস্মরণীয়। যদিও সতর্কতা অবলম্বন এবং অবহেলা কোভিড মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনেও কারণ ছিল। ডেল্টা প্রজাতির (Delta variant) কারণে দ্বিতীয় ঢেউ আসে বিশ্বজুড়ে। B.1.617 প্রজাতিতে E484Q এবং L452R নামে দুই পৃথক মিউটেশন রয়েছে বলে মনে করা হয়। জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং নমুনা পরীক্ষার সাহায্যে ভারতে ডবল মিউটেশনের প্রথম কেস মহারাষ্ট্রে পাওয়া গিয়েছিল। এছাডা়ও পূর্ববর্তী ল্যাব টেস্টে জানা গিয়েছিল যে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে E484Q এবং L452R মিউটেশনের তীব্রতা বৃদ্ধির কথা।
advertisement
আরও পড়ুন : ই-পাসপোর্ট কী, কবে ভারতে চালু হতে পারে এই ব্যবস্থা?
ডেল্টা প্লাস প্রজাতি: ভারতে দ্বিতীয় কোভিড ঢেউয়ের পরে ডেল্টা প্লাস (Delta Plus) নামে আরেকটি মারাত্মক প্রজাতির উপস্থিতি সম্পর্কে ঘোষণা করেছিল সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিকদের মতে, ডেল্টা প্লাস প্রজাতি তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছে, যা এটিকে আগের প্রজাতিগুলির তুলনায় আরও বেশি উদ্বেগজনক করে তুলেছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলি হল-সংক্রমণ ছড়ানোর হার বেশি, ফুসফুসের কোষের রিসেপ্টরগুলির সঙ্গে শক্ত করে আবদ্ধ হয়ে থাকা ও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া এড়ানো।
ভারত ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, জাপান, পোল্যান্ড, নেপাল, চিন এবং রাশিয়ায় এই প্রজাতিতে সংক্রমণ সনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন : করোনাকে জব্দ করছে আমাদেরই শরীরের টি কোষ, দাবি নতুন গবেষণায়
কাপ্পা প্রজাতি: SARs-COV-2 ভাইরাসের কাপ্পা প্রজাতি (Kappa Variant) ভারতে প্রথম ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সনাক্ত করা হয়েছিল। এটি ভাইরাসের ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন হিসাবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিকভাবে একে B.1.167.1 বলা হয়। কোভিড প্রজাতিতে E484Q এবং E484K মিউটেশনের সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে মনে করা হয়। এটিতে L452R মিউটেশনও রয়েছে, যাতে করে এই প্রজাতিটি প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে পারে।
B.11.318 প্রজাতি: কাপ্পা প্রজাতির মতো B.11.318 প্রজাতিতেও E484K মিউটেশন রয়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত এই প্রজাতিতে দু'টি সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
আরও পড়ুন : ২০২২ এ নিজেকে ফিট রাখতে শরীরকে জোগান দিন এই পুষ্টিগুণগুলি, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
B.1.617.3 প্রজাতি: এটি B.1.617 প্রজাতির একটি বংশধর। B.1.617.3 হল ডেল্টা B.1.617.2-র একটি অংশ, যেটি ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী। এখনও পর্যন্ত, B.1.617.3 প্রজাতিটিকে উদ্বেগজনক প্রজাতি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়নি।
ওমিক্রন: দক্ষিণ আফ্রিকায় সনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রন (Omicron) বিশ্বজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই প্রজাতিকে উদ্বেগের প্রজাতি হিসাবে ঘোষণা করেছে। যদিও নতুন এই প্রজাতিতে এখনও পর্যন্ত 'হালকা' সংক্রমণ হচ্ছে। তবে এই প্রজাতি মারাত্মক সংক্রমণযোগ্য। যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বর্তমানে, ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশে ওমিক্রন থাবা বসিয়েছে। ভারত ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩০। তার মধ্যে ৯৯৫ জন সুস্থ হয়েছেন। সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষ তিনটি স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও দিল্লি।
নতুন প্রজাতি ইহু: ভাইরাস পরিবর্তিত হওয়ার কারণে সময়ে সময়ে নতুন রূপগুলি আবির্ভূত হবে। ঠিক যখন আমরা ওমিক্রনের বিষয়ে বুঝতে শুরু করেছি,তখন ফ্রান্সে একটি নতুন একটি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর নাম ইহু (IHU)। ফ্রান্সের মেডিটেরানি ইনফেকশন নামে এক সংস্থার গবেষকরা কোভিডের এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের নাম ইহু রেখেছেন। এটিতে ৪৬টি মিউটেশন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে, যা ওমিক্রনের মিউটেশনের চেয়েও বেশি। এখনও অবধি এই প্রজাতিতে কমপক্ষে ১২টি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এখনও পর্যন্ত ফ্রান্স ছাড়া আর অন্য কোনও জায়গায় করোনার এই নতুন প্রজাতিতে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, ইহু কতটা সংক্রামক, সে সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত গবেষকরা সঠিক কোনও তথ্য দেননি।
নতুন উদীয়মান প্রজাতিগুলির উপসর্গ কি মূল প্রজাতির থেকে আলাদা?
যতদূর জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের বেশিরভাগ প্রজাতিগুলির উপসর্গ একই। করোনার সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, ক্লান্তি এবং গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি না পাওয়া ইত্যাদি। সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত গুরুতর উপসর্গগুলি হল শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা। তবে নতুন ওমিক্রন প্রজাতিতে অস্বাভাবিক কয়েকটি উপসর্গ দেখা যাচ্ছ, যা আগের প্রজাতিগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। সেগুলি হল- গলা খুসখুস করা, শরীরে চরম ব্যথা, রাতের দিকে ঘাম, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং খিদে না পাওয়া। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, করোনার এরকম অনেক প্রজাতি আগামীদিনেও দেখা যেতে পারে। এর মানে এটা নয় যে এরা প্রত্যেকেই ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। কোন প্রজাতির মাধ্যমে কত এবং কী হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তার উপর ভয়াবহতা নির্ভর করছে।
মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি:
টিকা নেওয়া হোক বা না হোক, বর্তমানে সবাই সংক্রমণ প্রবণ। প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু এবং বয়স্ক, সবাই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ ভাইরাসটিই অত্যন্ত সংক্রামক। যারা বয়স্ক এবং আগে থেকেই কোনও রোগে আক্রান্ত বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তাই কোভিড বিধি ও অন্য সব সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। নতুন প্রজাতি ওমিক্রনও অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য এবং টিকা প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে পারে। এটা বিবেচনা করে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, মাস্ক (Mask) পরতে হবে। অন্য লোকেদের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (Centers for Disease Control and Prevention) মতে, "কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এমন এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। ভিড়ের মধ্যে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সম্পূর্ণ টিকা নেয়নি, এমন লোকজনের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সামাজিক সমাবেশে 'না' বলতে হবে। শীতকাল মানেই মিঠে রোদ গায়ে মেখে বেড়ানোর সময়, প্রিয়জনদের নিয়ে ছুটি কাটানোর সময়। তবে, এসব এখনই না করা ভালো। এটি নজর করা গুরুত্বপূর্ণ যে ওমিক্রন প্রজাতি লুকিয়ে আছে এবং দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সামাজিক জমায়েত এড়াতে ভুললে চলবে না, বাড়িতে পার্টিও না দিলেই ভালো হয়।