সুস্থ হওয়ার পরেও আক্রান্ত হতে পারেন রোগী:
সম্প্রতি একদল গবেষক তাঁদের মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সুস্থ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস পরেও ফের করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন রোগী। তার কারণ হিসাবে ওই জার্নালে বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিলার দেহে নিজে থেকেই ফের সক্রিয় হতে পারে কোভিডের অ্যান্টিবডি (Antibody)। কারণ আক্রান্ত রোগীর দেহে দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে করোনার উচ্চস্তর অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন। যে অ্যান্টিবডিগুলো আক্রান্তের শরীরে নিজে থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠে আক্রান্তকে ফের একবার কাবু করতে পারে। এমনকী, সক্রিয় অ্যান্টিবডিগুলো আক্রান্ত রোগীর দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এবং কোষের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। নিজের দেহেরই সক্রিয় অ্যান্টিবডির আক্রমণে বিকল হয়ে যেতে পারে রোগীর দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। সম্প্রতি জার্নাল অফ ট্রান্সলেশন মেডিসিনে (Journal of Translational Medicine) এই তথ্যই প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা প্রায় ১৭৭ জন আক্রান্ত নারী, পুরুষের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্যই পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এদের মধ্যে ছিল ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ শতাংশ মহিলা।
advertisement
আরও পড়ুন: ২১১ দিনের রেকর্ড ভাঙল! ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ১,৯৪,৭২০, মৃত্যু মিছিল চলছে...
পুরুষ এবং নারী ভেদে সংক্রমণে দেখা যাচ্ছে তফাত:
বিজ্ঞানীরা ওই গবেষণাপত্রে আরও জানিয়েছেন যে, করোনায় আক্রান্ত পুরুষেরা কোভিড ১৯-এ অসুস্থতার পরে লক্ষণীয়ভাবে বিভিন্ন অটোইমিউন অ্যাকটিভেশনের ঝুঁকি বহন করেন। সেখানে আক্রান্ত মহিলা রোগীরা অসম্পূর্ণ বা অ্যাসিম্পটমেটিক সার্স-কোভ-২-এর (SARS-Cov-2) পরে অটোইমিউন অ্যাকটিভেশনের আলাদা উপসর্গের ঝুঁকি বহন করেন।
কেন শরীরে সক্রিয় অ্যা্টিবডি ফের আক্রমণ করতে পারছে:
এ সম্পর্কে একদল ফরাসী গবেষক মহলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর শরীরে অ্যান্টিজেনগুলোনিজস্ব ভাবেই দীর্ঘ দিন সক্রিয় অবস্থায় থাকে। যেগুলি যে কোনও মুহূর্তে বা পরিস্থিতিতে মাথাচাড়া দিতে পারে। এই অ্যান্টিজেনগুলোর প্রতিক্রিয়াশীল স্ব-অণুগুলিকে বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি ও সক্রিয় অ্যান্টিবডি রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর শরীরের ওই প্রতিক্রিয়াশীল অ্যান্টিবডিগুলোর ফলাফলকে সিক্যুয়েল বা দীর্ঘমেয়াদী কোভিড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি ওই প্রতিক্রিয়াশীল অ্যান্টিবডির স্ব- অণুগুলিকে অ্যাকিউট সার্স-কোভ-২ সিন্ড্রোমগুলির প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। যা এই জন্যই হালকা বা উপসর্গবিহীন করোনা-রোগীর শরীরে ফের আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: মকর সংক্রান্তিতে হরিদ্বার-ঋষিকেশে কি গঙ্গাস্নান হবে? শেষ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল প্রশাসন...
রোগীর শরীরে কত দিন সক্রিয় থাকতে পারে করোনার অ্যান্টিবডি:
পাশাপাশি ওই গবেষকদল উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন যে কোভিডের এই নিত্য নতুন উপসর্গে তাঁরা যথেষ্ট চিন্তিত। কারণ করোনা নিয়ে চলতে থাকা বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ও গবেষণার পরেও পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওই গবেষকদল। এমনকী, ওই সক্রিয় অ্যান্টিজেনগুলো যে আক্রান্ত রোগীর শরীরে কত দিন বাসা বেঁধে থাকবে তা নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই বিষয়ে পর্যবেক্ষণে থাকা দলের সদস্য, লস অ্যাঞ্জেলেসের ইনস্টিটিউট গবেষক তথা সিডারস-সিনাই স্মিড্ট হার্টের সুসান চেং সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কে জানিয়েছেন, "আমরা এখনও জানি না, আক্রান্ত রোগীর শরীরে বাসা বেঁধে থাকা অ্যান্টিবডিগুলো আরও কতদিন সক্রিয় থাকবে, পাশাপাশি আমাদের আরও কত গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দিকে নিয়ে যাবে এবং নতুন উপসর্গ চিহ্নিত করতে আক্রান্তকে কত দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে"!
আরও পড়ুন: গঙ্গাসাগর মেলার জন্যে আজ থেকে বিশেষ বাস ও ট্রেনের পরিষেবা মিলবে
এ ছাড়াও স্মিড হার্ট ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের গবেষণা বিজ্ঞানী জাস্টিনা ফার্ট-বোবার বলেছেন যে, গবেষণায় উঠে আসা এই নতুন ফলাফলাগুলো করোনাকে এক বিশেষ অনন্য রোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে। তা ছাড়াও তিনি বলেছেন যে নিত্যনতুন এই লক্ষণগুলো করোনাকে এক দীর্ঘমেয়াদী কোভিড রোগে পরিণত করতে পারে। একই সঙ্গে, কয়েকজন গবেষক জানিয়েছেন, "যদি আমরা এই অটোঅ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়াগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি, বুঝতে পারি কী ভাবে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ এই পরিবর্তনশীল প্রতিক্রিয়াগুলিকে চালিত করে, তাহলে আমরা চিকিৎসার উপায়গুলি সনাক্ত করার পাশাপাশি এই প্রভাবগুলোকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোধ করে প্রতিরোধ করার কাছাকাছি যেতে পারি।"
দীর্ঘমেয়াদী কোভিডের স্বরূপ এবং প্রতিরোধের উপায়:
অন্য দিকে, দীর্ঘমেয়াদী বা সিক্যুয়েল কোভিড লক্ষণ সম্পর্কে খুব কমই জানা গিয়েছে। তবুও বিজ্ঞানীরা এও জানিয়েছেন যে সার্স-কোভ-২ বিভিন্ন উপায়ে শরীরে আক্রমণ করতে পারে, যার ফলে ফুসফুস, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। এমনকী, আক্রান্ত রোগীর পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD) পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। এই বিষয়ে গত জুলাই মাসে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centers for Disease Control and Prevention), সংক্ষেপে সিডিসি-র (CDC) তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, দীর্ঘ কোভিড, যা কোভিড-পরবর্তী অবস্থা হিসাবেও পরিচিত, এটি একটি শারীরিক অক্ষমতা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। তবে তা প্রতিরোধের কোনও উপায় এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অতএব, কোভিড-বিধি মেনে চলা এবং টিকাকরণই বর্তমানে আমাদের আশার আলো দেখাতে পারে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এমন এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। ভিড়ের মধ্যে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সম্পূর্ণ টিকা নেয়নি, এমন লোকজনের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সামাজিক সমাবেশে 'না' বলতে হবে।
