ছবিতে এই গানে স্টান্টম্যান ক্যাপ্টেন কৃষ্ণন নিজের জীবনসংগ্রামের কথা জানাবেন খুদে অনুরাগী অংশুমানকে৷ বলবেন, কী করে বাড়ির অমতে তিনি স্টান্টম্যানের মতো ছক ভাঙা পেশায় এলেন৷ কোনও পরিচয় ছাড়াই মুম্বই গিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করলেন৷
আরও পড়ুন : মায়ের জন্মদিনই মাতৃদিবস! ঋতাভরীর পোস্ট দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা
তা হলে গানটি কি আমাদের মনে করিয়ে দেবে কমল হাসানের উপর চিত্রায়িত কিশোর কুমারের কণ্ঠে সেই বিখ্যাত ‘শুনো শুনো গো সবে, শুনো দিয়া মন?’ ‘কবিতা’ ছবির সেই গান গুনগুন করতে করতেই উত্তর দিলেন রূপঙ্কর, ‘‘আমি বলব, মাস্টার অংশুমান ছবির গানে সুরের বৈচিত্র অনেক বেশি৷ রক, পপ, জ্যাজ থেকে লোকসঙ্গীতের ছোঁয়া-কী নেই! প্রতি স্তবকে এসেছে নতুন সুর৷’’
advertisement
এই সুর তৈরির পর্বে প্রথমে অবশ্য বিড়ম্বনাতেই পড়েছিলেন পরিচালক তথা ছবির প্রযোজক সাগ্নিক ৷ সুরসৃষ্টির দায়িত্ব তাঁর উপর ছিল না৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি ভার নেন৷ ‘ফেলুদা : ৫০ ইয়ার্স অব রে’জ ডিটেক্টিভ’ তথ্যচিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালকের কথায়, ‘‘আমি যে এটা করতে পারব, ভাবতে পারিনি৷ কিন্তু তাও মনে হল, একবার চেষ্টা করাই যাক না! একদিন সকাল এগারটায় বসে দুপুর সাড়ে তিনটের মধ্যে তৈরি করে ফেললাম সুর৷’’
আরও পড়ুন : এক মাস গান গাওয়া বন্ধ সাহানার! গলায় রক্তক্ষরণ গায়িকার
এই গানের মাধ্যমেই প্রথম বার গীতিকারের ভূমিকায় ধরা দিলেন সাংবাদিক অগ্নি রায় এবং সাগ্নিক নিজেও ৷ গানের কথার একটা অংশ লিখেছেন সাগ্নিক। অন্য অংশটি লিখেছেন অগ্নি৷ সংবাদ প্রতিবেদনের পাশাপাশি অগ্নি এর আগে কবিতা, গল্প, মুক্তগদ্য--লিখেছেন সবই৷ তবে গান লেখার পরিকল্পনা ছিল না৷ বললেন, ‘‘সত্যজিৎ রায়ের গুণমুগ্ধ হিসেবেই এই গানের জন্য কলম ধরেছিলাম৷ লেখার আগে আরও একবার পড়লাম মাস্টার অংশুমান৷ সত্যজিৎ রায়ের অন্যান্য সৃষ্টির মতো এই উপন্যাসও এত সিনেম্যাটিক, তাঁর সংলাপ এত প্রাণবন্ত, যে গান লিখতে কোনও অসুবিধেই হয়নি৷ কাজটা করে খুব ভাল লেগেছে৷’’ ভবিষ্যতে এরকম ইন্টারেস্টিং সুযোগ এলে তিনি আবারও গান লিখবেন৷
‘মাস্টার অংশুমান’ মুক্তি পাবে আগামী বছর৷ ছবির প্রয়োজনে মূল উপন্যাস থেকে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে৷ রাজস্থান নয়, ছবিতে কলকাতা থেকে অংশুমান শ্যুটিং করতে যাবে দার্জিলিংয়ে৷ শৈলশহরেই অংশুমান এবং ছবির স্টান্টম্যান ক্যাপ্টেন কৃষ্ণন ওরফে কৃষ্ণপদ স্যান্যালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে রহস্য সমাধানে৷
আরও পড়ুন : চাটনি ফ্রি দিয়েই কামাল ‘খুকুমণি’-র, টিআরপি পড়ল ‘মিঠাই’এর, বাংলা সিরিয়ালে প্রথম ১০-এ নেই ‘খড়কুটো’!
অংশুমানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্যমন্তকদ্যুতি মৈত্র ৷ ক্যাপ্টেন কৃষ্ণনের চরিত্রে দেখা যাবে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র প্রাক্তনী তরুণ তুর্কি সোম চট্টোপাধ্যায়কে৷ উপন্যাসের সবথেকে রোমাঞ্চকর অংশ, বাইকে করে শূন্যে পাড়ি দেওয়া হবে ছবিরও অন্যতম আকর্ষণ৷ এই ছবিতেই অনেক দিন পর বড় পর্দায় আসছেন ‘সাথী’-র প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদী৷ অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন রবি খেমু, সুপ্রিয় দত্ত এবং দেবেশ রায়চৌধুরী৷ কুমাল খেমুর বাবা রবির এটাই প্রথম বাংলা ছবিতে অভিনয়৷ খলনায়ক জগন্নাথ দে ওরফে জগু ওস্তাদকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলবেন রজতাভ দত্ত৷ ছবির সংলাপ লিখেছেন শ্রীপর্ণা মিত্র৷ সাগ্নিকের সঙ্গে তিনিও এই ছবির প্রযোজক৷
শ্যুটিং পর্ব হয়ে গিয়েছে অনেকটাই৷ থ্রি ডি গ্রাফিক্স প্রযুক্তিতে গানের দৃশ্য শ্যুটিং করা হবে ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর, এই তিন দিন ৷ ‘‘রূপঙ্কর এত ভাল গেয়েছেন, এ বার গানের দৃশ্যায়ন যথাযথ হতেই হবে৷’’ পরিচালকের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস৷ আর গায়ক নিজে বলছেন, ‘‘গানটি নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী৷ এটা অন্যতম সেরা গান হয়ে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস৷’’
রূপঙ্করের মতো অসংখ্য সত্যজিৎভক্ত অপেক্ষা করছেন মাস্টার অংশুমান এবং তার কেষ্টদা’র অভিযান বড় পর্দায় দেখার জন্য৷