গ্রামের রাস্তায় গাড়ি চলে না। সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করত। কাজে যাওয়ার আগে ও এসে পড়াশোনা করা। উচ্চমাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সে। তাঁর বোন সঙ্গীতা পাহানও একই স্কুল থেকে পড়াশোনা করছে। মায়ের সঙ্গে অন্যের জমিতে কাজ করে পড়াশোনা ও সংসারের খরচ চালাতে হয়। জমিতে কাজ করলে টাকা পায়, না হলে কিছু পায় না। ভবিষ্যতে শিক্ষকতার স্বপ্ন সুস্মিতার দু-চোখ জুড়ে। কিন্তু আর্থিক অনটনের মধ্যে সেই স্বপ্ন ছুঁতে পারবে কিনা সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা গ্রাস করছে সুস্মিতাকে। ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত সুস্মিতার মা।
advertisement
সুস্মিতার মা সিজলী পাহান বলেন, ‘প্রায় ১৪ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। মেয়েদের উঁচু ক্লাসে আরও পড়ার খরচ বাড়ছে। কিভাবে তাঁর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন জানা নেই। অন্যের জমিতে কাজের পাশাপাশি বাড়িতে হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালন করে কিছুটা অর্থ উপার্জন হয়। কিন্তু দুই মেয়েকে পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন।’
বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিকাপুর গ্রামের বাড়ি সুস্মিতা পাহানের। ছোট থেকেই কষ্টের সংসারে থেকে মানুষ সে। মাটির ঘরে থেকেই তাঁর পড়াশোনা। আবাস যোজনার ঘর পর্যন্ত মেলেনি এখনও। অভাবের সংসারে মাত্র চার বছর বয়সে বাবা শ্যামল পাহানকে হারিয়েছে। কিন্তু তাতেও দমে যায়নি সুস্মিতা। পড়াশোনার প্রতি গভীর আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে। মা অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন। বয়স একটু বাড়তেই সুস্মিতাও মায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে জমিতে কাজ শুরু করে। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও ক্লান্তি বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি তাঁকে। সুস্মিতার এই সাফল্য ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে ইতিমধ্যে।
সুস্মিতা গোস্বামী