মাধ্যমিক পরীক্ষার দেড় মাস আগে বাবা মারা গিয়েছিল। সেই শোক কাটিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসে ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে হলদিয়ার চাউলখোলা গ্রামের ১৬ বছরের পবিত্র দাস। পবিত্ররা পাঁচ ভাই বোন। পরিবারের ছোট ছেলে সে। বড় দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট দিদি কলকাতায় একটি নেটওয়ার্ক সংস্থার অস্থায়ী কর্মী। দাদা টিউশনি কড়ায়। দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন মা বাসন্তী দেবী।
advertisement
বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবার। বর্তমানে বাড়িতে গরু, ছাগল, মুরগী প্রতিপালন করে এবং ছেলে-মেয়ের সামান্য উপার্জনের টাকায় কোনও রকমে সংসার চলছে। কিন্তু পরিবারে অভাব অনটন থাকলেও ছোট ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেবেন না। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৫৬৬। পবিত্র বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। সুতাহাটার অনন্তপুর দেশপ্রাণ জাতীয় বিদ্যামন্দির স্কুলের পড়ুয়া পবিত্র। তাঁর এই সাফল্যে খুশি গ্রামের প্রতিবেশী-সহ স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা।
আরও পড়ুন: ঘরজুড়ে সত্যজিতের ছবি, আমার জন্য মাছের ঝোল আনা… বিদ্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বাঙালি: শীর্ষা
পবিত্র জানিয়েছে, তার বাবা চেয়েছিল সে যেন ভাল পড়াশোনা করে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে জীবনের পরবর্তী লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত। পবিত্রর স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছে প্রথম থেকেই ও খুব ভাল পড়াশোনায়। কিন্ত পরীক্ষার কিছুদিন আগে ওর বাবা মারা যাওয়ার জন্য পড়াশোনা কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল, না হলে আরও বেশি নম্বর পেতে পারত। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মণ্ডল, সহ-শিক্ষক জয়দেব পালরা জানান, তাঁরা পবিত্রর পাশে রয়েছেন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফী মুকুব-সহ সমস্ত রকম ভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত শিক্ষক শিক্ষিকারা।
পবিত্রের মা বাসন্তী দাস বলেন, “বিজ্ঞান বিভাগের সমস্ত বিষয়ে পৃথক শিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তবুও চেষ্টা করব ছেলের যেন পড়াশোনায় কোনওরকম সমস্যা না হয়।” পড়াশোনার ফাঁকে কম্পিউটারে তালিম নেওয়ার পাশাপাশি মাকে সাহায্য করতে বাড়িতে পশুপাখি প্রতিপালন করে পবিত্র। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যা হলেই নিয়ম করে প্লাস্টারহীন ছোট ঘরে বসে পড়াশোনায় মন দেয় সে। জীবনের লক্ষ্য আরও বড়। তাই সামনের সংগ্রামের লড়াইয়ের মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে পবিত্র। বাবার স্বপ্ন পূরণের প্রাথমিক ধাপ পেরিয়েছে। আগামী দিনে সব বাধাবিপত্তি এড়িয়ে পড়াশোনায় সফল হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে পবিত্র।
সৈকত শী





