ছোটবেলায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একটি পা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়, যত সময় গড়িয়েছে দু’টো পায়েরই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে প্রত্যন্ত এই গ্রামে মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। তারপর থেকেই শরীরের সীমাবদ্ধতাকে মনের শক্তি দিয়ে জয় করার শপথ নিয়েছে সে। এভাবেই দিয়েছে উচ্চমাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্য এই কন্যাশ্রীর।
আরও পড়ুন: একটুর জন্য বাঁচলেন! শরীর জুড়ে একাধিক আঘাত… হাসপাতালের বেডে বসেই ‘জো ভেজি থি দুয়া’ গানইলেন পবনদীপ
advertisement
চলতি বছরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনও রকম কোন টিউশন ছাড়াই বসেছিল পিংলার বরাবেড়্যিয়া হাই স্কুলের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ভৌমিক। গেট থেকে পরীক্ষার সিট পর্যন্ত পৌঁছতে বাবার কাঁধই ছিল ভরসা। কোলে করে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দিতেন বাবা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও প্রাইভেট কোনও টিউশন না নিয়েও আত্মবিশ্বাসকে হাতিয়ার করে কলম ধরেছিল সে। বাড়িতে পড়াশোনা করে সামর্থ্য অনুযায়ী লিখেছিল প্রশ্ন উত্তর। তবে রেজাল্ট প্রকাশের পর তার এই ফলাফল চমকে দিয়েছে সকলকে।
দুটি পায়ে কোনওরকম ক্ষমতা নেই, কিন্তু দুটি হাতেই আছে তার লড়াইয়ের জোর। সেই হাত দিয়েই লিখে এসেছে উচ্চমাধ্যমিকে। প্রাপ্ত নম্বর ৩৩৩। কোনও টিউশনি ছাড়াই এই সাফল্য এসেছে শুধুই তার অধ্যবসায় ও মনের জোরে। ছিটে বেড়ার ঘর, বাবা দর্জির কাজ করেন। অভাব, অনটন, দারিদ্র সব কিছু সত্ত্বেও প্রিয়াঙ্কার মন কখনও ভাঙেনি। মা, ঠাকুমা, বাবা ও দাদুকে নিয়ে তার ছোট সংসারে জায়গা নেই কোনও বিলাসিতার। তবু গর্বে ভরছে সেই বাড়ি—কারণ প্রিয়াঙ্কা লড়ে জিতেছে।
তবে এই জয়ের পরেও অনিশ্চয়তার মেঘ রয়ে গেছে। এই সাফল্য তাকে কতদূর নিয়ে যাবে? উচ্চশিক্ষার পথ কি আরও লড়াইয়ে ভরা? প্রিয়াঙ্কার জীবন কেবল একজন শারীরিক বিশেষ সক্ষম ছাত্রীর সাফল্যের গল্প নয়—এ এক অনুপ্রেরণার বার্তা, যে মনোবল থাকলে কোনও প্রতিবন্ধকতাই বড় হয়ে দাঁড়ায় না। তবে আগামীর ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
রঞ্জন চন্দ