লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রীষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পুজোর প্রথম সূচনা করেন। কথিত আছে, এই দিনে শিব-উপাসক বাণরাজা কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মহাদেবের আরাধনা করে অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষায় ভক্তিসূচক নৃত্যগীতাদি ও নিজ গাত্ররক্ত দ্বারা শিবকে তুষ্ট করেন। সেই স্মৃতিতেই শৈব সম্প্রদায় এই দিনে শিব প্রীতির জন্য এই উৎসব পালন করে থাকেন।
advertisement
আরও পড়ুন - Government Job: চাকরির নামে টাকা নয়ছয়, ভুয়ো চাকরি বিক্রি করেছিলেন ১১ লক্ষ টাকায়, তারপর...
গম্ভীরা পুজো বা শিবের গাজন এই চড়ক পুজোরই রকমফের। চড়ক পুজো চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। এ পুজোর বিশেষ অঙ্গের নাম নীল পুজো। পুজোর আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুর মথিত লম্বা কাঠের তক্তা ('শিবের পাটা') রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে "বুড়োশিব" নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন - South Bengal Weather Alert|| ৪০ পেরিয়েও ধাঁইধাঁই করে চড়বে পারদ, বইবে হু হু করে লু, থাকুন সাবধান
পতিত ব্রাহ্মণ এই পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পুজোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত আগুনের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণ ফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নি নৃত্য, চড়ক গাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পুজো করা। পুজোর উদ্যোক্তা ভক্ত বা সন্ন্যাসীরা চড়ক পুজোর কয়েকদিন আগে থেকে কঠোর ব্রত ও সংযম পালন করেন। চড়ক পুজোর আগের দিন নীল চণ্ডিকার পুজো হয়। যা মূলত নীল পুজো নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন - Mother and Son: ছেলে না কুলাঙ্গার, বাড়িতে ভাত না পেয়ে নিজের মায়ের সঙ্গেই এই কুকীর্তি করে ফেলল
এই সব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্ম বাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির মতন প্রায় এক রকম। এই পুজোর উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনো এই পুজো ও প্রথা প্রচলিত রয়ে গিয়েছে।
Sarthak Pandit