সেই নিয়েই ,,, কবি চিঠি তে লিখলেন….. \”আজ মনে হল নব জন্ম লাভ করেছি। এখানে যারা আমার কাছে এসেছে আমাকে কাছে পেয়েছে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার কোন সম্বন্ধ নেই – – এই আমার শান্তিনিকেতন আশ্রমের জীবন – এই আমার মঙ্গললোকে নূতন জন্ম লাভ….\”
১৯১১ সালে কবির পঞ্চাশ বৎসর পূর্তি উৎসব শান্তিনিকেতন আশ্রমে বেশ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হল। ২৪ বৈশাখ সন্ধ্যায় ‘রাজা’ নাটক অভিনয় হয়। কবি নিজে ঠাকুরদার ভূমিকায় অভিনয় করলেন। ২৫ বৈশাখ আম্রকুঞ্জে জন্মোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
advertisement
১৯২১ সাল কবি তখন জার্মানীতে। ৬০ বছর পূর্ন হল। জন্মদিনে জার্মানীর মনীষীগন কবি কে সম্বর্ধনা জানিয়ে অভিনন্দন পত্র দিলেন। কবি অনুভব করলেন এ যেন জার্মানীর চিত্ত জগতে দ্বিতীয় জন্ম লাভ। এক চিঠিতে কবি প্রিয় এনডুরুজ কে লিখছেন – – – \”I truly feel that I have had my second birth in the heart of the people of that country, who have accepted me as their own\”
১৯৩১ সালের ২৫ বৈশাখ কবি ৭১ পড়লেন। শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে কবির জন্মোৎসব হল। সেদিন ভাষনে কবি বললেন – \”একটি মাত্র পরিচয় আমার আছে, সে আর কিছু নয়, আমি কবি মাত্র। আমি তত্বজ্ঞানী, শাস্ত্রজ্ঞানী, বা নেতা নই… আমি বিচিত্রের দূত।\”
১৯৩৫ সালে কবি ৭৫ বছরে পা দিলেন। আম্রকুঞ্জে অনুষ্ঠান শেষে উত্তরায়ন প্রাঙ্গণে সম্পূর্ন মাটির বাড়ি “শ্যামলী-এর” গৃহপ্রবেশ হল। ঐ শ্যামলী বাড়ি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ \”শেষ সপ্তক\” গ্রন্থে লিখেছেন – –
\”আমার শেষ বেলাকার ঘরখানি – – – –
বানিয়ে রেখে যাব মাটিতে
তার নাম দেব শ্যামলী।…\”
১৯৩০ সাল কবি রয়েছেন প্যারিসে। কবির জন্মোৎসব পালন করলেন তাঁর ফরাসি বন্ধু ও ভারতীয় ছাত্ররা। এই সময় কবি শুধু কথা গেঁথে কবিতা লেখেন না। সৃষ্টির নতুন ছন্দ এসে পড়েছে। কবি হয়েছেন চিত্রকর।
প্যারিসেই প্রথম তাঁর ১২৫ খানি ছবির \”Gallery Pigalle\” তে প্রদর্শনী হল। কবির দুই বিদেশিনী ভক্ত ভিক্টোরিয়া ওকামপো ও কঁতেস দ্য নোআলিস মূল উদ্যোক্তা ছিলেন।
কবি ঐ চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে ইন্দিরা দেবী কে চিঠিতে লিখছেন – – \”ধরাতলে যে রবি ঠাকুর বিগত শতাব্দীর ২৫ বৈশাখ অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁর কবিত্ব সম্প্রতি আচ্ছন্ন – তিনি এখন চিত্রকর রূপে প্রকাশমান – তাঁর সম্পূর্ন বিবরণ যখন পাবি তখন চমক লাগবে, কিন্ত নিজমুখে এ সত্যকথা বলতে গেলে অহংকার করা হয়।…..\”
১৯৪১ সাল কবির জন্মোৎসব পালন করল বিশ্বভারতী ছাত্র অধ্যাপক আশ্রমবাসী সকলে। রবীন্দ্রনাথ তখন রোগ শয্যায়। সেদিন সন্ধ্যায় উদয়ন বাড়ির সামনে কবি কে আরাম কেদারায় বসিয়ে অনুষ্ঠান করা হল। আচার্য ক্ষিতি মোহন সেন কবির লেখা “সভ্যতার সঙ্কট” পাঠ করে শোনালেন। সভা শেষ হল মহামানবের আবাহন গানে, যিনি সঙ্কট মোচন করবেন আগামী দিনে, নবজীবনের আশ্বাস দেবেন বিশ্ব মানব কে।
“ঐ মহামানব আসে..
উদয শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ
নব জীবনের আশ্বাস…”
২৫ বৈশাখ কবি পারত পক্ষে আশ্রমের বাইরে থাকতে চাইতেন না। রবীন্দ্রনাথ বলতেন ‘অন্য কোথাও থাকিলে আমার মনে হয় আমি বৃদ্ধ। এই খানে এই সব শিশুদের মধ্যে থাকিয়া আমি যেন আমার হারানো শৈশব কে ফিরিয়া পাই।’
Subhadip Pal






