বোলপুর-লাভপুর রাজ্য সড়ক বরাবর কুয়ে নদীর পাড় হয়ে লাভপুর থেকে লাঘাটার দিকে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় ময়ূরাক্ষী নদীর কাছে। সেতু পার হলেই সামনে বিস্তীর্ণ জঙ্গল। তারই মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে জারাজীর্ণ একটি মিনার। জঙ্গলে আরেকটু ঢুকলে চোখে পড়বে ইটের স্তূপ। এই ইট প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো গুনুটিয়ার নীলকুঠির। যা আজও সেই করুণ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: শহরের মত গ্রামেও শুরু হল বর্জ্য সংগ্রহের কাজ
বীরভূমের গুনুটিয়ার নীলকুঠির পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নানান ইতিহাস। একদা বাংলার জলপথ বাণিজ্যের অন্যতম যোগসূত্র ছিল এই নীলকুঠি। ময়ূরাক্ষী এবং অজয় নদ ব্যবহার করে দূরদূরান্তে রফতানি করা হতো নীল। ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ বণিক এডওয়ার্ড হে গুনুটিয়ার নীলকুঠি নির্মাণ করেছিলেন।
জলপথে যাতায়াতের সুবিধা, উপযুক্ত আবহাওয়া, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, উর্বর জমির জন্য বীরভূম জেলায় লাক্ষা, তুঁতে, রেশম, নীল চাষ ভাল হত। রেশম চাষের জন্য এডওয়ার্ড বীরভূমের লাভপুরে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে গুনুটিয়া কুঠি তৈরি করে। প্রথম দিকে এখান থেকে রেশম, তুঁতে প্রভৃতির চাষ হত। পরবর্তীকালে নীল চাষ শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই গুনুটিয়া কুঠি নীলকুঠি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
১৭৮৫ সালে ফরাসি বণিক জেমস ফ্রুশার্ড ২০ হাজার টাকায় গুনুটিয়া কুঠি কিনে নেন। সে সময় কুঠির পরিধিও বৃদ্ধি পায়। এর পর ভারতে ব্রিটিশ সরকার আধিপত্য বাড়তে শুরু করে। ১৮০৮ সালে এই কুঠি ফের হাতবদল হয়ে যায় ব্রিটিশদের কাছে। এমন একটি ঐতিহাসিক স্থানের আজ ভগ্নদশা। তবে এই ইতিহাসের আকর্ষণ তো কম নয়। তাই স্থানীয়দের দাবি, জায়গাটি সংস্কার করে তা ইতিহাস প্রেমী মানুষের কাছে পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে তোলা হোক। এতে এলাকার আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
শুভদীপ পাল