কথিত আছে, মগধরাজ জরাসন্ধ এই গুহ্য কালী বিগ্রহ গোপনে মন্দির স্থাপন করে পাতালে পুজো করতেন। তারপর বহু বছর কেটে যায়। এরপর মহারাজ জরাসন্ধের মৃত্যু হয়। কালের নিয়মে সেই মন্দির কোথায় হারিয়ে যায় কিন্তু থেকে যায় বিগ্রহটি। আনুমানিক ২৩৫ বছর আগে রানী অহল্যা বাঈ স্বপ্নে একটি শিবলিঙ্গের সন্ধান পান। স্বপ্নে পাওয়া এই শিবলিঙ্গ অন্বেষণ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্নস্থানে খনন কার্য শুরু করা হয়। তখনই তিনি মায়ের এই গুহ্যকালী মূর্তি পান। রানী অহল্যা বাঈ মায়ের এই মূর্তি কাশীরাজ চৈত সিংকে দান করেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ঠাকুর বানাচ্ছিলেন শিল্পী, চলন্ত গাড়ি মারল পিষে! মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ভয়ঙ্কর ছবি প্রকাশ্যে
চৈত সিং মায়ের এই মূর্তির পূজার্চনা শুরু করেন। তবে এই সময় ওয়ারেন হেস্টিংসের জানতে পারেন মায়ের এই অপরূপ মূর্তি। ওয়ারেন হেস্টিংস মায়ের কারুকার্যমন্ডিত অপরূপ মূর্তি দেখে লোভে পড়েন এবং তিনি মায়ের এই মূর্তিটিকে ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। তার এই গোপন পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে যান চৈত সিং। তিনি তখন মায়ের মূর্তিটিকে গঙ্গাবক্ষে লুকিয়ে রাখেন। আর তিনি রটিয়ে দেন যে মূর্তি চুরি গিয়েছে।
অপরদিকে, মহারাজ নন্দকুমার মাকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাশি যাত্রা করেন আর তিনি চৈত সিংকে সব জানান। চৈত সিং সব শুনে তো হাতের কাছে চাঁদ পেলেন। তিনি সানন্দে নৌকা করে নন্দকুমারের সঙ্গে মূর্তি পাঠিয়ে দেন।
আরও পড়ুনঃ বীরভূমের এই গ্রামে পা দিতে কাঁপেন চোর-ডাকাতরা, ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন
নন্দকুমার সেই মূর্তি নিয়ে তারকা ব্রাহ্মণী নদী পার করে চলে এলেন আকালিপুরে। এখানে এসে ব্রাহ্মণী নদী তীরে শ্মশানের পাশে নিরিবিলি স্থানে আছে মায়ের আটকোনা ইটের মন্দির। সর্বসাধারণের কাছে এই মন্দিরের নির্মাণ বড় সাদামাটা মনে হলেও তন্ত্র সম্মতভাবে সাধনার উপযোগী স্থানে এই মন্দির নির্মিত হয়েছে।
মহারাজা নন্দকুমারের অসংখ্য প্রজাদরদী মনোভাবের জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস একসময় তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন ও তার বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন নন্দকুমারকে ও বিচারে তার ফাঁসি হয়। সেই সময় থেকে শুরু করে আজও নন্দকুমারের বংশধররা মায়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
আকালিপুরের এই গুহ্য কালীর টানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বছরের বিভিন্ন সময় পুণ্যার্থীদের আসতে দেখা যায়। সম্প্রতি এই মন্দিরে প্রশাসনের তরফ থেকে পাঁচটি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এমন মূর্তি যেমন রাজ্যে কোথাও দেখা যায় না, ঠিক তেমনই এখানকার মত মন্দিরও সচরাচর কোথাও দেখা যায় না।
Madhab Das





