দশের নয়, দেশের গর্ব! ১৪ বছরের চাকরি জীবনের সঞ্চয় দিয়ে সমাজসেবা, নিজের সর্বস্ব দু'হাত ভরে বিলিয়ে দিচ্ছেন 'মানবিক শিক্ষক'
- Published by:Aishwarya Purkait
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
Teacher's Day Special: পটাশপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রতন কুমার সাউ। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই তাঁর সন্তান, আর গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাঁর বাবা-মা। দরিদ্র মানুষের জন্য সবসময় খোলা থাকে তাঁর হাত।
পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, মদন মাইতি: পটাশপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রতন কুমার সাউ। তিনি শুধুই শিক্ষক নন, এলাকায় পরিচিত ‘সন্তানদের অভিভাবক, দরিদ্রদের সন্তান’ নামে । তিনি মনে করেন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই তাঁর সন্তান, আর গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাঁর বাবা-মা। দরিদ্র মানুষের জন্য সবসময় খোলা থাকে তাঁর হাত। সারাবছর পড়াশোনার পাশাপাশি অসহায় ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাগ, বই, ফল ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা, অসহায় দরিদ্রদের জন্য সারাবাছর নানান কর্মসূচি, সব মিলিয়ে এলাকার মানুষের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
advertisement
রতনবাবুর জীবন শুরু দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়েই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের আলমচক বেলদা গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম। বাবা কোনরকমে চাষাবাদ করে ছেলেকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন। বেলদা গঙ্গাধর একাডেমি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, এরপর ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হন বেলদা কলেজ থেকে। ২০০৮ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন এবং ২০১০ সালে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। সংগ্রামী এই পথই তাঁকে সমাজসেবার শক্ত ভিত গড়ে দেয়। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
২০১০ সালে রতন কুমার সাউ কর্মজীবন শুরু করেন ঝাড়গ্রামের কয়মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। কিছুদিন পর তিনি বদলি হয়ে আসেন পটাশপুরের বামন বসান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখান থেকেই তাঁর সমাজসেবার প্রকৃত যাত্রা শুরু। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থেকে তিনি কখনও পড়াশোনার তাগিদে শিশুদের কোলে তুলে নিচ্ছেন, আবার কখনও ছাত্রদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে মিড-ডে মিল খাচ্ছেন। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ককেই তিনি পরিবারের সম্পর্ক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
রতনবাবুর সমাজসেবার কাজ বিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নয়। এলাকার দরিদ্র মানুষদের জন্য সারাবছর চাল, ডাল, জামাকাপড় বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। ১৪ বছরের চাকরি জীবনের সঞ্চয়ও খরচ করেছেন সমাজসেবার কাজে। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি আজ মানবিক শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। তাঁর এই প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষ কুর্নিশ জানিয়েছে বারবার। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
শিক্ষাজীবন শেষ হতেই বাবার মৃত্যু হয়। সংসারের দায়িত্ব নিতে মাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। কখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে, কখনও দিন আনা দিন খেয়ে ছেলেকে মানুষ করেছেন তিনি। সেই সংগ্রামী মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই রতনবাবু মায়ের নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তোলেন। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি দরিদ্রদের পাশে থাকার প্রয়াসকে আরও বড় আকারে গড়ে তুলেছেন। মায়ের আদর্শই তাঁর সমাজসেবার মূল প্রেরণা। (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)
advertisement
কেন এই কর্মকাণ্ড? রতনবাবু বলেন, “শিক্ষকতা আমার পেশা হলেও সমাজসেবা আমার জীবনের লক্ষ্য। ছাত্র-ছাত্রীদের আমি নিজের সন্তান মনে করি, তাই তাদের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চাই। আর আমার মা–বাবা শিখিয়েছেন অভাব সত্ত্বেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। তাই যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন আমি দরিদ্র মানুষের সেবা করে যাব।” (তথ্য ও ছবি: মদন মাইতি)