শীতেই বেরোয় ফোঁসফোঁস করে, বিশাল বড় সাপের প্যাঁচে দুমড়ে মুচড়ে যাবে যে কোনও প্রাণী! বাঁচতে না জানলে এক মিনিটে খেল খতম

এই শীতের মরশুমে যখন সবাই গরম কাপড়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিচ্ছে, তখন প্রকৃতির আর এক নিঃশব্দ বাসিন্দাও নিজের ছন্দ বদলাচ্ছে—অজগর সাপ। বর্ষা বিদায়ের পর যখন হালকা ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে, তখনই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন এক নতুন বিপদের কথা—শীতের রোদে বেরিয়ে পড়ছে অজগর, আর তাদের উপস্থিতি দ্রুত বাড়ছে।

মানুষ যেমন ঋতুর সঙ্গে জীবনযাপন বদলায়, তেমনি সাপেরাও বদলায় নিজেদের অভ্যাস। শীতে বিষধর সাপ যেমন কম দেখা যায়, অজগরেরা তখন আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। বনদফতরের পরামর্শ, অযথা ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকা এবং সাপ দেখলেই বনদফতরকে জানানোই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অজগর আসলে ঠান্ডা রক্তের প্রাণী (cold-blooded reptile)—অর্থাৎ তারা নিজের দেহের তাপমাত্রা পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারে না। তাই শীত পড়তেই তারা উষ্ণ জায়গার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।

দিনের বেলায় রোদে গা এলিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের—রাস্তার ধারে, ফসলের মাঠের প্রান্তে, কিংবা কখনও বাড়ির ছাদ বা উঠোনেও। কয়েক ঘণ্টা ধরে তারা রোদ পোহায় শরীর গরম করার জন্য, তারপর ধীরে ধীরে গর্ত বা বনে ফিরে যায়।

মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়া, বুরহানপুর, খারগোন, হারদা এবং দেওয়াস জেলা, যেগুলো ‘সার্পেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নামে পরিচিত, সেসব এলাকায় অজগরের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই জেলাগুলির পাহাড়ি এলাকা, বনভূমি ও জলাশয়ের আশেপাশে তারা বাস করে। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা গর্ত বা জলাশয় থেকে বেরিয়ে রোদ পোহানোর জন্য খোলা জায়গার দিকে চলে আসে। গ্রামীণ এলাকায় অনেক সময় মাঠে কাজ করা মানুষ বা রাস্তায় বসে রোদ পোহানো গ্রামবাসীরা হঠাৎ এই বিশালাকার সাপ দেখে আতঙ্কে পড়ে যান।

অজগর সাধারণত বিষধর নয়, কিন্তু তাদের দেহের আকার ও শক্তি এতটাই প্রবল যে ছোট প্রাণী বা পোষা পশুকে সহজেই কাবু করে ফেলতে পারে। মুরগি, ছাগল, এমনকি ছোট কুকুরও তাদের শিকারে পরিণত হয় অনেক সময়। আসল বিপদ তৈরি হয় যখন অজগর ভুলবশত কোনও বাড়ি, স্কুল বা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়ে। আতঙ্কে মানুষ তখন প্রায়ই পাথর ছুঁড়ে তাড়ানোর চেষ্টা করে, যার ফলে সাপ আহত হয়, আর আত্মরক্ষায় আক্রমণ করতে পারে। এতে উভয় পক্ষই বিপদের মুখে পড়ে।

বনদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি কখনও অজগর বা অন্য কোনও সাপ চোখে পড়ে, তাকে মারার বা তাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বন দফতর বা সাপ উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এই প্রশিক্ষিত দল নিরাপদ উপায়ে সাপটিকে ধরতে পারে এবং তাকে তার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।

যাঁরা গ্রামীণ বা কৃষিজমির এলাকায় থাকেন, তাঁদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাড়ির আশেপাশে বড় বড় ঝোপঝাড় না রাখতে, রাতে গবাদি পশু খোলা জায়গায় না বেঁধে রাখতে, এবং পুরনো পাইপ বা টায়ারের মধ্যে যেন কোনও সাপ আশ্রয় না নেয়, সে জন্য নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অজগর দেখতে যতটা ভয়ানক, প্রকৃতিতে তাদের ভূমিকা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তারা মাঠের ইঁদুর, খরগোশ ও ছোট প্রাণী শিকার করে ফসলের ক্ষতি কমায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই অজগর দেখলে ভয় না পেয়ে, নিরাপদে তাকে বনে ফেরানোই প্রকৃত সমাধান।

অতএব, এই শীতে ঘর থেকে বেরোনোর আগে একবার চারপাশে চোখ রাখুন — হয়তো কোথাও রোদে পিঠ পেতে বসে আছে সেই নীরব শিকারি, যে প্রকৃতির অংশ, কিন্তু ভয়ের নয়, বোঝাপড়ার দাবি রাখে।