মন খারাপের অসুখ বাড়ছে পৃথিবীর মানুষের। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসহিষ্ণুতা। আর এই অসুখের কোনও বয়স নেই। অনেকেই ভাবেন, পৃথিবীটাই এমন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গবেষণা কিন্তু বলছে অন্য কথা। এ দোষ, সোশ্যাল মিডিয়ার। ইউনিভার্সিটি অফ বাথের (University of Bath) এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে চান, তা হলে অন্তত একটি সপ্তাহ সোশ্যাল মিডিয়াকে জীবন থেকে দূরে রাখতে হবে। Representative Image
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: বর্তমান বিশ্বে মানুষ শারীরিক সমস্যার মতোই মানসিক সমস্যা এক বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ হতাশা (Depression), উদ্বেগ (Anxiety) এবং খিটখিটে মেজাজের (Mood Swing) সমস্যায় জর্জরিত। সমীক্ষা বলছে, গত কয়েক বছরে এই সব সমস্যা বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। গবেষকদের দাবি, মানুষের জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির ফলেই মানসিক স্বাস্থ্য (Social Media Triggers Anxiety) একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। Representative Image
সম্প্রতি ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ বাথ এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা করেছে। গবেষণার প্রধান চিকিৎসক জেফ ল্যামবার্ট (Jeff Lambert) বলেছেন, মানুষের জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্য অনেক বেড়েছে এবং এটি আমাদের হতাশা ও উদ্বেগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ অবস্থায় যদি এক সপ্তাহের জন্যও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা যায়, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যের বড় উপকার হতে পারে। সুস্থ থাকতে প্রয়োজন ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ (Digital Detox): শরীরের মতো মনের স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজন ডিটক্স। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, বর্তমান সময়ে সমাজের সমস্ত স্তরের এবং সমস্ত বয়সের মানুষ গোটা সপ্তাহে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেখা গিয়েছে, মানুষ ঘণ্টা পর ঘণ্টা স্মার্টফোন শুধু স্ক্রল করেই যাচ্ছেন। এর মধ্যে তাঁরা একটা সুখানুভূতি খুঁজে পান। কিন্তু আদতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনের উপর। নিজের অজান্তেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। Representative Image
এই গবেষণায় মোট ১৫৪ জন মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। এঁদের বয়স ১৮ থেকে ৭২ বছর। এঁদের মধ্যে দল তৈরি করে একটি দলকে এক সপ্তাহের জন্য ইনস্টাগ্রাম (Instagram), ফেসবুক (Facebook), ট্যুইটার (Twitter) এবং টিকটকের (TikTok) মতো সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। অন্য দলের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। গবেষকদের দাবি, এক সপ্তাহ পরে যখন এই দুই দলের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়, তখন তাঁরা পার্থক্যটা অনুভব করতে পারেন। প্রথম দলের সদস্যরা অনেক বেশি আশাবাদী এবং সুস্থ বলে মনে করেছেন গবেষকরা। Representative Image
বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ কমেছে- রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথম দলের সদস্যদের তাঁদের আশা এবং ছোট ছোট সুখ দুঃখের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখানে তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই ইতিবাচক জবাব দেন। জেনেরাল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার স্কেল (General Anxiety Disorder Scale)-এ তাঁদের ব্যাধির হার পাওয়া গিয়েছে ৪৬ থেকে ৫৫.৯৩। তাঁদের বিষণ্ণতা ৭.৪৬ থেকে কমে হয়ে গিয়েছে ৪.৮৪ উদ্বেগ ৬.৯২ থেকে কমে হয়েছে ৫.৯৪। গবেষকরা দাবি করেছেন, এটা স্পষ্ট যে, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সামাজিক মাধ্যম খারাপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু বর্তমান সমাজ এবং পরিস্থিতিতে সমাজ মাধ্যম থেকে দূরে থাকাও সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, অন্তত একটি সপ্তাহ সমাজ মাধ্যম থেকে বিরতি নিলে ভাল ফল মিলতে পারে। Representative Image